সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথা ছিল, বড় বাণিজ্যিক বিমানবন্দর হবে। মেক্সিকোর (Mexico) একেবারে প্রাণকেন্দ্রে খোঁড়া হচ্ছিল ভিত। কিন্তু সে কাজে হাত দিতেই তীব্র চাঞ্চল্য। খননকাজ যত চলছে, ততই বেরিয়ে আসছে বিশাল বিশাল হাড়গোড়, কঙ্কাল। সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠানো হয় বিজ্ঞানী, নৃতত্ববিদদের। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আবিষ্কার করেন, উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল আসলে তুষারযুগের দৈত্যাকার ম্যামথের (Mammoth)। ওই জায়গা আসলে কবরস্থান ছিল।
হাতির পূর্বপুরুষ বলতে যা বোঝায়, সেটাই ছিল ম্যামথ। প্রায় ২৪ হাজার বছর আগে তুষারযুগে (Ice Age) এরা পৃথিবী শাসন করত। লোমশ প্রাণীগুলোর দাঁত ছিল অনেক লম্বা, বাঁকানো আর বেশি ধারাল। কালক্রমে যোগ্যতমের উদ্বর্তন নীতিতে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায় ম্যামথরা। খুব সামান্য হলেও রয়ে গিয়েছে তাদের স্মৃতি। মেক্সিকোর যে জায়গায় নতুন বিমানবন্দর তৈরি হওয়ার কথা, সেটাও তেমনই এক ঐতিহাসিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এই মুহূর্তে। বিমানবন্দরের ভাবনা আপাতত উধাও। ঐতিহাসিক খননকাজ চলছে সেখানে। অন্তত ২০০টি জায়গায় খোঁড়া হয়েছে। প্রতিটি জায়গা থেকেই কোনও না কোনও প্রাণীর শরীরের অংশ উদ্ধার হচ্ছে। সেইসঙ্গে তুষারযুগের অন্যান্য প্রাণীর কঙ্কালও মিলছে। মেক্সিকো সিটিতে ভিড় করে এখন সেসব দেখছেন আশেপাশের বাসিন্দারা।
খননকাজের (Excavation) নেতৃত্বে থাকা নৃতত্ববিদ রুবেন ম্যাঞ্জানিলা বলছেন, “এই জায়গা আমাদের কাছে স্বর্গের মতো। ২৪ হাজার বছর আগে এখানে প্রচুর ঘাসজমি এবং লেক ছিল। খাবার ও পানীয়ের প্রাচুর্য দেখে এখানেই ঘাঁটি গেড়েছিল ম্যামথরা।” তাঁর ধারণা, এরপর সময়ের সঙ্গে পৃথিবী তপ্ত হতে থাকে, হিমবাহ গলতে থাকে। এই এলাকা কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে, শুকিয়ে যায় হ্রদ। আর তাতেই আটকে পড়েন দৈত্যাকার প্রাণীগুলো। কর্দমাক্ত জমির উপর দিয়ে বেশি দূর যেতে না পেরে ধীরে ধীরে সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। এই জায়গায় প্রাচীন যুগের উট, ঘোড়া এবং মহিষের শরীরে অংশও মিলেছে বলে জানিয়েছেন এই নৃতত্ববিদ।
ম্যাঞ্জানিলা মনে করছেন, খননকাজ শেষ হলে যে বিপুল সংখ্যক কঙ্কাল উদ্ধার হবে, তা দিয়ে একটা মিউজিয়াম তৈরি করা যাবে। নতুন বিমানবন্দর তৈরি হলে, তার সঙ্গেই থাকবে সংগ্রহশালা। আর এই মিউজিয়াম আমেরিকা ও সাইবেরিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে সক্ষম। পৃথিবীর এই দুই দেশেই এর আগে প্রচুর সংখ্যক ম্যামথের কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। নৃতত্ববিদের কথায়, ”ধারণা ছিল যে এখানে একসময়ে ম্যামথরা বসবাস করত, তাই তাদের স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া গেলেও যেতে পারে। কিন্তু এত সংখ্য পাব, ভাবতে পারিনি।” অতএব, বোঝাই যাচ্ছে, এই ঘটনার পর মেক্সিকো সিটির ঐতিহাসিক গুরুত্বই পালটে যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.