নব্যেন্দু হাজরা: ছোটবেলার ‘বিদ্যুৎ-পাঠ’ বুঝি ভুল! মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়, বাজ পড়ে। কিন্তু সত্যিই কি তাই! তা হলে হঠাৎ করে বছর কয়েক ধরে বজ্রপাতের সংখ্যা এত বাড়ল কেন? মেঘ কি হঠাৎ একে অপরকে ধাক্কা মারা বাড়িয়ে দিল নাকি! না হলে কেনই বা গত দু’দিনের ঝড়ে এত মানুষের প্রাণ গেল বজ্রপাতে (Lightning)? কারণ জানালেন আবহবিদ এবং পরিবেশবিদরা।
আবহবিদ ও পরিবেশবিদদের কথায়, এর অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে দূষণ (Pollution)। গাছ কেটে বহুতল নির্মাণ, গাড়ির ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া, যেখানে সেখানে বছরভর নির্মাণকাজ চলতে থাকায় অত্যধিকমাত্রায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সেই তুলনায় গাছ লাগানো হচ্ছে না। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে বাতাসে গরম ধূলিকণা বাড়ছে, যা বজ্রপাতের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। এদিকে বাতাসের উপরের পরিমণ্ডলে বর্ষার আগে পরে মে-জুন মাস নাগাদ প্রচুর জলীয় বাষ্প থেকে যাচ্ছে। যখনই উষ্ণ বায়ু উপর দিকে ওঠার চেষ্টা করছে, তখনই অন্যান্য বায়ু ও জলীয়কণার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। ফলে একেকটা জলীয় কণা ব্যাটারির মতো কাজ করছে। বাজ পড়ছে।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়। সেই কারণে এই মেঘকে বজ্রগর্ভ মেঘও বলা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে এপ্রিল-জুন মাসে বাংলায় এই বজ্রগর্ভ মেঘের পরিমাণ বেড়েছে। তার একটা অন্যতম কারণ যেমন বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য, তেমনই আর একট কারণ, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দূষণ। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা তত বাড়ছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া একটা ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থেকে যায়। এখন বাংলাতেও তাই হয়েছে। কারণ, কিছু দিন আগেই ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়েছিল অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় যশ বা ইয়াস। ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে রাজ্যে। সেই সঙ্গে মে মাস থেকেই বাংলায় তাপমাত্রা বেড়েছে। সকাল ও দুপুরের দিকে তীব্র গরম। সব মিলিয়ে স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ রয়েছে এখানে। আর তার ফলেই প্রায় প্রতিদিন বিকেলের পরে শুরু হচ্ছে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি।
আবহবিদরা জানিয়েছেন, এই কিউমুলোনিম্বাস মেঘের গভীরতা সাধারণত খুবই বেশি। যেমনটা সোমবার তার গভীরতা ছিল ১২ কিলোমিটার। এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরওলজির বিজ্ঞানী প্রমিত দেববর্মন বলেন, “ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে। পরিবেশে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা আগের থেকে অনেক বেশি থাকছে। ফলে বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে। এই বজ্রপাত সাধারণত অল্প জায়গায় মধ্যে ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড’ অর্থাৎ মেঘ থেকে মাটির দিকে হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.