সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এবছর ভালোবাসার দিনেই সরস্বতী পুজো। ১৪ ফেব্রুয়ারি স্কুল-কলেজে সাজসাজ রব। বিদ্যার দেবীর দোহাই দিয়ে একটা দিন বইপত্র তুলে রাখার আনন্দ। সেই সঙ্গে আরও রংবেরংয়ের মুহূর্ত অপেক্ষা করে কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণীদের জন্য। মন যা চায়, তা-ই করা যায়। কিন্তু ভুল করেও কুল খাওয়া যাবে না। কেননা ঠাকুর নাকি রাগ করবেন। দীর্ঘদিনের বিশ্বাস। পরীক্ষায় যাতে ফেল করতে না হয়, সে কারণে সরস্বতী পুজোর আগে কুল দাঁতে কাটে না ছাত্রছাত্রীরা।
কিন্তু কেন এই নিয়ম? কুলের সঙ্গে পরীক্ষায় পাশেরই বা কী সম্পর্ক? ছাত্র-ছাত্রীরা কিন্তু বিশ্বাস করে, কুল খেলে মা সরস্বতী কুপিতা হন। যার প্রভাব পড়তে পারে পরীক্ষার ফলে। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন রাজ্যে নানারকম লোকাচার চালু আছে। পাঞ্জাবে এই উপলক্ষে আকাশে দেদার ঘুড়ি ওড়ে। আবার মধ্যপ্রদেশ, মাহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে সরস্বতীর পাশাপাশি শিব ও পার্বতীরও পুজো করা হয়। তবে বাংলায় যে নিয়ম চালু আছে, তা আর কোথাও নেই।
পুজোর পাশাপাশি এই যে কুল দাঁতে না কাটার রীতি, তা বাংলার একান্ত নিজস্বই বলতে হয়। সাধারণত কৃষিপ্রধান রাজ্য বাংলা। যে কোনও ফসলই দেবতাকে উৎসর্গ করার রীতি। এমনকী নতুন ধান উঠলেও তা নিয়ে উৎসব পালিত হয়। শীতের ফল কুল। সরস্বতী পুজো অর্থাৎ বসন্তপঞ্চমীর সময়েই ব্যাপক হারে কুল হয়। প্রত্যাশিতভাবেই সরস্বতীর পুজোর প্রসাদ হিসেবে অপরিহার্য হয়ে ওঠে কুল। ঠিক যেরকম পুজোর ফুল হয়ে ওঠে গাঁদা। যেহেতু প্রসাদ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়, সেই কারণেই গাছের প্রথম ফলটি বা ফসলটি দেবতাকে উৎসর্গ করা ক্রমশ প্রথা হয়ে ওঠে। লোকাচারে পরিণত হয় এটি। কালে কালে ছাত্ররা বিশ্বাস করতে থাকে, দেবতাকে না দিয়ে এই ফল খেলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব হবে না।
তবে লোকাচার পেরিয়ে অপর একটি কারণও আছে। সেটিও প্রণিধানযোগ্য। শীতেই কুল ব্যাপকহারে ফলতে শুরু করে। সেইসঙ্গে এই বসন্তপঞ্চমীর সময়েই কুলে পাক ধরে। তার আগে কাঁচা কুল খেলে পেট খারাপের সম্ভাবনা থাকে। পিঠেপুলির মরশুমে যাতে পেটের রোগে ছোটরা আক্রান্ত না হয়, তাই মা সরস্বতীর শরণ নেন অভিভাবকরা। পরীক্ষার ভয় দেখিয়েই কুল খাওয়া থেকে তাদের বিরত করার প্রথা চালু হয়েছিল। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.