সুমিত বিশ্বাস, খয়রাবেড়া: সিকিমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর পুজোর ছুটির ‘ট্রাভেল ট্যুর’ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ লাগোয়া সিকিমের রুট বাতিল করে বেড়ানোর বিকল্প ঠিকানা খুঁজছেন পর্যটকরা। সেই বিকল্প ঠিকানায় অফবিট এবং অবশ্যই অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের জায়গা হতে পারে পুুরুলিয়ার খয়রাবেড়া। বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড় ছুঁয়ে থাকা এই খয়রাবেড়া পর্যটন কেন্দ্র। এখন আর খয়রাবেড়া অযোধ্যা পাহাড়ের সাইট সিয়িং নয়। এই কেন্দ্র এখন আক্ষরিক অর্থেই একটি টুরিস্ট স্পট। ফলে অন্যরকম পর্যটনের স্বাদ নিতে পুজোর ছুটিতে বেড়ানোর ঠিকানা হতেই পারে অযোধ্যা পাহাড়তলির সবুজে মোড়া এই কেন্দ্র।
লম্বা টানা অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জে ঘন সবুজ অরণ্য। সেই সঙ্গে নীল জলরাশি। টানা নিম্নচাপের বর্ষণে খয়রাবেড়া লেক এখন টইটম্বুর। আর তার পাশ জুড়েই রয়েছে ঘন জঙ্গল। যেন একেবারে কল্পলোকের জগৎ। আর চোখের সামনে এমন ল্যান্ডস্কেপ ভেসে উঠলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবেই। তবে অযোধ্যা পাহাড়তলির এমন প্রত্যন্ত এলাকাতেও ফোনের টাওয়ার ও ইন্টারনেট একেবারেই স্বাভাবিক।
শ্যাডোজোন বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু নয়। ফলে নিশ্চিন্তে হারানোর ঠিকানা মিললেও ওই মোবাইল কিন্তু বন্ধ রাখতে হবে। না হলে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ উপভোগই করা যাবে না। সত্যি তাই! সন্ধ্যা নামলেই যে খয়রাবেড়া লেকের পাশ থেকে ভেসে আসবে বাউল গান। এই খয়রাবেড়ার পাশেই বুড়দা গ্রামের বাসিন্দা তথা গাইড মিঠুন সিং মুড়ার বাড়ি। তিনি গাইডের পাশাপাশি পর্যটকদের বাউল গানও শোনান।
ট্রেকিং-র পথ বাতলে দিয়ে পর্যটকদের সঙ্গীও হন। দিনভর সাইট সিয়িং করে এসে বাউল আর বাঁশির সুরে রিসোর্টে বসেই পুরুলিয়ার লোকশিল্পে বুঁদ হতে পারবেন। জানতে পারবেন এই লোকশিল্পর গরিমা। ওই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে বললে ছৌ নাচ দেখারও সুযোগ মিলবে। আর কপাল ভালো থাকলে ওই খয়রাবেড়া লেকের পাশে ছুটে বেড়ানো চিতল হরিণ, গোল্ডেন জ্যাকেল, খরগোশের দেখা মিলতে পারে। আর ট্রেকিংপথে বন্য শূকর, হায়না এমনকী বুনো হাতিরও মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন! গাইড তথা বাউল শিল্পী মিঠুন সিং মুড়া বলেন, ‘‘খয়রাবেড়া বেড়াতে এলে আমরা পর্যটকদের চেমটাবুরু হিলটপে নিয়ে যাই। এই জঙ্গল-পাহাড়িপথে এই ট্রেকিং যেন একটা আলাদা অ্যাডভেঞ্চার। তবে বন্যপ্রাণ থেকে একটু সাবধান হতেই হবে। সারাদিন নানান সাইট সিয়িং করে রাতে বাউল গানের মজা নিতে পারবেন।’’
খয়রাবেড়া লেকেই চলে বোটিং। এছাড়া ফিশিং, বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন সব খেলারই সুযোগ রয়েছে খয়রাবেড়া রিসোর্টে। আসানসোল থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু অফবিট নয়। বাংলায় অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের অন্যতম প্রধান জায়গা খয়রাবেড়া। আমরা খুব আনন্দ করছি।’’
তবে এই পর্যটন কেন্দ্রে একটি মাত্র রিসর্ট থাকায় এখানে রাত্রিবাস করা ব্যয়বহুল। ফলে দিনভর খয়রাবেড়া ঘুরে ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদায় কেনাকাটা করে অন্যত্র রাত্রিবাস করাই যায়। সবটাই নির্ভর করছে বাজেটের উপর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.