সুমন করাতি, হুগলি: রাতের অন্ধকারে চুপিসাড়ে প্রতিবেশীর বাড়ির সামনে কার্তিক ফেলা, সেইসঙ্গে ছোট্ট চিরকূটে কোনও না কোনও বার্তা – বাংলার আনাচেকানাচে এই ছবি চেনা। আজকের জেটগতির যুগেও নিখাদ মজার জন্য এসব ছোটখাটো কাজ করেই থাকে তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু কার্তিক পুজোর প্রাক্কালে বৈদ্যবাটিতে এই মজার ঘটনা আর নিতান্তই মজার রইল না। তা ঘিরে শোরগোল শুরু হল। কারণ, বাড়িতে বাড়িতে ফেলা কার্তিক ঠাকুরের মূর্তির সঙ্গে যে চিঠিটি পাওয়া গিয়েছে, তা পুরসভার কাউন্সিলরের প্যাডে লেখা! তাতে তাঁর সইও রয়েছে। সকলেরই প্রশ্ন, এ কেমন মজা?
হুগলির বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৯ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পৌষালি ভট্টাচার্য। তাঁর লেটারহেডে লেখা চিঠিতে সম্বোধন করা হয়েছে বাড়ির মালিক শ্যামল মাইতিকে। সেইসঙ্গে একটি কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি। চিঠিতে নানা ভনিতা করে শেষে লেখা, ”আমাকে আনতে কাকুদের ২০০০ টাকা খরচ হয়েছে। আমাকে ঘরে নিয়ে কাকুদের হাতে ওই টাকা দিয়ে দিও।” অর্থাৎ স্পষ্ট, পুজোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে এবং খরচের হিসেবও দেওয়া হয়েছে। শুধু বাড়িতে এই চিঠি দেওয়াই নয়। পরে কাউন্সিলর পৌষালি ভট্টাচার্যর ফেসবুক পোস্টেও দেখা গিয়েছে কার্তিক ঠাকুর এবং চিঠির ছবি। ফলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে, সচেতনভাবেই তিনি এই কাজ করেছেন। এসব নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতেই অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন কাউন্সিলর পৌষালিদেবী।
পুরসভার প্যাড ব্যবহার করে এই ধরনের ‘মজা’ করা যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। ঘটনা জানাজানি হতেই বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতো কড়া ধমক দিয়েছেন কাউন্সিলর পৌষালি ভট্টাচার্যকে। এ বিষয়ে পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, ”পুরসভার কাউন্সিলরের প্যাড পুরসভার কাজে ব্যবহার করার জন্য। এইভাবে ব্যক্তিগত কোন কাজ বা মজা করার জন্য তা করা করা যায় না। যে কাউন্সিলর এই কাজ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আগামী দিন যাতে এই ধরনের কাজ আর না হয়, সেই নিয়ে তাঁকে সতর্ক করা হবে।”
তবে বিষয়টি নিয়ে সুর চড়াতে থামেনি বিরোধী দল বিজেপি। দলের যুবমোর্চার মুখপাত্র হরি মিশ্র বলেন, ”যে চিঠিটি পুরসভার প্যাডে লিখে পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে লেখা রয়েছে, কার্তিক ঠাকুরের জন্য ২০০০ টাকা দিতে হবে। তৃণমূল দল এমনই অবস্থায় চলে গিয়েছে যে তাঁরা কার্তিক ঠাকুর নিয়েও কাটমানি আদায় করতে ছাড়ছে না।” চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইনের বক্তব্য, ”যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা নিছকই নিজেদের বন্ধুদের মধ্যে মসকরা করতে গিয়ে ঘটেছে। এর মধ্যেও বিরোধীরা রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা করছে। তবে পুরসভার প্যাড ব্যবহার করা উচিত হয়নি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.