তরুণকান্তি দাস: পাটায়ার ওয়াকিং স্ট্রিটে হাঁটার লোক নেই। চিনের কথা শিকেয় তুলে রাখা গেল, জাপান, কম্বোডিয়াতেও একই হাল। আর কলকাতা বিমানবন্দরে বিদেশি পর্যটকদের আসার হার কমছে তো কমছেই। আর মাস দুয়েক এমন চললে গত বছরের চেয়ে অনেক কম বিদেশি পর্যটকের মুখ দেখবে এই বঙ্গ।
খড়্গপুরের একটি বাণিজ্যিক সংস্থার প্রায় একশোজনের কর্পোরেট ট্যুর। যেদিন কলকাতা থেকে ব্যাংককের বিমানে ওই টিমের ওড়ার কথা, তার ৭২ ঘণ্টা আগে বাতিল হল ওই সফর। এবং সেই ধারা এখনও অব্যাহত। ব্যাংককগামী বিমানে যেখানে টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হত কলকাতা থেকে যাওয়ার জন্য, সেখানে অনেক সময় অর্ধেক আসন খালি যাচ্ছে। ব্যাংককের সরকারি দপ্তরের সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় ৭০ শতাংশ হোটেল ফাঁকা পড়ে থাকছে। যে ওয়াকিং স্ট্রিট বিখ্যাত তার নিশি বাসর সাজিয়ে বসে থাকার জন্য, সেখানে পর্যটকের অভাবে যেন জমাট অন্ধকার।
এক এনআরসিতে রক্ষা নেই, করোনা ভাইরাস দোসর। প্রথমটার জেরে তৈরি হওয়া অস্থিরতা না কাটতেই পর্যটন শিল্পের আকাশে করোনা ভাইরাসের হানা। যা শুধু ভারত নয়, এশীয় দেশগুলিতে পর্যটন ব্যবসায় জোর ধাক্কা দিয়েছে। গত ১৫ দিনের যে হিসাব পেশ করেছে আন্তর্জাতিক পর্যটন সংগঠন সেখানে দেখা যাচ্ছে চিন পর্যটকশূন্য। সেখানকার পর্যটকদের বলা হয় সবচেয়ে খরুচে ভ্রমণকারী। তাঁরা তো ঘরবন্দি। ছায়া পড়েছে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, জাপান, মায়ানমার-সহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে। ভারতীয় পর্যটনের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া প্রতিবেশী দেশগুলির ছবিটা অত্যন্ত খারাপ। একের পর এক কর্পোরেট ট্যুর বাতিল হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত কর্পোরেট ট্যুরের সময়। বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা তাদের ব্যবসায়ী সহযোগীদের নিয়ে যায় বিদেশে। ফলে সেই ব্যবসার দিকে তাকিয়ে থাকে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থাগুলি।
কর্পোরেট বা গ্রুপ ট্যুরের থেকে যে লক্ষ্মীলাভ হয় তা দিয়েই সারা বছর চালাতে হয় বড় ভ্রমণ সংস্থাগুলিকে। এর সঙ্গে থাকে পুজোর সময় ও বর্ষশেষের উৎসবের মরশুম। সেই সময়ও বেশ ভাল ব্যবসা পাওয়া যায়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় পারিবারিক বেড়ানোর বিষয়টা অনেক কম থাকে। তাছাড়া স্কুলও খোলা থাকে এই সময়। ফলে হোটেলের চাহিদা কম থাকে বলেই খরচ কম হয়। তাই সংস্থাগুলি বাৎসরিক গ্রুপ ট্যুরগুলো সেরে পেলে এই মাস তিনেকের মধ্যে। তার মধ্যেই হামলা করোনা ভাইরাসের। এমনিতেই এনআরসি, সিএএ-ইস্যুতে দেশে অস্থিরতার দরুণ পর্যটন মার খেয়েছে ব্যাপকভাবে। আগ্রা পর্যটনের হিসাবেই সেখানে ৬০ শতাংশ পর্যটক কমেছে। এবার ধাক্কা করোনা ভাইরাসজনিত আতঙ্কের।
পশ্চিমবঙ্গ ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নীলাঞ্জন বসু বলেছেন, “এই অবস্থা যদি আর মাস তিনেক চলে, দেশগুলিতে বিধিনিষেধ জারি থাকে তাহলে চরম বিপদ। পুজোতেও ব্যবসা মার খাবে। এখনই নাভিশ্বাস উঠেছে পর্যটন শিল্পের।” ভারতীয় পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠনের কর্তা অনিল পঞ্জাবির ব্যাখ্যা, “চিনের পর্যটকদের গড় খরচ করার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। তাঁরা তো আসছেন না। সেখানেও যে নতুন নতুন জায়গাগুলি খুলে গিয়েছিল এবং এখানকার পর্যটকরা যাচ্ছিলেন তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাংকক-পাটায়া ভারতীয়দের কাছে কম বাজেটের বিদেশ সফরের জন্য অতি প্রিয়। সেখানে সহজে কেউ যাচ্ছেন না। একের পর এক ট্যুর বাতিল হয়ে যাচ্ছে।” সবমিলিয়ে সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না পর্যটনশিল্পের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.