অর্ণব দাস, বারাকপুর: নাগরিক জীবন থেকে এক টুকরো পালিয়ে যাওয়ার ঠিকানা হিসাবে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত জায়গা হয়ে উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা ব্লকের বর্তির বিল। কেবল বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ছোট্ট ট্রিপ, প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের ডেস্টিনেশনই নয়, লকডাউনের সময় থেকে ধীরে ধীরে পরিযায়ী পাখিদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ও হয়ে উঠছে বর্তির বিল। শীঘ্রই বিশাল এলাকাব্যাপী বিলটিকে ‘অ্যাকোয়াটিক বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক’ হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে ব্লক প্রশাসন।
বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসের প্রাক্কালে জানা গেল, শীতের মরশুমে সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া ও হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চল থেকে শীত কাটাতে আসার পাশাপাশি গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং বসন্তকালেও পরিযায়ী পাখিরা বর্তির বিলে আসছে খাদ্যের খোঁজে বা প্রজননের জন্য। পরিযায়ী ও দেশীয় মিলে অন্তত একশোর বেশি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে বর্তির বিলে।
শীতকালে দেখা যায় সাইবেরিয়ান রুবিথ্রোট, ব্লু-থ্রোট, পাইড হ্যারিয়ার, সাইট্রিন ওয়াগটেল, ইউরেশিয়ান হুপো, বান্টিংসের। তেমনই গ্রীষ্মে দেখা মেলে ব্লু-থ্রোটেড ফ্লাইক্যাচার, কমোন ইমেরাল্ড ডাভের। আবার বর্ষাকালেও দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এই বিরতির বিলেই আসে ফেজ্যান্ট টেলড জ্যাকানা, জ্যাকবিন কুকো, ফরেস্ট ওয়াগটেল, কটন পিগমি গুস-সহ ব্ল্যাক বিটারন।
বসন্তকালীন কপারস্মিথ বারবেট, ব্লু-থ্রোটেড বারবেট, লাইনটেড বারবেট, অলিভ ব্ল্যাকড পিপিট, ইউরেশিয়ান রাইনেক পরিযায়ী পাখিও লেন্সবন্দি হয়েছে এই বিলে। এছাড়াও বিরল আবাসিক পাখির মধ্যে এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার, ব্ল্যাক ন্যাপড মোনার্ক, ইয়োলো বেলিড প্রিনিয়া, এশিয়ান ওপেনবিল, ব্লু-টেইলড বি-ইটার, ব্ল্যাক-উইংড কাইট বিচরণ করে এই এলাকায়।
কেবল দেশি-বিদেশি নানা জাতের পাখিই নয়, বেরাবেড়িয়া ও তারাবেড়িয়া পঞ্চায়েতের মাঝে অবস্থিত কমবেশি সাড়ে চারশো একর বিস্তীর্ণ এই জলাভূমিতে পাওয়া যায় একাধিক প্রজাতির মাছ, মেছো বিড়াল-সহ কচ্ছপ ও একাধিক উভচর। কিন্তু দূষণ, জলাভূমিতে পলি জমা, সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কৃষিজমিতে রাসায়ণিক ব্যবহারের ফলে জলজ প্রাণী ও বিলের ধারে গাছ নষ্ট হাওয়ায় পাখিদের নিরাপদ আবাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
তাই বিপন্নতার হাত থেকে বাস্তুতন্ত্রকে সংরক্ষণ করতে বর্তিল বিলকে ‘অ্যাকোয়াটিক বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ব্লক প্রশাসন। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর পাশাপাশি নোয়াই খালের খনন, বিলের আশেপাশের বৃক্ষ সংরক্ষণ-সহ রোপণ করার উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তির বিলকে ইকোট্যুরিজম গন্তব্য হিসাবে তুলে ধরতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় ট্যুর অপারেটর এবং ভ্রমণ সংস্থাগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.