সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: চলতি বছরে করোনার প্রভাব পড়েছে দুর্গাপুজোতেও (Durga Puja 2020)। অনেকবেশি সতর্ক হয়ে, বিধিনিষেধ মেনে আয়োজন করতে হচ্ছে পুজোর। সেই কারণে এবছর চারণ কবি মুকুন্দ দাসের প্রতিষ্ঠিত আনন্দময়ী কালীবাড়ির দুর্গাপুজো থেকে বাদ যাচ্ছে জাঁকজমক। তবে যেহেতু মন্দিরের পুজো, তাই রীতিনীতি আচার মেনে বিধিমতেই পুজো সারবে কর্তৃপক্ষ। ফলে কিছুটা আক্ষেপ থাকছেই।
এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে। কারণ, প্রতিষ্ঠাতা চারণকবি মুকুন্দ দাস নিজে। প্রতিবছর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে এই পুজো। চলতি বছরে সেখানকার এই জাঁকজমকহীনতায় মন খারাপ মন্দির কমিটি থেকে শিলিগুড়িবাসী, প্রত্যেকের।তবে পরিস্থিতি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলেই মন্দির কমিটির তরফে জানালেন ভাস্কর বিশ্বাস। তিনি বলেন, “ইতিহাস কালীবাড়ির দুর্গাপুজোয় দর্শনার্থীদের টেনে নিয়ে আসে। রথের দিন থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হয় দুর্গাপ্রতিমা তৈরির প্রস্তুতি। শিলিগুড়ির সব থেকে পুরনো দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে দ্বিতীয় আনন্দময়ী কালীবাড়ির পুজো। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ওই মন্দিরের ভূমিকা ছিল। সেই ইতিহাসকে আঁকড়ে আনন্দময়ী কালীবাড়ির দুর্গাপুজো ৮৯ তম বছরে পদার্পণ করেছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকার কারণে রাজ্যের অন্যান্য ধর্মীয় স্থান নিয়ে পর্যটনদপ্তর যে ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সেই সার্কিটে যুক্ত করা হয়েছে কালীবাড়িকে।
মন্দির কমিটির সম্পাদক ভাস্কর বিশ্বাস বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চারণকবি মুকুন্দ দাসের ভূমিকা সবাই জানেন। বিপ্লবী ও দেশবাসীদের নিজেদের গানের মাধ্যমে আন্দোলনে শামিল হওয়ার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্বদেশী গান ও নাটক রচনা করে ব্রিটিশ শাসকদের বিষ নজরে পড়েন। ১৯২৪ সালের মে মাসে বরিশাল থেকে শিলিগুড়ি এসেছিলেন তিনি। ডিআই ফান্ড মার্কেটের পাশে বর্তমান শিলিগুড়ি থানার পিছনে একটি টিনের তৈরি কালীবাড়িতে আশ্রয় নেন। সে সময় মন্দিরের পরিস্থিতি দেখে গান গেয়ে মন্দির পাকা করার উদ্যোগ নেন। মাসখানেক গান গেয়ে পাঁচশো এক টাকা দক্ষিণা সংগ্রহ করে তা মন্দির গড়ার জন্য দান করেছিলেন। ১৯২৬ সালে মন্দির স্থায়ীভাবে স্থাপন হয়। কাশী থেকে আনন্দময়ী কালীমূর্তি এনে মন্দিরে স্থাপন করা হয় সেই সময়। মন্দিরের নাম আনন্দময়ী কালীবাড়ি নামকরণ করেছিলেন চারণ কবিই।
জানা গিয়েছে, পুজোর সময় সারা দেশ থেকে বিপ্লবীরা মন্দিরে একত্রিত হতেন। লাঠিখেলা, ব্যায়ামের মতো শারীরিক কসরত করতেন। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশদের পরাজিত করতে স্বাধীনতা সংগ্রামের একাধিক পরিকল্পনাও ওই মন্দিরে করা হত। সেসময় প্রথম শুরু হয় দুর্গাপুজো। রথের দিন থেকে প্রতিমা শিল্পী মন্দির প্রাঙ্গণেই মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করতেন। তবে বর্তমানে রাজস্থান থেকে মার্বেলের স্থায়ী দুর্গা মূর্তি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্দির কমিটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.