ছবি-মৈনাক চক্রবর্তী।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ র কুলটির মিঠানি চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বন্দুক বা কামান দেগে নয়, কুলটির মিঠানি চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণের বার্তা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছায় ‘রিলে’ পদ্ধতিতে। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে হঠাৎ চারিদিকে রোল ওঠে ‘সন্ধি-সন্ধি’। মন্দির থেকে পঞ্চাশ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরা সেই আওয়াজ শোনামাত্রই ‘সন্ধি-সন্ধি’ আওয়াজ তুলে ছুটতে থাকেন পাশের গ্রামের দিকে। এভাবেই মিঠানির চক্রবর্তী বাড়ির সন্ধির বার্তা পৌঁছে যায় আশপাশের তিনটি গ্রামের সাত-আটটি পুজো মণ্ডপে। তবে অভিনবত্ব শুধুমাত্র সন্ধির ডাক পৌঁছে দেওয়াতেই নয়। অভিনবত্ব রয়েছে সন্ধিক্ষণ নির্ধারণেও।
পরিবারের সদস্য নয়ন চক্রবর্তী জানান, একটি মাটির সরাতে থাকে জল। সেই জলে ভাসানো হয় এক সূক্ষ ছিদ্রযুক্ত তামার বাটি। প্রতি চব্বিশ মিনিটে সেই তামার বাটিটি যতবার ডোবে তার উপর অঙ্ক কষে সন্ধিকাল নির্ঘণ্ট করেন ‘গ্রহরাজ’। কাশীপুর রাজাদের দেওয়া তামি পদ্ধতিতেই চক্রবর্তীদের সন্ধিক্ষণ নির্ণয় হয়। জানা গিয়েছে, প্রায় ৩৫০ বছর আগে মিঠানি গ্রামের পূর্বপুরুষ রামলোচন চক্রবর্তী স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। সেইমতো মান গাছের নিচে পাওয়া পিতলের দুর্গামূর্তি। সেই মূর্তি এনে প্রথম পুজো শুরু করেন তিনি। থিমের ছোঁয়া এড়িয়ে চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গা প্রতিমা এখনও সাবেকি। একচালা, সোনালি ডাকের সাজ প্রতিমার। তবে কার্তিক-গণেশের অবস্থান উলটো। মা দুর্গার ডানদিকে কার্তিক আর বামে গণপতি। পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে থাকেন রাজ্যের বাইরে বা কলকাতায়। কিন্তু পুজোর চারটে দিন বাড়িতে হাজির হন ১৫০ জন সদস্য। পরিবারের আরেক সদস্য কাজল চক্রবর্তী জানান, যাবতীয় পারিবারিক ব্যবসা সবই শ্রীদুর্গার নামাঙ্কিত। পরিবারের অনেকেই আজ কয়লা খনির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের আক্ষেপ, মায়ের নামে অনেক জমিই এখন ধসের কবলে খনিগর্ভে বিলীন।
পরিবারের গৃহবধূ তিথি চক্রবর্তী জানান, মহাধুমধাম করে তিনদিন ধরে ভোগ বিতরণ হয়। পাত পেরে অন্নভোগ গ্রহণ করেন গ্রামের মানুষ। নবরত্ন সহকারে ভাত, খিচুরি, লুচি-সহ বিভিন্ন ভোগ রান্না হয়। দশমীতে মাকে দেওয়া হয় পোড়া মাছের ভোগ। পরিবারের সদস্যদের দাবি, অষ্টমীতে বলির খড়গ ধোওয়া জল খেলে নারীর বন্ধ্যত্ব দূর হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মনস্কামনা পূরণের জন্য দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্তকূল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.