ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: “আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির, ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগতমাতার আগমন বার্তা।” বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিটি বাঙালীর ঘরে ঘরে বেজে উঠেছে এই স্বর। প্রতি বছর এই স্বর কানে পৌঁছতেই বাঙালীর মনে কয়েকশো প্রজাপতি উড়তে শুরু করে। গোটা বাংলা সেজে ওঠে রঙিন আলোয়। কিন্তু এবার কোথায় কী! একে তো করোনাত্রাসে গত কয়েক মাস ঘরবন্দী আপামর জনতা। তার উপর পুজো এবার আবার আশ্বিনের বদলে কার্ত্তিক মাসে। মহালয়ার সঙ্গে এক মাসেরও বেশি দূরত্ব দুর্গাষষ্ঠীর। কিন্তু কেন এমন বিপত্তি? কেন ভাদ্রর শেষদিন মহালয়া হয়ে গেলেও আশ্বিন পার করে কার্ত্তিকে গিয়ে বাপের বাড়ি আসছে উমা?
বাংলা পঞ্জিকা বলছে, আশ্বিন মাস এবার মলমাস। তাই এই মাসে কোনওরকম পুজো নৈব নৈব চ। পুরোহিতদের কথায়, মল মাস হল ‘মলিন মাস’। হিন্দি বলয়ে বলা হয় ‘অধিক মাস’। অর্থাৎ, অতিরিক্ত মাস। পুরোহিতদের কথায়, তিথি নক্ষত্রের সূক্ষ হিসাব মেলাতেই এই মাসের উদ্ভব। তিনি-নক্ষত্র যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাঁদের কথায় প্রতি উনিশ বছর অন্তর আশ্বিন মাস মল মাস হয়। সেই হিসাবে এর আগে ২০০১ সালের আশ্বিন ছিল মল মাস। তারও আগে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে। আর সেই বছরগুলিতেই প্রতি বারই দুর্গাপুজো হয়েছিল কার্তিক মাসে। হিসাব মতো আগামী ২০৩৯ সালের আশ্বিন মাস ফের মল মাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু কী এমন হিসেব, যা মেলাতে একটা মাসে সব পুজো-শুভ কাজ বন্ধ রাখতে হয়? পণ্ডিতদের কথা মোতবেক, সমস্ত পুজো হয় সূর্য-চন্দ্রর তিথির হিসেবে। সূর্য আর চাঁদের তিথিগত হিসাবটা আলাদা। সূর্যের একমাস গড়ে তিরিশ দিনে সম্পূর্ণ হয়। চাঁদের ক্ষেত্রে সময়টা লাগে সাতাশ থেকে সাড়ে উনত্রিশ দিন। ফলে প্রতি মাসেই কয়েক দিনের ফারাক থেকে যায়। যা বছর শেষে গড়ে এগারো দিনে গিয়ে দাঁড়ায়। চান্দ্রতিথি এবং সৌরতিথির ফারাক নিয়ন্ত্রণে তাই আড়াই থেকে তিন বছর অন্তর একটি করে মাসকে মল মাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, পৌষমাস বাদে সবই মলমাস হতে পারে। প্রতি ১৯ বছর অন্তর এই মাসটা এসে পরে আশ্বিন মাসে। তাই তাকে মলমাসের ‘মর্যাদা’ দিতে গিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হয় পুজো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.