সংগ্রাম সিংহরায়: সারারাত ধরে এখানে শিশির ঝরে। কিন্তু তা মাটিতে ঝরে পড়ে না। গাছে, বাড়ির ছাদে, ঘাসের ডগায় জমে থাকে বরফ হয়ে। যাকে ইংরেজিতে বলে ‘ফ্রস্ট’। ডিসেম্বরের শেষ থেকে গোটা জানুয়ারি পর্যন্ত এই এলাকায় এভাবেই প্রকৃতি ঢেলে দেয় তার স্নেহের পরশ। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে টয়ট্রেনের বিখ্যাত স্টেশন সোনাদা। জায়গাটার নামও তাই। সেই সোনাদা থেকে এক কিলোমিটার চড়াইয়ের পর ছোট্ট জনপদ নয়াবস্তি। কেউ কেউ সোনাদা খাসমহলও বলে থাকেন। ওই অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্যের খনির সন্ধান মিলেছে বছর দু’য়েক হল। এখানেও যে অফবিট ডেস্টিনেশন হিসেবে পর্যটনকে তুলে ধরা যায় তা এতদিন মাথাতেই আসেনি। বছর দু’য়েক হল এলাকায় হোম-স্টে গড়ে উঠেছে।
পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাপসসাধন রায় জানান, নয়াবস্তির নাম অনেকে জানেন না। কিন্তু যাঁরা একবার যান, তাঁরা ফিরে আসতে চান। এমনিতেই সারা বছরই এখানকার তাপমাত্রা ১২-১৪ ডিগ্রির আশপাশে থাকে। শীতকালে গড় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রিতে ঘোরাফেরা করে। মাঝরাতের পর তা শূন্য ডিগ্রির পারদ ছুঁয়ে ফেলে। তখনই শিশির জমে বরফ হয়ে যায়। সকালের প্রথম সূর্যের আলোয় যে ছবি প্লাটিনামের মতোই উজ্জ্বল। এখানে মূল আকর্ষণ যদিও ওই বরফই। তবে সারা বছরই এখান থেকে গোটা টাইগার হিল দেখা যায়। সেই সঙ্গে পাহাড়ি গাঁদা, আর পাথরের গায়ে হয়ে থাকা পাহাড়ি পালং শাক বিস্ময়করভাবে এখানকার সৌন্দর্য বর্ধন করেছে। সেই সঙ্গে অগুনতি বাঁশ, ভুট্টা এবং স্কোয়াশের গাছে ফলে থাকা অনাদরের স্কোয়াশ মাটিতে গড়াগড়ি খেতে দেখলেও কেউ বড় একটা গা করে না।
এলাকার লোকজনই জানালেন, একেক ঋতুতে এখানকার ভিন্ন রূপ। বসন্তে গোটা এলাকা জানা–অজানা ফুলে ছেয়ে থাকে, তখন প্রজাপতিরা ঘুরে বেড়ায়, আবার বর্ষায় ঝুমঝুম করে গাছে বৃষ্টি পড়ার শব্দ অন্য মাধুর্য বয়ে আনে। এলাকাটিও খুব বড় নয়। সব মিলিয়ে শ’খানেক পরিবার। তবু গত কয়েক বছরে সংখ্যা বেড়েছে। নয়াবস্তি মূলত ‘শেরপা’দের বস্তি। বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। রয়েছে একটি সূদৃশ্য মনেস্ট্রি। গ্রামটিতে গেলেই দেখা যাবে ধর্মের প্রতীক পতাকা লাগানো। সব পরিবারের একজন করে বাধ্যতামূলকভাবে সন্ন্যাসী হিসেবে নিয়োজিত হতে হয়। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই তাঁদের। তাঁদেরই একজন সাংগে শেরপা এবং তাঁর ভাই মিলে এমনই হোম-স্টে চালাচ্ছেন। সাংগে দাজু জানালেন, দু’বছর ধরে তাঁরা এই ব্যবসা করছেন। রাজ্য পর্যটন দপ্তরের ওয়েবসাইটেও তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেই মতো হোম-স্টে সংস্কার ও পরিবর্ধনের জন্য দেড় লক্ষ টাকাও পেয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.