খিদে মুখে অমৃত চাউমিন। পেটের সঙ্গে মনের তৃপ্তি মেলে খেলেই। তবে মুখে তোলার আগে এই অতি লোভনীয় চলতি চাউমিনের ক্ষতিকর দিকগুলি জানা জরুরি। কেন খারাপ? বিশ্লেষণ করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত বিশ্বাস। শুনলেন জিনিয়া সরকার
হাউ হাউ চাউ
সন্ধের জলযোগে মুড়ি, চিড়ে কিংবা খইয়ের বদলে এখন জায়গা করে নিয়েছে চাইমিন। ঘরে-বাইরে সহজলভ্য ও সস্তায় পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় এক নম্বরে চাউমিন কিংবা নুডলস। যা খেতেও টেস্টি আর ঝাল-মশলার মেজাজে হালকা। কাজেই চটপট, হাউহাউ করে চাউ সব বয়সের মনপসন্দ খানা। তাই এই স্বাদের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ক্ষতির হদিশ জেনেও উপেক্ষিত হয়। সুস্থ থাকতে সতর্কতা জরুরি।
ইনস্ট্যান্ট নুডলসে বেশি ক্ষতি
চাউমিন তৈরির ক্ষেত্রে ময়দা দিয়ে তা বানানো হয়। নুডলস তৈরির ক্ষেত্রেও মূল উপাদান ময়দা হলেও তার সঙ্গে অ্যাডেটিভ বা কেমিক্যাল মেশানো হয়। যার মধ্যে অন্যতম হল হিউম্যাকটেন্ট (কেমিক্যাল)। ফলস্বরূপ ৫ মিনিটে নুডলস সেদ্ধ হয়ে যায়। আর কখনওই তা খুব সিদ্ধ হয়ে গলেও যায় না। সেদিক থেকে চাউমিন কিছুটা হলেও নিরাপদ।
শরীরে প্রভাব
চাউমিন হোক বা নুডলস, এগুলি বেশি খেলে হজমে তার প্রভাব পড়েই। কারণ, এর মূল উপাদান ময়দার বা রিফাইন কার্বোহাইড্রেট। তাই এতে ফাইবারের মাত্রা খুব কম থাকে। ফলে হজমশক্তিতে এর প্রভাব পড়ে। যা কোলনের জন্য মোটেই ভাল নয়।
ময়দার তৈরি নুডলসে গ্লুটেন থাকে অনেক বেশি পরিমাণে। এতে ফ্যাটের মাত্রাও অনেক বেশি। কাজেই তা হার্টের ক্ষতি করে ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এতে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বেশি থাকায় তা ওজন বাড়ায়। এই খাবারের প্রতি বেশি আসক্ত হলে ভিটামিন ডি ও বি ১২-এর অভাব দেখা দেয়।
চাউমিন ও নুডলসে সোডিয়াম বা নুনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কারণ আটা-ময়দা থেকে চাউমিন তৈরি করার ক্ষেত্রে অনেকসময়ই অতিরিক্ত সোডিয়াম বা নুন মেশানো হয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ডেকে আনে। যাঁদের নুন খাওয়া বারন থাকে তাঁদের চাউমিন বা নুডলসেও নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার।
ধরনের প্রকার ও ভাল-মন্দ
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের নুডলস পাওয়া যায়। ময়দা, আটা কিংবা চালের তৈরি নুডলস রয়েছে। এক্ষেত্রে ময়দার চেয়ে আটা কিংবা চালের তৈরি নুডলস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ এগুলিতে ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকে। তবে কেনার সময় ভাল কোম্পানির নুডলস বা চাউমিনের প্যাকেট কিনুন। অনেকসময় রং মিশিয়ে সস্তার চাউমিন কিংবা নুডলসকে আটার তৈরি নুডলস বলে চালিয়ে দেন বিক্রেতা। প্যাকেটের গায়ে এফএসএসআই-এর ট্যাগ দেখে নিন।
মিশ্রিত ক্ষতি
অফিস চত্বরে কিংবা পাড়ার মোড়ের ফাস্টফুড সেন্টারে চাউমিন সুস্বাদু করে গড়ে তুলতে বাইরে থেকে বিভিন্ন সস, মশলা ইত্যাদি মেশানো হয়। এগুলিও কিন্তু কতটা স্বাস্থোপযোগী সেই নিয়ে সংশয় রয়েছেই।
সবচেয়ে ক্ষতির আজিনামটো। যার বৈজ্ঞানিক নাম হয় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেড। যা ফ্লেভার এনহান্সার হিসাবে কাজ করে। এটি চাউমিনে মেশালে তার সুগন্ধ ও স্বাদ বৃদ্ধি পায় ও খাওয়ার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। ফলে খাওয়ার সময় কোনও নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না। ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়ায়।
সস্তার সসে ক্ষতি হয়। বাজার চলতি চাউমিনের দোকানে টম্যাটো সস হিসাবে যে সস ব্যবহার করা হয় তা অনেকসময় টম্যাটোর বদলে কুমড়ো কিংবা আলু সিদ্ধ করে রং মিশিয়ে, সাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। যা থেকে হজমের ক্ষতি হয়, পাশাপাশি রং শরীরে গিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া প্রিজারভেটিস থাকায় অতিরিক্ত টক্সিন শরীরে যায়। কাজেই টেস্টি, স্পাইসি চাউমিনে ক্ষতি মারাত্মক।
বাড়িতে বানিয়ে খেলে যা মাথায় রাখা জরুরি
যেহেতু চাউমিনে বা নুডলসে ফাইবার প্রায় থাকেই না। তাই রান্না করে খাওয়ার সময় এতে বিভিন্ন রকম সবজি ও শাক মিশিয়ে খান। এতে প্রয়োজনীয় ফাইবার শরীরে পৌঁছবে।
ভিটামিন ও প্রোটিনের পর্যাপ্ত জোগান চাউমিনে চিকেন বা ডিম দিয়ে খেলে তা স্বাস্থ্যকর হবে।
স্বাদ বা সুগন্ধি বাড়াতে ঘি বা মাখল ব্যবহার করা ভাল। আজিনামটো একেবারেই নয়।
ভাল সস ব্যবহার করা দরকার। উন্নতমানের সস শরীরে ভিটামিন সি-এর উৎস।
ভাল তেল অর্থাৎ রিফাইন তেল ব্যবহার করে চাউমিন বানান। উন্নতমানের চাউমিন কিংবা নুডলসের প্যাকেট কিনুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.