সৌরভ মাজি, বর্ধমান: আবার বছর কুড়ি পর! রুপোলি শস্যের দেখা মিলল পূর্ব বর্ধমানের দামোদর নদে। এক কেজিরও বেশি ওজন ইলিশ পেয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল মাছের আড়তে। শুরু হল নিলাম। দাম উঠল ২ হাজার টাকা প্রতি কেজি। শেষ পর্যন্ত ২১০০ টাকায় সেই মাছটি বিক্রি হয়। পুজোর মরশুমে এ এক আনন্দদায়ক ঘটনা তো বটেই। সেইসঙ্গে দামোদরের বুকে ইলিশের অনুপস্থিতির খরাও কাটল দু দশক পর।
বর্ষার মরশুমে বাঙালি অপেক্ষায় থাকে ইলিশের। ওপার বাংলার পদ্মার ইলিশ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তবে গঙ্গা (হুগলি বা ভাগীরথী)-র ইলিশেই মন ভরে যায় ইলিশপ্রিয় বাঙালির। এছাড়া দিঘা-সহ কয়েকটি জায়গায় সামুদ্রিক ইলিশ পাওয়া যায়। আবার বিভিন্ন নদনদীর মোহনায় ব্যাপক পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যায় বর্ষাকালে। রূপনারায়ণের মোহনা কোলাঘাট, হলদি নদীর মোহনা। দামোদরের মোহনা হাওড়া জেলায় যেখানে ভাগীরথী মিশেছে সেখানে এই নদ, বর্ষায় সেখানেও ইলিশ মেলে। কিন্তু সেই মোহনা থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার নদীপথ দূরে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ইলিশের দেখা মেলেনি সাম্প্রতিক কালে। অন্তত ২০ বছর তো হবেই।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের উত্তর মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা তপন বিশ্বাস পেশায় মৎস্যজীবী। বৃহস্পতিবার রাতে জামালপুর ও শুঁড়ে কালনার মাঝামাঝি এলাকায় দামোদরে মাছ ধরছিলেন। তাঁর জালে ধরা পড়ে প্রায় ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশটি। শুক্রবার জামালপুরের বাসস্ট্যান্ড পাইকারি মাছ বাজারে নিয়ে আসেন ওই মৎস্যজীবী। দামোদরের টাটকা ইলিশ ধরা পড়ার খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। মৎস্যপ্রেমী অনেকে ভিড় করেন তাজা ইলিশ কিনতে। শেষ পর্যন্ত রুপোলি শস্যর নিলাম শুরু হয় প্রভাত পাত্রর আড়তে। ২১০০ টাকায় বিক্রি হয় মাছটি। সৌভাগ্যবান ক্রেতা লক্ষ্মণ বিশ্বাস। দীর্ঘকাল পরে দামোদরের মৎসীজীবীর জালে ইলিশ ধরা পড়াটাই এখন সর্বত্র আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
মৎস্য দপ্তর অবশ্য জানাচ্ছে, ঘটনাটি অবাক হওয়ার মতো নয়। ইলিশ নোনা জলের মাছ। তবে ডিম পাড়ার মরশুমে মিষ্টি জলে চলে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। জামালপুরের মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক নিত্যানন্দ মণ্ডল বলেন, “ইলিশকে অ্যানাড্রোমাস মাইগ্রেটরি ফিশ বলা হয়। অর্থাৎ ডিম পাড়ার সময় সমুদ্র থেকে নদীতে প্রবেশ করে। যদি গঙ্গা-পদ্মায় ইলিশ পাওয়া যায়, তাহলে দামোদরে পাওয়া যাওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইলিশ মাছ অনেক দূর পর্যন্ত মাইগ্রেট করে। পরিযায়ী মাছ বলা চলে।” সমুদ্র থেকে ইলিশ ভাগীরথী হয়ে দামোদরে আসছে। এটা ভালো লক্ষণ এখানকার মৎস্যজীবী ও ভোজনরসিকদের কাছে। নিত্যানন্দবাবুর কথায়, “২০-২২ বছর আগে এখানে দামোদরে ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। বছর কুড়ি পর আবার মিললো। মাইগ্রেট করে ফের দামোদরের দিকে ইলিশ মাছ আসছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও আসবে। আর ইলিশ মাছ সাধারণত ঝাঁকে থাকে। এক মৎস্যজীবী একটা পেয়েছেন। হয়তো আরও পাওয়া যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.