বিমা পরিষেবা নেন না, এমন মানুষ হাতেগোনা। তবে এবার বিমাক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য নতুন কিছু নিয়ম চালু করার জন্য প্রস্তাব পেশ করেছে আইআরডিএ। সেই সমস্ত নিয়ম কী কী, কীভাবেই বা তার সঠিক বাস্তবায়নে উন্নতি আসতে পারে, এই লেখায় সেটাই বিশ্লেষণ করলেন এবারের অতিথি দেবাশীষ নাথ
দু’শোরও বেশি বিমা কোম্পানির একত্রীকরণ করে ১৯৫৬ সালে জন্ম দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় জীবন বিমা নিগমকে। তারপর এ দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে মজবুত করার ক্ষেত্রে দশকের পর দশক এই সংস্থাটি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে প্রতীয়মান হয়ে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারের এক অনিবার্য শর্ত হিসেবে আবার ২০০০ সালে বিমাক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে ২৩ টি ব্যক্তি মালিকানার জীবন বিমা কোম্পানি কোনও না কোনও ভারতীয় সংস্থার সাথে গাঁটছড়া বেঁধে ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। অথচ বিমাক্ষেত্রে ধাপে ধাপে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের মাত্রা ৭৬ শতাংশ করে দেওয়া সত্বেও তারা কিন্তু বিশেষ বাজার জমাতে পারেনি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নবগঠিত ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া সেই সমস্ত বিদেশি বিনিয়োগপুষ্ট ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানিগুলির উন্নয়নার্থে ও বিমা গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষার্থে আনতে থাকে একের পর এক নিয়ম। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বাজার বিস্তারের পরিকল্পনায় উন্নত বিশ্বের পরিচালন ব্যবস্থাকে এদেশেও কায়েম করতে চেয়ে জোর দেয় মূলত ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা বিক্রিকেই। কিন্তু এই পদ্ধতি যথেষ্ট কার্যকরী না হওয়ার ফলে বেসরকারি প্রতিটি জীবন বিমা কোম্পানিকেই অনুপ্রবেশের ২২ বছর পরেও ৫ শতাংশ-এর নীচে বাজার দখল নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকতে হয়। বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, বিমাক্ষেত্র উন্মুক্তকরণের ২২ বছর পরেও ভারতীয় জীবন বিমা নিগম বা এলআইসি ৭৫ শতাংশর আশেপাশে বাজার দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে, তার কর্মদক্ষতা ছাড়াও বিশেষ একটি কারণে। ১২ লক্ষাধিক অনুগত, সৎ ও কর্মদক্ষ এজেন্ট এবং বিমা গ্রাহকের পারস্পরিক পেশাগত সম্পর্কের বৃত্তের বাইরের সম্পর্কই বাজার দখল করে রাখার রহস্যের কারণ।
সম্প্রতি আইআরডিএ কিছু নতুন নিয়ম চালু করার প্রস্তাব এনেছে। প্রস্তাবগুলির সংক্ষিপ্তরূপ হচ্ছে -১. এজেন্টদের প্রথমবর্ষের কমিশনের হার কমিয়ে দেওয়া, ২. বিমা গ্রাহককে এজেন্ট বদলানোর অধিকার দেওয়া, ৩. যে কোনও কোম্পানির এজেন্টকে যে কোনও বিমা কোম্পানির যোজনা বিক্রির অধিকার দেওয়া, ৪. পলিসিগুলিকে ডি-ম্যাট অবস্থায় নিয়ে আসা এবং ৫. ‘বিমা সুগম’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যার মাধ্যমে সব রকম বিমা-পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। আইআরডিএ-র তরফে বলা হচ্ছে-এর প্রতিটি পদক্ষেপই বিমা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও বিমা গ্রাহকদের উন্নততর পরিষেবার স্বার্থে। নিয়ন্ত্রকের ভাবনার যথার্থ কার্যকারিতা তো ভবিষ্যৎ-ই বলবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কমিশন কমিয়ে দিলে ও তার ফলে নতুন নতুন মানুষ এই পেশায় না এলে কি বেকারত্বে জর্জরিত এই দেশের ভাল হবে? কিংবা যখন তখন এজেন্ট বদলে ফেলার অধিকার থাকলে, এজেন্ট কি বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকবে? অথবা যে কোনও কোম্পানির এজেন্ট যে কোনও কোম্পানির প্রতি-ই আর দায়বদ্ধ থাকবে? ডি-ম্যাট বা বিমা-সুগম কি এ দেশের প্রযুক্তির সঙ্গে সড়গড় না থাকা কোটি কোটি বিমা গ্রাহককে পরিষেবা দেওয়ার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না? প্রশ্ন থেকে যায়, সংস্কারের এই পথ আদৌ সঠিক তো?
লেখক বিমা পর্যবেক্ষক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.