ফাইল ছবি।
সম্যক খান, মেদিনীপুর: মিশন কমপ্লিট। এবার ঘরে ফেরার পালা। টার্গেট ছিল দিন সাতেকের। কিন্তু মাত্র চারদিনেই কাজ শেষ হয়ে গেল। পশ্চিম মেদিনীপুরের হাতি তাড়ানো বিশেষজ্ঞ হুলাপার্টির দুটি হাতিকে ফিরিয়ে আনল মধ্যপ্রদেশ থেকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের হাতি তাড়ানোয় সিদ্ধহস্ত বাপি মাহাতোর নেতৃত্বে গত রবিবার ১৪ জনের একটি দল জেলা ও রাজ্য ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিল সুদূর মধ্যপ্রদেশে।
গত একবছর ধরে সেখানকার বনকর্তাদের একপ্রকার নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছিল ছত্রিশগড় (Chattisgarh) থেকে আসা দুটি হাতি। ওই দুটি হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে হাতি দুটিকে কেন্দ্র করে। বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাবাসীকে হাতি (Elephant) আতঙ্ক এতটাই গ্রাস করেছিল যে মানুষজন নিজের বাড়িতে থাকতেও ভয় পেতেন। এমনকি পাকাবাড়ির একতলাতেও থাকতেন না। দোতলায় বা ছাদে ত্রিপল খাটিয়ে তাঁরা রাত্রিযাপন করতেন। ‘বিগড়ে’ যাওয়া দুটি হাতিকে তাদের মূল জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রথমে ডাক পড়েছিল কর্ণাটকের হুলাপার্টির। তারা লঙ্কার ধোঁয়া দিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কর্ণাটকের টিম হাতি তাড়াতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীকালে মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) বনকর্তারা খবর নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর (West Midnapore)জেলার হুলাপার্টির সন্ধান পান। বাপি মাহাতোর সঙ্গে কথাবার্তাও হয়। বাপির দলের সদস্যরা ভেবেছিলেন, দুদিনেই তাঁরা হাতি দুটিকে তাড়িয়ে দিতে সমর্থ হবেন।
কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখেন এখানকার জঙ্গলের সঙ্গে সেখানে কোনও মিল নেই। মধ্যপ্রদেশের যেখানে হাতি দুটির অবস্থান ছিল সেই অনুপপুর ডিভিশনের জাইথারি রেঞ্জ এলাকা জঙ্গল পুরো পাহাড়ে ঘেরা। তাড়ালেই হাতি দুটি পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়ছে। তার উপর হাতি যে রুটে ঢুকেছে সেই রুটে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ফাঁকা চাষজমি (Farm land) আছে। জঙ্গলের কোনও চিহ্নই নেই। সেই ফাঁকা এলাকা পার করানোটাও ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তখন সাতদিনের টার্গেট নেওয়া হয়। সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল গোটা দল। কিন্তু সুবিধা হয়ে যায় হাতি দুটি ফিরে যাওয়ার জন্য একই রুট না ধরায়। হাতি তাড়ানো তথা ড্রাইভ দেওয়ার সময় হাতি দুটি ক্রমশঃ জঙ্গলপথ ধরে পাহাড়ের দিকে এগোতে থাকে। ওই পথ ধরেই প্রায় ২০ কিলোমিটার গিয়ে মধ্যপ্রদেশ সীমান্ত থেকে ছত্রিশগড়ের দিকে হাতি দুটিকে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। বাপি মাহাতো বলেছেন, জঙ্গল ও পাহাড়িয়া পথ ধরায় তাদের ড্রাইভও অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
গত বুধবারই দুপুরের মধ্যেই তাঁরা সাফল্য পেয়ে যান। সময় লেগেছে মাত্র চারদিন। হাতি তাড়ানোর পর এবার এই হাতিদের ঘরে ফেরার পালা। বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে তাঁরা ট্রেনে উঠেছেন। শুক্রবার জেলায় পৌঁছন। বাপির কথায়, মধ্যপ্রদেশের বনকর্তারা তাঁদের সঙ্গে খুবই ভালো ব্যবহার করেছেন। টিমের প্রশংসাও করেছেন। যথাযথ পারিশ্রমিকও দিয়েছেন। বনকর্তাদের আতিথেয়তায় খুশি তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.