সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আগ্নেয়গিরি জেগে উঠছিল, তা সত্ত্বেও কেন পর্যটকদের সেখানে যেতে দেওয়া হল? হোয়াইট দ্বীপে অগ্ন্যুৎপাতে ঝলসে মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধের প্রাথমিক আঘাত সামলে এই প্রশ্ন এখন সামনে চলে আসছে। এমনকী নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্নও এই প্রশ্ন তুলেছেন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশের মতে, আচমকা একটা আগ্নেয়গিরি জেগে উঠল, কোনও ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন ছাড়াই, এমনটা সাধারণত হয় না। দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকার পর আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার আগে সংকেত পাওয়া যায়। হোয়াইট দ্বীপও কি তেমন কোনও ইঙ্গিত দেয়নি?
সত্যিই কি অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস পাওয়া যায়? আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক বদল সহজে ধরা পড়ে। প্রথম লক্ষ্ণণ, মৃদু ভূমিকম্প। দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক গ্যাস বেরনো। তৃতীয়ত, ভূমির সাময়িক ওঠাপড়া অর্থাৎ আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন মাটি অনেক সময়ে ধসে পড়ে, আবার কখনও তা ফুলেফেঁপে উঠে আসে। মাটির এই পরিবর্তন দেখলে বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন, সেই স্থানে লাভা জমছে, এবার বেরিয়ে আসার পালা। আগামী এক সপ্তাহ থেকে এক মাস, এই সময়ের মধ্যেই অগ্ন্যুৎপাত অবশ্যম্ভাবী। ফলে সময়ের মধ্যে আশেপাশের লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।
অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস বলছে, ১৯৯১ সালে এসব সংকেত পেয়েই ফিলিপিন্সের মাউন্ট পিনাতুবো আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোত থেকে নিরাপদে অন্তত ৫ হাজার জনকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছিল। অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়ার প্রায় ১০ সপ্তাহ আগে থেকে অত্যাধুনিক সিসমোগ্রাফির সাহায্যে ভূপ্রাকৃতিক বিভিন্ন পরিবর্তন টের পেয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আরও জানা যাচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয়বলয়ে অবস্থিত নিউজিল্যান্ড এই অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে অগ্ন্যুৎপাতের আগাম আভাস পেতে বেশ সাহায্য করেছে। এ বিষয়ে তাদের বেশ গর্বও ছিল। ক্যান্টারবুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ বেন কেনেডি বলেন, ”কোনটা সাধারণ ভূমিকম্প আর কোনটা ভূগর্ভের পাতের সংঘর্ষের ফলে হচ্ছে, সেটা আমরা সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারি।”
তাহলে নিজের দেশের বিপদ আগে থেকে কেন টের পেল না দেশটি? বলা হচ্ছে, যেসব আগ্নেয়গিরি অনেক অনেকদিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে, সে কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই দৈত্যের মতো ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে। হোয়াইট দ্বীপের আগ্নেয়গিরিটিও তেমনই ছিল। তাই তার সহসা জেগে ওঠা বোঝা যায়নি। যার জেরে বেড়ানোর আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে পর্যটকদের কাছে। স্নিগ্ধ পরিবেশ দগ্ধ হয়ে যায় লাভাস্রোতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.