গৌতম ব্রহ্ম: শাল-পিয়াল-হরিতকি, বহেড়ার নিচেই লুকিয়ে গুপ্তধন!
হদিশ অনেকেই জানত। কিন্তু, তা যে দুর্মূল্য তা জানা ছিল না। এবার সেই গুপ্তধনের ক্ষমতা মান্যতা পেল আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সেই সঙ্গে উন্মোচিত হল একটি রহস্যও। জানা গেল, এই গুপ্তধনের দৌলতেই সঁাওতালদের কাছে ঘেঁষতে সাহস পায় না মারণ ক্যানসার।
কুড়কুড়ে ছাতু। বীরভূম, বঁাকুড়া, পুরুলিয়ার রাঙামাটিতে এই ছত্রাক পরিচিত। মূলত শাল-পিয়াল-হরীতকী, বহেড়ার নিচে মাটিতে আলুর মতো দেখতে এই ছত্রাক জন্মায়। স্থানীয় সাঁওতালরা এই ছত্রাক নিজেরা খায়, বাজারে বিক্রিও করে। ফাইবারে উৎকৃষ্ট এই মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু। পুষ্টিগুণেও ভরপুর। সহজে রান্না করা যায়। বাঁকুড়ার রানিবাঁধ এবং খাতড়ার জঙ্গলে প্রচুর হয়। এবার এই ছত্রাকের ক্যানসাররোধী ক্ষমতাকে প্রকাশ্যে আনলেন রহড়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গবেষক ড. স্বপনকুমার ঘোষ। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববন্দিত নেচার পত্রিকার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস বিভাগে।
এদিন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে স্বপনবাবু জানান, ‘‘এই ছত্রাকের থেকে সংগৃহীত ‘এফ১২ প্রোডাক্ট’-এর ক্যানসার নিধনের ক্ষমতা আছে। নিয়মিত এই মাশরুম খেলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। সেটাও প্রমাণিত হয়েছে আমাদের গবেষণায়।’’ গবেষণায় স্বপনবাবুকে সহযোগিতা করেছেন কৌশিক পাণ্ডে, মধুপর্ণা ঘোষ ও প্রদীপকুমার সুর।
স্বপনবাবু বীরভূমের খয়রাশোলের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই সঁাওতালদের এই মাশরুম খেতে দেখেছেন। নিজেও খেয়েছেন। উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করার সুবাদে সম্প্রতি এই মাশরুমের ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তাতেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্বপনবাবু জানান, ৬০টির বেশি কম্পাউন্ড পাওয়া গিয়েছে এই মাশরুমে। সেগুলির শুদ্ধিকরণ করে ‘এফ১২ প্রোডাক্ট’ বের করা হয়। এতে ক্যানসাররোধী পঁাচটি ‘ফ্যাটি অ্যাসিড’ আছে। যা ‘পি৫৩ জিন’-কে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, ক্যানসার কোষের বিভাজন আটকে যায়। স্বপনবাবুর পর্যবেক্ষণ, পি৫৩ জিনকে ‘গার্জেন অফ জিনোম’ বলা হয়। এই অভিভাবক নড়বড়ে হয়ে গেলেই শরীরে ক্যানসারের মতো রোগের প্রকোপ শুরু হয়। এই মাশরুমে মজুত ‘এফ১২ প্রোডাক্ট’ পি৫৩কে সক্রিয় করে। ‘অ্যাপোকটিসিস’ বা ক্যানসার কোষের মৃতু্যকে ত্বরান্বিত করে।
স্বপনবাবুর দাবি, সপ্তাহে একদিন ৫০ গ্রাম ‘কুড়কুড়ে ছাতু’ খেতে হবে। তা হলে একদিকে ক্যানসার আক্রান্তরা যেমন রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন, অন্যদিকে বাকিরা ক্যানসারকে দূরে রাখতে পারবেন। বিখ্যাত ভাইরোলজস্টি ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, ‘‘বাংলার মাশরুম যে ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদানেরও উৎস হতে পারে এই গবেষণা সেটাই দেখাল। গবেষণার ফলাফল যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক ও তাৎপর্যপূর্ণ। সেল-লাইনের উপর করা সাফল্য মানুষের শরীরেও (ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে) পাওয়া যাবে, এই আশাই করব। সেক্ষেত্রে এই গবেষণা ক্যানসার চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.