অভিরূপ দাস: রহস্যের সমাধান করতে ফের সশরীর আসছেন তিনি! যিনি বাঙালির সব থেকে ক্ষুরধার মগজাস্ত্রের মালিক। দুপ্যোর সমান জনপ্রিয়তা, শালর্ক হোমসের থেকেও বড় ফ্যানবেস যাঁর। সেই ফেলুদাই চারমিনার ধরিয়ে বসবেন আপনার ড্রয়িংরুমে।
দেশ-বিদেশে কাল্পনিক সুপার হিরোদের ‘পকেট’ মডেল তুমুল জনপ্রিয়। এই বিভাগে এতদিন হাত খালি ছিল বাংলার। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হত শার্লক হোমস, ব্যাটম্যান, টিনটিনদের দিয়ে। তোমনই ‘ফিগারিন’ হয়ে তিনি আসছেন। মানে, পুতুল কিন্তু ঠিক তেমনটা নয়। একেবারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মিশিয়ে থ্রি ডি টেকনোলজির মাধ্যমে তৈরি হওয়া ‘ফিগারিন’ তার চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁত। পূর্ণাঙ্গ, নিটোল। প্রথমে ছবি বেছে নিয়ে থ্রি ডি সফটওয়্যারে মডেলিং। তারপর থ্রি ডি প্রিন্ট নেওয়া হয়। শেষে রেজিন দিয়ে তৈরি হয় ত্রিমাত্রিক মডেল। ঠিক যেমনটা দেখা যায় বিদেশের হোমস বা টিনটিনের একেবারে জীবন্ত মডেলে। সেই ‘ফিগারিনের’ ময়দানে আন্তর্জাতিক সুপার হিরোদের টক্কর নিতে হাজির হচ্ছেন বাংলার অতি আপন গোয়েন্দাপ্রবর প্রদোষচন্দ্র মিত্র।
ঘনাদা, টেনিদা, ব্যোমকেশ..। বঙ্গের কাল্পনিক চরিত্র তো বড় কম নয়। তবে আট থেকে আশির মধ্যে জনপ্রিয়তায় একাই একশো একজনই। প্রদোষচন্দ্র মিটার। ক্ষুরধার বুদ্ধি, মেধাবী, উজ্জ্বল দৃষ্টি। ভোজালির খাপের পুঁচকে দামের লেবেলও যাঁর নজর এড়ায় না। বাংলায় এই প্রথম তার ‘ফিগারিন।’ তৈরি হবে এখানেই। এক্কেবারে বঙ্গ ভার্সান। এমন কাজটা করছেন এই শহরেরই যুবক। টালিগঞ্জের বাসিন্দা ফেলু-ভক্ত অভিজিৎ সুকুল। তাঁর কথায়, ‘‘বিদেশে গিয়ে দেখিছি টিনটিন-হোমসদের ফিগারিন, তখন ভাবতাম কেন বাঙালি হিরোর ফিগারিন নেই? বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করি, ফেলুদার ফিগারিন তৈরি করতে হবে।’’ ভাবনা থেকেই সৃষ্টি। পকেট ফেলুদার খবর পৌঁছে গিয়েছে বাংলাদেশ, লন্ডনে।
আসছে অগুনতি ফোন। অনুরোধ একটাই, ‘‘দাদা আমার একটা লাগবে।’’ অভিজিতের কথায়, ‘‘প্রমাণ পেয়ে গিয়েছি, বাঙালি হিরোর কদর স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যানদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। লন্ডনের ফেলুদা ক্লাব একাধিক ফেলুদার ফিগারিন কিনতে চাইছে।’’ বাণিজ্যিকভাবে তাকে আনতে গেলে অনুমতি লাগবে রায় সোসাইটির। অভিজিতের তৈরি ফিগারিনের খবর পেয়েছেন পরিচালক সন্দীপ রায়। সত্যজিৎ-পুত্র জানিয়েছেন, “এর আগে ফেলুদার টি শার্ট তৈরি করেছে অভিজিৎ। রায় সোসাইটির সঙ্গেও ওঁর যোগাযোগ রয়েছে। ফেলুদার যেরকম জনপ্রিয়তা তার ফিগারিন সকলেই সংগ্রহ করতে চাইবে। অভিজিতের তৈরি ফেলুদা নিখুঁত হলেই আমি খুশি।”
ফেলুদার ফিগারিন লম্বায় ৪.৩ ইঞ্চি। নিচের বেস ৫.৩ ইঞ্চি। ওজন আড়াইশো গ্রাম। প্রদোষচন্দ্র মিত্র আপাতত একা। তবে খুব শিগগিরি জটায়ু আর তোপসেকেও সঙ্গে নিয়ে আসবেন। অভিজিতের কথায়, মডেল যখন একাধিক তখন আর তা ফিগারিন নয়। ডায়োরামা। টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রফেসর ক্যালকুলাসের ডায়োরামা মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয় বেলজিয়ামে। এবার কলকাতায় এসে ভক্তরা নিয়ে যাবেন ফেলুদার ফিগারিন? আসার দরকার নেই। অনলাইনেই মিলবে ফেলুদার ফিগারিন। জানিয়েছেন, অভিজিৎ।
সূত্রের খবর, একেকটি ফিগারিনের দাম হবে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। কেমন দেখতে এই ফেলুদার ফিগারিন? সোনার কেল্লা যাঁরা দেখেছেন তাঁদের চোখ আটকে যাবে। এতো সেই বৈঠকখানার দৃশ্য। বাংলার বৈঠকখানায় বিলিতি হিরোদের পাশে প্রথম কোনও বাঙালি হিরোকে নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছেন ফেলুদাপ্রেমীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.