সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘জুরাসিক পার্ক’ উপন্যাস ও সিনেমা একটা সারকথা বুঝিয়ে দিয়েছিল। জীবন তার রাস্তা ঠিকই করে নেয়। সেই কাল্পনিক কাহিনিকে বিজ্ঞানীরা উড়িয়ে দিলেও এই সত্যকে বোধহয় আর অস্বীকার করতে পারবেন না। সাইবেরিয়ার (Siberia) তুষারাবৃত জগতে চাপা পড়ে থাকা প্রাণ আবারও খুঁজে নিল ফিরে আসার পথ। ২৪ হাজার বছর বেঁচে উঠল আণুবীক্ষণিক প্রাণী (Micrscopic animal)! ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই নয়া গবেষণার কথা।
সেই গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বরফের চাদরের নিচে মাটির গভীরে চাপা পড়ে থাকা সেই অদৃশ্যপ্রায় প্রাণকণাদের কেবল বাঁচিয়ে তোলাই হয়নি, গবেষণাগারে তারা নিজেরাই উৎপন্ন করেছে নিজেদের ক্লোনও। এই জীবগুলির নাম ‘ডেলয়েড রটিফার’ (Bdelloid Rotifers)। এদের মুখে চাকার মতো গোল আকৃতির চুলের অস্তিত্বের জন্য ‘চাকা প্রাণী’ও বলে। এরা বহুকোষী আণুবীক্ষণিক প্রাণী। সাধারণত এরা জলেই থাকে। গত ৫ কোটি বছর ধরেই এরা পৃথিবীতে রয়েছে। মনে করা হয়, অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যেভাবে এরা বেঁচে থাকতে পারে, সম্ভবত মানুষের অবললুপ্তির পরেও পৃথিবীতে টিকে থাকবে।
গবেষকরা আগেই দেখেছিলেন, মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও এরা টিকে থাকে। বরফে জমাট বাঁধা অবস্থাতেও কাটিয়ে দিতে পারে বছরের পর বছর। তারপর শীতঘুমের অচৈতন্যতা কাটিয়ে ফের জীবিত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেটা সর্বাধিক ১০ বছর বলেই মনে করা হত এতদিন। কিন্তু বিজ্ঞানীদের সেই ধারণা এবার ভেঙে গেল।
গবেষকরা জানাচ্ছে, ২৪ হাজার বছরের ব্যবধান পেরিয়ে তাদের ‘নিদ্রা’ভঙ্গ করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়ার এই বাসিন্দারা কেবল জেগেই ওঠেনি, বংশবিস্তারও শুরু করে দিয়েছে। অযৌন জনন পদ্ধতিতে নিজেদের ক্লোন উৎপাদন করেছে তারা।
কিন্তু কী করে এত কম উষ্ণতাতেও নিজেদের শরীরে প্রাণের চিহ্ন বজায় রাখতে পারে তারা? বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রাণীদের মধ্যে এমন বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে যারা নিজেদের কোষকে অত্যন্ত কম উষ্ণতাতেও বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
বহুকোষী প্রাণীরা যে এভাবে এত সুদীর্ঘ বছর পেরিয়েও টিকে থাকতে পারে, তা জানতে পেরে বিজ্ঞানীরা বিস্মিত। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে আগামী দিনে জিন গবেষণা ও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও গবেষণার নতুন দিগন্ত আবিষ্কৃত হতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.