ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: এক দু’জন নয়। সংখ্যাটা অন্তত কুড়ি। প্রত্যেকের বয়স ১-১০। সবার এক সমস্যা–গলায় বিজাতীয় কিছু আটকে প্রাণ যায় যায়, অর্থাৎ জীবন-মরণ সংকট। শেষমেশ আরজিকর হাসপাতালের তৎপরতায় একরত্তিরা প্রাণে বাঁচলেও বিষয়গুলি তুলে দিয়েছে একটা গভীর প্রশ্ন। অভিভাবক তথা বাড়ির লোকজন কী করছিলেন? এতটাই ব্যস্ত যে, বাচ্চা মুখে কী দিচ্ছে নজরে পড়ে না?
জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাক্তারবাবুরা মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছেন। এসবই হল স্মার্টফোনের অভিশাপ। অল্পবয়সি মা-বাবারা দায়িত্ব ভুলে হাতের স্মার্টফোনে এমনই মগ্ন থাকছেন যা আখেরে বিপর্যয় ডেকে আনছে। অতি সম্প্রতি যেমন বিপদ নেমে এসেছিল তিন বছরের তিন্নি ঘোষের জীবনে। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা তিন বছরের তিন্নির গলায় আটকে গিয়েছিল পাঁচ টাকার কয়েন। ওই অবস্থাতেই তাঁকে নিয়ে আসা হয় আরজিকর হাসপাতালে।
কান, নাক ও গলা বিভাগের চিকিৎসক ডা. সরসিজ রায় জানান, গত এক মাসে তিন্নির মতো পনেরোটিরও বেশি শিশু এসেছে ইএনটি বিভাগে। প্রত্যেকেরই গলায় কিছু না কিছু আটকে গিয়েছিল। অতি সম্প্রতি দশ বছরের একটি শিশু গলায় দশ টাকার কয়েন নিয়ে এসেছিল। দশ টাকার কয়েন আকারে অনেকটাই বড়। চোখ টোখ ঠিকরে বেরিয়ে একাকার অবস্থা হয়েছিল শিশুটির।
ডা. সরসিজ রায়ের কথায়, “ছোট শিশুরা হাতের কাছে যা পায় সেটাই তুলে মুখে দেয়। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। অভিভাবকদের উচিত তাদের চোখে চোখে রাখা। কিন্তু ক্রমবর্ধমান এহেন ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে, সচেতন নন তাঁরা। বহু ক্ষেত্রে অভিভাবকরা স্বীকারও করে নিয়েছেন, ‘কাজে ব্যস্ত ছিলাম। খেয়াল করিনি..।’ এই মন্তব্যে শিউরে উঠছেন চিকিৎসকরা।
খাদ্যনালি বা ইসোফেগাসে আটকে গিয়েছে বলে রক্ষে। কিন্তু খাদ্যনালিতে না গিয়ে শ্বাসনালিতে চলে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত শিশুদের।”
অনেক সময় আকারে বড় কিছু পেটের ভিতরে চলে গেলে অস্ত্রোপচার করে বের করতে হয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আরজিকর হাসপাতালে কান নাক গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ইন্দ্রনাথ কুণ্ডুর তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার হয় তিন্নির। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন ইএনটি সার্জন ডা. দেবব্রত দাস, ডা. সরসিজ রায়। প্রায় চল্লিশ মিনিটের প্রচেষ্টায় ইসোফেগাসস্কোপ দিয়ে পাঁচ টাকার কয়েনটিকে বের করে আনা হয় তিন্নির খাদ্যনালি থেকে। সরু তারের মতো এ যন্ত্রের সামনে লাগানো থাকে একটি লেন্স। যার মাধ্যমে খাদ্যনালির সামনে কিছু আটকে থাকলে স্পষ্ট দেখা যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.