কানের ভিতরে টিউমার হলে পর্যবেক্ষণ না কি অপারেশন, কখন কোনটা করবেন? সমাধান বাতলে দিলেন বিশেষজ্ঞ ইএনটি-সার্জন ডা. তুষারকান্তি ঘোষ। তাঁর কথা এই প্রতিবেদনে লিপিবদ্ধ করলেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
অন্তঃকর্ণ ও বহিঃকর্ণে টিউমার হওয়ার কথা যে খুব শোনা যায় তা নয়। তবে যাদের হয় তাদের দ্রুত চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ, অনেক সময় কানের ভিতরের টিউমারে ক্যানসার কোষ থাকে। যা ব্রেনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কানের একদম বাইরের দিকে সূর্যের আলোর এক্সপোজারেও এক ধরনের টিউমার হয়।
অ্যাকোস্টিক নিউরোমা – এটি মূলত নন-ক্যানসারাস বৃদ্ধি যা অষ্টম ক্র্যানিয়াল স্নায়ুতে সাধারণত বাড়তে থাকে। একে ভেস্টিবুলোকোক্লিয়ার নার্ভও বলা হয়। এটি মস্তিষ্কের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কানের সংযোগ স্থাপন করে। এই টিউমার হলে রোগীর মাথা ঘুরতে পারে, শ্রবণক্ষমতা কমতে পারে, কখনও মাথা ভারী লাগে, কারও কানে সমানে কোনও শব্দ হতে (টিনিটাস) থাকে।
অ্যাকোস্টিক নিউরোমা হলে টিউমারটিকে বেশি বড় হওয়া থেকে আটকাতে হবে। তা না হলে সম্পূর্ণ শ্রবণশক্তি হ্রাস বা মাথার খুলির মধ্যে তরল জমা হতে পারে, ভারসাম্য হারাতে পারে, মুখ বেঁকে গিয়ে বাড়াবাড়ি হতে পারে। যেহেতু অ্যাকোস্টিক নিউরোমাস ক্যানসারযুক্ত নয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় তাই প্রায়ই ডাক্তাররা নির্দিষ্ট সময় অন্তর MRI স্ক্যানের মাধ্যমে টিউমারটি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। কোনও গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে সাধারণত সার্জারির পরামর্শ দেন।
সূক্ষ্ম সার্জারি – অন্তঃকর্ণ ও ব্রেনের সংযোগস্থলে টিউমারের আকার হঠাৎ অনেক বড় হয়ে গেলে সার্জারি ছাড়া উপায় নেই। তা না হলে চিকিৎসক সাধারণত ওষুধ দিয়ে রাখতে চান। যেহেতু কানের নানা নার্ভ ব্রেনের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাই কানে শোনায় খুব সমস্যা না হলে চট করে অপারেশন করতে চান না কেউই। অবশ্য এখন অত্যাধুনিক সার্জারি পদ্ধতিতে কানের অপারেশনের ঝুঁকি অনেক কমে গিয়েছে। আগে অনেক সময় এই ধরনের অপারেশন ব্রেন খুলে করতেন নিউরো-সার্জনরা। কিন্তু এখন ইএনটি সার্জনরা সহজেই কানের মধ্য দিয়ে টিউমারের কাছে পৌঁছে গিয়ে সেটি বের করে নিয়ে আসতে পারেন। এই পদ্ধতির নাম ট্রান্সল্যাবরিনথ অ্যাকোস্টিক নিউরোমা রিমুভাল।
এই পদ্ধতিতে ব্রেনের কোনও অংশ স্পর্শ না করেই অপারেশন সম্ভব। বিশেষ ট্রেনিং নেওয়া ইএনটি বিশেষজ্ঞরা একদম নিখুঁতভাবে টিউমার বের করতে সক্ষম হন। নিউরো-সার্জনরা ব্রেন খুলে এই অপারেশন যখন করতেন তখন ব্রেনের যে অংশ খুলতে হত সেখান দিয়ে কানের এই অংশ স্পষ্ট দেখাও যেত না। তাই একটু ভুল হলেই ব্রেনের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হত। যার পরিণাম হতে পারত ভয়াবহ। এছাড়া আগে গামানাইফ দিয়ে অপারেশন করা হত। তাতে টিউমার পুরোটা অপসারণ সব সময় সম্ভব হত না। বিশেষ করে খুব দ্রুত বাড়তে থাকা
টিউমার অপারেশনের জন্য গামানাইফের চেয়ে ট্রান্সল্যাবরিনথ অ্যাকোস্টিক নিউরোমা রিমুভাল পদ্ধতি অনেক গুণ ভালো। তবে খরচ একটু বেশি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.