পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল রঘুনাথগঞ্জের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোর কথা।
ফরাক্কা,শাহজাদ হোসেন: হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক রঘুনাথগঞ্জের জোতকমল বহুরা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। এই পরিবারের দেবী কোদাখাকি দুর্গা নামে পরিচিত। প্রাচীন রীতি মেনে আজও রঘুনাথগঞ্জের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কোদাখাকি দুর্গার প্রথম ভোগ নিবেদিত হয় কোনও মুসলমান পরিবারের থেকে। এবছর এই পুজো ৩৫৭ বর্ষে পদার্পণ করল। কোদাখাকি দুর্গাপুজো হিন্দু মুসলিমের সম্প্রীতি বহন করে চলেছে আজও।
এই পরিবারের দুর্গাপুজোয় লুকিয়ে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস। বন্দ্যোপাধ্যায়দের আদি বাড়ি ছিল সাগরদিঘির মণিগ্রামে। বহুকাল আগে গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার সাগরদিঘির মণিগ্রাম ছেড়ে চলে আসেন রঘুনাথগঞ্জ দু’নম্বর ব্লকের জোতকমল গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীজনার্দনপুর বহুরা গ্রামে। একসময় রঘুনাথগঞ্জের গিরিয়া-সেকেন্দ্রা ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। জঙ্গলে তখন ডাকাতদলের বসবাস। জঙ্গলের ভিতর ডাকাতরা পুজো করত দেবী দুর্গার। একদিন জমিদারির কাজের তদারক সেরে জোতকমলের জমিদার শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় গিরিয়া-সেকেন্দ্রার ঘন জঙ্গলের ভিতর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন তিনি জঙ্গলের মধ্যে ডাকাতদের দেবী দুর্গার মূর্তি দেখতে পান। কথিত আছে, সেই রাতে জমিদার শরৎচন্দ্রকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী। তাঁর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তিনি। দেবীর আদেশে জঙ্গল থেকে ডাকাতদের পূজিত দেবী দুর্গার মূর্তি নিয়ে আসা হয়
বহুরা জমিদার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। বাড়িতে দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করে পুজো দেওয়া হয়। পুজোতে কোনওরকম ফাঁক ফোঁকর না থাকলেও দেবী পুজোতে সন্তুষ্ট হননি। পুনরায় দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, কোনও মুসলিম পরিবারের মহিলার হাতের ভোগ চান তিনি। দেবীর স্বপ্নাদেশ মেলার পর চিন্তিত হয়ে পড়েন জমিদার শরৎচন্দ্র।
সেই সময় বহুরা গ্রামে বাস করতেন এক বিধবা মুসলমান মহিলা। তিনি সকলের কাছে লোকাইয়ের মা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। জমিদার শরৎচন্দ্র তখন লোকাইয়ের মায়ের শরণাপন্ন হন। জমিদার দেবীর ইচ্ছার কথা জানালে দারিদ্রতার কারণে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সেই রাতে দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশে লোকাইয়ের মাকে তাঁর হাতে কোদার নাড়ু খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। দেবীর ইচ্ছা পূরণে ঘন জঙ্গলের ভিতর থেকে কোদার খুঁদ সংগ্রহ করে আনেন তিনি। কোদার খুঁদের নাড়ু তৈরি করে লোকাইয়ের
মা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবী দুর্গাকে ভোগ হিসাবে নিবেদন করেন। সেই থেকে আজও বহুরা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবী দুর্গা কোদাখাকি দুর্গা বা নাড়ুখাকি দুর্গা বলে পরিচিত। প্রাচীন রীতি মেনে আজও এই পরিবারের দেবীর পুজোয় কোনও মুসলিম পরিবারের প্রথম ভোগ দেবীকে নিবেদন করা হয়। তারপর অন্যরা দেবীকে ভোগ উৎসর্গ করে থাকেন। ডাকাতদের প্রচলিত পুজো বলে এই পুজোতে আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি নেই। যদিও পাঁঠা বলি হয় আজও। পুজোর কটাদিন সব সম্প্রদায়ের মানুষ
কোদাখাকি দুর্গাকে ঘিরে উন্মাদনায় মেতে ওঠেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.