সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: দখলদারদের দিয়েই জঙ্গল বাঁচানোর পরিকল্পনা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সামাজিক বনসৃজন বিভাগ। তাঁদের সহযোগিতাতে গড়ে উঠতে চলেছে বিকল্প পর্যটন কেন্দ্র। এই মাসের শেষেই যা খুলে দেওয়া হবে সর্বসাধারণের জন্য। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকে। জানা গিয়েছে, একসময়ে যারা জঙ্গল দখল করে ঘরবাড়ি বানিয়ে ছিলেন। তাঁদের জঙ্গল রক্ষার কাজে ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে একটি ইকো পার্ক।
শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বেশিরভাগ জায়গাই একসময় ছিল জঙ্গল। কিন্তু, জবরদখলের কবলে পড়ে ধীরে ধীরে জঙ্গলের একটা বড় অংশই এখন বিলুপ্ত। জঙ্গল কেটে মাঝেমাঝেই গড়ে উঠেছে বসতি। অবস্থা এমন যে খাতায়-কলমে জঙ্গল থাকলেও তা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ঘোষপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুলালিজোত এলাকাতেও জঙ্গল বাঁচাতে হিমশিম খেয়েছেন বন বিভাগের কর্তারা। তবে জঙ্গল যথন নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে তখন ঘুম ভেঙেছে দপ্তরের। যেটুকু জঙ্গল বেঁচে রয়েছে, সেগুলিকে পুনরুদ্ধার করে সংরক্ষণের জন্য অভিনব পন্থা নিয়েছে। দুলালিজোত এলাকায় সব মিলিয়ে দু’তিনটি টুকরো বনাঞ্চল উদ্ধার করে সেখানে ইকোপার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘দুলালি ইকোপার্ক’। সবকিছু ঠিকমতো চললে জুন মাসের শেষে খুলে যাবে পার্কটি। এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বন দপ্তরের তরফে।
এই ইকোপার্কে ঢুকলেই যাতে পর্যটকদের মন ভাল হয়ে যায়, তার জন্য সমস্ত রকম বন্দোবস্তই থাকছে। সেখানে যেমন থাকছে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি জলাধার, যেখানে জলে নেমে হুটোপুটি করা যাবে। সেই সঙ্গে রয়েছে পর্যাপ্ত বসার জায়গা থেকে ক্যাফেটেরিয়া। সময় কাটানোর জন্য আদর্শ এই পরিবেশে থাকছে বিনোদনের নানা অন্য উপাদানও। বিচ্ছিন্ন এই তিনটি বনাঞ্চলকে আকাশপথে রোপওয়ে দিয়ে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। তবে এই সামান্য কিছু বিনোদনের উপকরণ বাদ দিলে, কোথাও বন্য আদিমতাকে নষ্ট করা হবে না। সমস্ত কিছুই তৈরি করা হবে যথাসম্ভব প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে। কংক্রিটকে যতটা সম্ভব পরিহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সামান্য প্রবেশমূল্য রাখা হচ্ছে খরচ তোলার জন্য। পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে বন দপ্তরের সামাজিক বনসৃজন বিভাগ।
এই বিভাগের ডিএফও দাওয়া শেরিং শেরপা জানিয়েছেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই এলাকাটিকে উদ্ধার করে বনাঞ্চল বাঁচানোর একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বেঙ্গল সাফারি পার্কের পাশাপাশি জঙ্গলকেন্দ্রিক বিনোদনের ও কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ এনে দেবে এই ইকোপার্ক। স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের একটা সুযোগও তৈরি হয়েছে। যার ফলে উৎসাহী পরিষদও। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার গোটা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হলে পার্কটি শিলিগুড়ি-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে বলেই আশাবাদী তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.