Advertisement
Advertisement
Offbeat News

চোরকে কামড় কুকুরের, পালটা দংশন তস্করেরও! ক্যানিংয়ে মানুষ-চারপেয়ের আজব লড়াই

উভয়ের ধুন্ধুমার লড়াইয়ের ফলাফল কী?

Offbeat News: People of Canning witness dangerous fight between pet dog and the thief
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 28, 2025 10:16 pm
  • Updated:March 1, 2025 9:28 am  

দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘লিচু চোর’ কবিতার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের? ছোটবেলায় পড়ে আসা কবিতায় লিচু চুরি করতে গিয়ে বাড়ির পোষ্য কুকুর চোরেদের যে কী হাল করেছিল, তার বর্ণনা কবি প্রতিটি লাইনে দিয়েছেন। তবে এখানে লিচু চুরি নয়, দোকানের ক্যাশবাক্স সাবাড় করতে এসেছিল চোর। কিন্তু পোষ্য ‘গজা’ যেভাবে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে অ্যাকশনে নামল, তা দেখে তাজ্জব সকলে। সুকুমার রায়ের সেই কবিতাই যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিল গজা।

ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং বাজার। ব্যবসায়ী সমিতির নিয়ম অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বাজারের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ থাকে। বাজারের মধ্যে রয়েছে সৌমেন রায়ের মনোহারি দোকান। বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধ থাকায়, সৌমেন দোতলায় ঘরের মধ্যেই ছিলেন। বিকেল তিনটে নাগাদ তিনি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে মধ্যাহ্নভোজ করছিলেন। সুযোগ বুঝে এক চোর দোকানের পিছন দিকের দেওয়ালের লোহার জাল কেটে ঢুকে পড়ে। দোকানের মধ্যে ক্যাশবাক্স ভেঙে চুরি করে। সেই সময় বন্ধ দোকানের মধ্যে প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল। অন্যদিকে বাড়ির পোষ্য কুকুরটি ছিল ছাড়া। দোকানে চোর দেখে সে শুরু করে প্রবল চিৎকার। চোরকে ঘায়েল করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্রমণও করে। শুরু হয় চোর-পোষ্যের লড়াই।

Advertisement

কুকুরের আক্রমণেও চোর ভয় না পেয়ে পালানোর জন্য গজাকে বেধড়ক মারধর করে। গজাও ছাড়ার পাত্র নয়। চোরের পায়ে কামড় বসিয়ে দেয় সে। চোর বাবাজির সাহস আবার বিরাট! পা থেকে কুকুরের দাঁত সরাতে গজার পায়ে সেও দেয় এক কামড়! এমন সময়ে তীব্র শব্দ শুনতে পেয়ে বাড়ির মালিক সৌমেন রায় দৌড়ে নিচে নামেন। অন্যদিকে চোর তড়িঘড়ি কুকুরের থাবা থেকে বেঁচে দেওয়াল টপকে পালিয়ে যায়। সৌমেনবাবু চোরের পিছন থেকে ধাওয়া করলেও ধরতে পারেননি। পরে তিনি ঘটনার বিষয় জানিয়ে ক্যানিং থানায় অভিযোগ করেন।

চোরের কামড় খেয়ে আহত বাড়ির পোষ্য ‘গজা’।

পাশাপাশি মানুষের কামড়ে আহত পোষ্যকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান সৌমেনবাবু। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। কুকুরের কামড়ের দাগ পায়ে দেখেই অভিযুক্ত চোরকে ধরে ফেলে সকলে। ধৃতের নাম তুহিন দাস। বাড়ি ক্যানিংয়ের কার্গিল পাড়ায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত শুরু করেছে ক্যানিং থানার পুলিশ।ঘটনা প্রসঙ্গে দোকানের মালিক জানিয়েছেন, ‘‘আগে বেশ কয়েকবার চুরির ঘটনা ঘটেছিল। ক্যানিং বাজার এলাকায় দিনেদুপুরে চোরেদের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। দোকানে ‘গজা’(পোষ্য কুকুরের নাম)থাকায় চোর ঠিকমতো চুরি করতে পারেনি। তবে ক্যাশবাক্স ভেঙে নগদ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। পোষ্যের জন্য বড় ধরণের ক্ষতি হয়নি।ক্যানিং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’’

কুকুরের কামড়ে চোরের পায়ের বেহাল দশা।

কে এই গজা? প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে সৌমেনবাবু বলেন, ‘লকডাউনের সময় রাস্তা থেকে ছোট্ট একটি কুকুরছানাকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলাম। পরে বাড়িতে এনে তাকে বড় করি। সেই এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। যখন দোকান খোলা থাকে, গজা দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের পাশে বসে পাহারা দেয়। দোকানে সিসিটিভি থাকলেও গজার নজর এড়িয়ে কেউ কিছু করতে পারে না। গজার উপর আমাদের বিশ্বাস কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবারও দোকানে চুরির ঘটনায় গজা প্রথমে চুরির ঘটনা বুঝতে পারে। ও নিচে নেমে দোকানে ঢুকে পড়ে। চোরকে দেখতে পেয়ে ঘায়েল করে। পরে অবশ্য পুলিশ চোর কে পাকড়াও করে।’ গজার এমন কৃতিত্ব ক্যানিং বাজারের চাউর হতেই আহত সারমেয়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা। তার দ্রুত সুস্থতাও কামনা করেছেন তাঁরা। সাবাশ গজা!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement