সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জল-বাতাসে ভেসে ভেসে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত যেন মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হচ্ছে একটি ভাইরাস। সুমেরুর স্থায়ী সদস্য ভোঁদড় কিংবা সিলদের শরীরে ঢুকে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে শুষে নিচ্ছে তাদের প্রাণবায়ু। ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে হাজার হাজার সিল। সম্প্রতি এই ছবি দেখে চিন্তার ভাঁজ পরিবেশবিদদের কপালে।
ভিলেনের নাম ফোসিন ডিসটেম্পার ভাইরাস বা পিডিভি। বছর তিরিশ আগে এই ভাইরাসের সংক্রমণ উত্তর আটলান্টিক সমুদ্রের তেইশ হাজার সিলের প্রাণ কেড়েছিল। এই জলভূমিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল সিলেরা। ২০০০ সালের পর সেই একই ভাইরাস মিলেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার বাসিন্দা মৃত সিল, ভোঁদড়দের শরীরে। তাতে বেশ বিস্মিত হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। পরে গবেষণার রিপোর্ট দেখে অবশ্য তাঁরা বুঝতে পারেন, সব কিছুর জন্য দায়ী বিশ্ব উষ্ণায়ন। সুমেরুর বরফ গলছে, সেই বরফগলা জলের প্রবাহে ভাইরাস এসে মিশছে তাতে। এভাবেই এক বৃত্ত থেকে আরেক বৃত্তে বাহিত হয়ে চলেছে পিডিভি। আর অন্যান্য জলচর প্রাণীর দেহে বাসা বাঁধছে এই ভাইরাস।
কতটা বিপজ্জনক বা কতটা সংক্রমক এই ভাইরাস? বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রথমে ভাইরাসটি শরীরে ঢুকে প্রাণীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তারপর সেখান থেকে নিউমোনিয়া বা জন্ডিস। এরপর ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যু। ‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর শরীরেই বাসা বাঁধছে পিডিভি। যে এলাকায় সমুদ্র যত উন্মুক্ত, সেখানে তত বেশি ভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের আশা, পিডিভি সংক্রমণ এত ব্যাপক হারে হতে শুরু করলে, সেইমতো প্রতিরোধী হয়ে উঠবে সামুদ্রিক প্রাণীরাও। আর অন্য পক্ষের আশঙ্কা, মহামারীর মতো পিডিভি ছড়িয়ে পড়ায় বিপন্নতা বাড়ছে জলচরদের। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নই যে পিডিভির বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীমহলের কোনও মতানৈক্য নেই। তাহলে কি বরফঢাকা সমুদ্রে সিল কিংবা সমুদ্রের পাড়ে ভোঁদড়দের দেখা যাবে না? এই প্রশ্নও মাথাচাড়া দিচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.