ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: সরকারি হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে কথা বলার মাঝেই চিকিৎসক জেনে যাবেন ওই ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) আক্রান্ত কি না। এমন যন্ত্র এবার সরকারি হাসপাতালে আনা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের অভিমত, দেশে প্রথম এমন প্রযুক্তি কৌশল কাজে লাগিয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় সম্ভব। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, ইনফ্রা রে দিয়ে এমন রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা দেশে প্রথম। পরীক্ষামূলকভাবে এসএসকেএম, মেডিক্যাল কলেজ সহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে রোগ নির্ণয়ে এমন যন্ত্র চালু হবে।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের আওতায় রাজ্যে আনা হচ্ছে অত্যাধুনিক ‘কো-অক্সিমিটার।’ সুচ না ফুটিয়ে, সামান্য ব্যথাও অনুভব করবেন না রোগী। এমনভাবে রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা হবে। মূলত যাঁরা রক্তাল্পতায় ভোগেন বা বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায় তাঁদের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে শিশুদের এমন সমস্যা থাকলে পরিবারের কাছে অত্যন্ত চিন্তার বিষয় বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, রোগ যত দ্রুত নির্ণয় হবে, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে। অনেকক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে ওষুধ খেলে রোগ নিরাময় হতে পারে। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য এই যন্ত্র আনা হবে প্রায় সব সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে। ব্লাড ব্যাঙ্কেও থাকবে এমন যন্ত্র।
স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বলছে, রাজ্যে সরকারি চিহ্নিত থ্যালাসেমিক রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। যাঁদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত নিতে হয়। কিন্তু এই সংখ্যার বাইরে আরও রোগী আছেন যাঁরা সরকারি পরিষেবার আওতার বাইরে। এই রোগীদের যেমন স্বাস্থ্য ভবনের ‘ব্লাড সেল’—এর আওতায় আনা হবে। তেমনই তাঁদের চিকিৎসাও শুরু হবে। আর এই কাজ দ্রুত করতেই রাজ্যে তৈরি হয়েছে ‘স্টেট লেভেল মনিটরিং কমিটি’। থ্যালাসেমিয়া মনিটরিং অ্যান্ড মেন্টেনেন্স গ্রুপ রাজ্যভিত্তিক সদস্যরা হলেন ডা. তুফান দলুই, ডা. প্রকাশ মণ্ডল, ডা. বিপ্লবেন্দু তালুকদার, ডা. রাজীব দে, ডা. সম্বিৎ সামন্তের মতো বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যে ৩৪টি থ্যালাসেমিক কন্ট্রোল ইউনিট তৈরি হয়েছে। ডা. বিপ্লবেন্দু তালুকদারের কথায়, “থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য এমন কমিটি প্রথম। একইসঙ্গে জেলাতেও বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছে।” বিপ্লবেন্দুবাবুর কথায়, “শুধুমাত্র থ্যালাসেমিয়া নয়, হিমোফিলিয়া বা সিকেল সেল (রক্তের লোহিত রক্তকণিকা)-এর মতো দুরারোগ্য রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই বিশেষজ্ঞ কমিটি। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস বা এসএসকেএম হাসপাতালে রোগীর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। তাই জেলা হাসপাতালকেও কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় উন্নত করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.