সুমন করাতি, হুগলি: একসময় এলাকায় হাঁটলেই দেখা পাওয়া যেত ময়ূরের। বাড়ির ছাদ, বাগান, রাস্তা এমনকি জানালার ধারে ময়ূরের অবাধ চলাফেরা এখানে যেন সাধারণ দৃশ্য।
হুগলির পোলবা থানার রাজহাট অঞ্চলের গান্ধীগ্রাম এখন ‘ময়ূরগ্রাম’ নামে পরিচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুটা অস্তিত্ব সংকটে ময়ূররা। নিশ্চয়ই জাতীয় পাখির অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করা হবে বলেই জানান সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কল্যা পরিবার ও গ্রামের মানুষের যত্নে ময়ূরগ্রামে ময়ূরেরা গৃহপালিত প্রাণীর মতোই স্থান পেয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, বনাঞ্চল থেকে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো ময়ূররা খাবারের ডাকে দলে দলে চলে আসে, কিন্তু কোনও ময়ূরই বন্দি অবস্থায় থাকে না। অসুস্থ হলে তারা কল্যা পরিবারের আশ্রয়ে থাকে, আর সুস্থ হয়ে ফিরেও যায় নিজের জায়গায়। কিন্তু পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তন, বনভূমি ধ্বংস, কীটপতঙ্গের অভাব এবং খাবার সংকট ময়ূরদের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলছে। সরকারি কোনও উদ্যোগ না থাকায় কল্যা পরিবার নিজেদের টাকায় চাল, গম কিনে ময়ূরদের খাওয়াচ্ছে। কিছু সহৃদয় ব্যক্তি সাহায্য করলেও বেশিরভাগই শুধু আশ্বাস দিয়ে থেমে যান। গরম এলেই শুকিয়ে যায় এলাকার পুকুর, জলের অভাবে ও গরমে বহুবার ময়ূরদের সানস্ট্রোক হয়েছে এবং তাদেরকে সুস্থ করে আবারও বনভূমিতে ছেড়েছে এই কল্ল্যা পরিবার।
আর এই ময়ূর দেখাশোনা থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কল্যা পরিবারের উপেন কল্ল্যার। তিনি বলেন, “এখানে আগে জমিদার পরিবার ছিল তারা ময়ূর পুষতো। সেখান থেকে বংশবৃদ্ধি হতে হতে ময়ূর এখানে এলাকায় নিজেদের বাসস্থান করে নিয়েছে। আর প্রথম থেকেই এই ময়ূর দের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পড়েছিল আমাদের পরিবারের উপর,তখন আমি অনেক ছোট সেই থেকেই এই ময়ূরদের দেখেই বড় হওয়া, তারপর ময়ূর অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা সবটাই করতে হয়। এখন এই ময়ূর পরিবারের সদস্যদের মতো হয়ে গিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “খাবার সময় বাড়ির সামনে এসে ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। ময়ূরগুলো এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বন জঙ্গলেই থাকে। এখানে ময়ূর কোথাও আটকে রাখা হয় না। এখনকার সময়ে প্রায় চার থেকে পাঁচশো ময়ূর রয়েছে সম্পূর্ণ এলাকাজুড়ে। আর এখন এদের মূল সমস্যা হচ্ছে খাদ্য সমস্যা। একেকটা ময়ূরের প্রত্যেক দিন প্রায় ৫০০ থেকে ১ কেজি গম লাগে। কিন্তু এখন অত গম পাওয়া যায় না তাই গমের সাথে চাল মিশিয়ে খেতে দেওয়া হয়। আর অনেক জায়গায় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে তাই এদের থাকার আর প্রাকৃতিক খাবারের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের পরিবার থেকেই এদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্যে ময়ূরদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। আর ময়ূরদের সুরক্ষা ব্যবস্থাটাও দেখা দরকার। কারণ, অনেক জায়গায় চোরাশিকারির ভয় রয়েছে। আর জেলার যে বনদপ্তরের আধিকারিকরা আছে তাদের অনেকবার জানানো হয়েছে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এছাড়াও এই ময়ূর অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসা করতেও খরচ রয়েছে। কিছুটা হয়তো সাহায্য মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়।”
তবে ময়ূরের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অসাধু লোকের উৎপাতও শুরু হয়েছে-ডিম ও বাচ্চা চুরি, পাখিদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটছে। কল্যা পরিবার প্রশাসনের সহায়তায় কিছুটা ব্যবস্থা নিলেও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি। হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, অবশ্যই আমি এ বিষয় নিয়ে দেখব এবং আগামী দিনে মুহূর্ত যাতে সুরক্ষিত করা যায় সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.