ক্ষিরোদ ভট্টাচার্য: রক্তচোষা প্লীহা! সত্য়িই তাই। থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া রোগীদের একটা বড় অংশের রোগীর রক্ত চুষে নেয় প্লীহা! ফল যা হওয়ার তাই। ফি-সপ্তাহে রক্ত নিতে হয়। কিন্তু রক্তাল্পতা কিছুতেই কমে না। দেখা গেল, ঘরের শত্রু বিভীষণ প্লীহা। যতবারই রক্ত দেওয়া হচ্ছে ২-৩ দিনের মধ্য়ে সমস্ত রক্ত জমা হচ্ছে প্লীহাতে। ক্রমশ প্লীহা ফুলতে থাকে। পেট বড় হয়ে যায়। আবার প্লীহার মধ্য়ে আয়রন জমতে জমতে শরীরে ফেরিটিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে।
একটা সময় আসে যখন রোগী আর রক্ত নিতেই পারে না। কিন্তু শরীর রক্ত চাইছে। সেই সময় অ্যান্টিজেন মুক্ত রক্ত দিতে হয় রোগীদের। একমাত্র কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেই এই চিকিৎসার সুযোগ আছে। তাই রাজ্য়ের সব রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় বিভাগীয় চিকিৎসকদের। এখন প্রশ্ন, এমন রোগের কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনায় আক্রান্ত থ্যালাসেমিক বা হিমোফিলিয়া রোগীদের মধ্য়ে এমন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাই নিঃসংশয় হতে গবেষণা চলছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রসূন ভট্টাচার্যর কথায়, ‘‘এই ধরনের রোগীদের অস্ত্রোপচার করে প্লীহা বাদ দেওয়া হচ্ছে। গত এক বছরে অন্তত ছ’জন রোগীর প্লীহা বাদ দেওয়া হয়েছে।’’ কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. বিপ্লবেন্দু তালুকদারের কথায়, ‘‘থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়া রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত কম থাকে। তার মধ্য়ে যদি প্লীহা রক্ত চুষে নেয় তবে সমস্যা আরও বাড়ে। দেখলেই বোঝা যায়, পেট ফুলে থাকে। তাই এই ধরনের রক্ত-রোগীদের হাসপাতালের অন্য বিভাগেই অস্ত্রোপচার করে প্লীহা বাদ দেওয়া হয়েছে। প্লীহাও নেই, রক্ত জমার সমস্যাও নেই। তাই রক্ত নেওয়ার ব্যবধান বেড়ে এক থেকে দেড় মাস হয়। রোগীও ভালো থাকে। এ বিষয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে জরুরি আলোচনায় বসছেন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞরা। উদ্দেশ্য একটাই, মেডিক্যাল কলেজের মতো পিজি, এনআরএস, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও হেমাটোলজি অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন ইউনিট চালু করা। তাতে মেডিক্যালের উপর চাপ কমবে।
সাধারণত এ, বি, আর, ও এবং এইচ- এই চার গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায়। এর বাইরে আরও ৪৪টি গ্রুপের সন্ধান মিলেছে। তার মধ্য়ে আবার ১২টি রীতিমতো বিরল। এমন গ্রুপের রক্তদাতার ডায়েরি তৈরির কাজ চলছে দেশজুড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.