শুভাশিস সাহা: আমাদের ছেলেবেলায় ষষ্ঠীর সন্ধ্যাতেই দুর্গাঠাকুর আসত পাড়ার প্যান্ডেলে। পুজোর অনেক আগে থেকেই আমরা স্কুলফেরত অথবা বিকেলের দিকে প্রদীপ পালের গোলায় গিয়ে ঠাকুর তৈরী দেখতাম। কোন ঠাকুরের অসুর সবচেয়ে বিপজ্জনক, সেটা নিয়ে চলত আমাদের বিশ্লেষণ। ষষ্ঠীর দিন দুপুরে খাওয়াদাওয়া করেই ভ্যানে করে বড়দের সঙ্গে ঠাকুর আনতে চলে যেতাম। সে এক আলাদা আনন্দ।
তখন সবে ক্লাস এইটে উঠেছি। পাখনা গজাতে শুরু করেছে। নিজেদের গণ্ডি ডিঙিয়ে এলাকার বাইরের ঠাকুর দেখার ইচ্ছে প্রবল। পাড়ার কয়েকজন সমবয়সি বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেনে চেপে জনাইয়ের বাইরে বারুইপাড়ায় যাব বলে ঠিক করলাম। সেই মতো বিকেল বিকেল নিজের এলাকার ঠাকুর দেখার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ওই বয়সে এলাকার ঠাকুর ছেড়ে ট্রেনে করে ঠাকুর দেখতে যাব সেটা জানতে পারলে আর রক্ষে থাকত না। তাই বাড়ির লোককে না জানিয়েই স্টেশনে উপস্থিত হলাম।
সবার ট্যাঁক খালি। ঠিক হল টিকিট না কেটেই যাওয়া হবে। ট্রেনের টিকিট না কেটে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার মধ্যে যেমন রোমাঞ্চ ছিল, তেমন বুকের মধ্যে অজানা একটা ভয়ও কাজ করছিল। মাঝের বেগমপুর স্টেশন যেতেই গুটিগুটি পায়ে আমরা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গেলাম। ওদিকে চেকাররাও কামরার অন্য প্রান্ত থেকে আমাদের দিকে সাক্ষাৎ অসুর রূপে আসতে থাকল। আমাদের তখন ঘেমেনেয়ে এক করুণ অবস্থা। আমাদের কারও কাছেই একজনের ফাইন দেওয়ার মতো টাকাও নেই। তাই চোখ বন্ধ করে আমাদের স্টেশন আসার প্রার্থনা করতে থাকলাম।
এদিকে ট্রেন জনাই ঢুকছে আর ওদিকে যমদূতের মতো চেকাররাও আমাদের দিকে আসছে। আর ‘জয় মা দুর্গা’ বলে চলন্ত ট্রেন থেকেই একেক জন নামছে আর স্টেশনে আছাড় খাচ্ছে। এভাবে সকলেই সে যাত্রায় ‘চেকার’রূপী অসুরের কাছ থেকে বাঁচলাম। একটু আধটু আছাড় খেয়ে ছড়ে গেলেও আমরা সেদিন প্রথমবার বাইরে ঠাকুর দেখে সসম্মানেই বাড়ি ফিরেছিলাম। কেউ জানতেও পারেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.