Advertisement
Advertisement
Rohit Sharma

টেস্ট ক্রিকেট আপনাকে পেল না রোহিত…!

রোহিতের জন্য পড়ে রইল কেবল পঞ্চাশ ওভারের ওয়ানডে।

A write up on Rohit Sharma
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 7, 2025 11:39 pm
  • Updated:May 7, 2025 11:39 pm  

বিশ্বদীপ দে: ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে যখন দিনভর উত্তেজনা দেশভর, তার মধ্যেই খবরটা ভেসে এল। সাদা পোশাক, লাল বলের সনাতনী টেস্ট ক্রিকেটের বাইশ গজে আর দেখা যাবে না রোহিত শর্মাকে। ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর বিরাট কোহলির সঙ্গে মিলে একযোগে অবসর ঘোষণা করেন ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ থেকে। এবার বিদায় জানালেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ফর্ম্যাটকেও। পড়ে রইল কেবল পঞ্চাশ ওভারের ওয়ানডে।

একটা ব্যক্তিগত স্মৃতি ঘাই মারছে মগজে। শচীনের ফেয়ারওয়েল সিরিজে ইডেন গার্ডেনসে রোহিতের টেস্ট অভিষেক। তাঁর ১৯৯তম টেস্টে সামান্য রানে ফিরে যাওয়ায় দর্শকরা যখন হতাশ, তখন রোহিত তাঁদের মন ভরিয়ে দিয়েছিলেন ১৭৭ রানের ইনিংসটি খেলে। যা প্রথম টেস্ট ইনিংসে ভারতের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের নিরিখে শিখর ধাওয়ানের (১৮৭) পরেই। সেই খেলা গ্যালারিতে বসে দেখার সময় মনে হয়েছিল টেস্টে এক নতুন নায়কের জন্ম হল। শচীনের প্রস্থানপর্বে রোহিতের অভিষেকে ছিল এমনই এক মহাকাব্যিক মেজাজ।

Advertisement
Team India to tour England without Virat-Rohit! What did the board secretary say?
ফাইল ছবি

এরপর দ্বিতীয় টেস্টেও রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছিল ১১১ নটআউট। স্বাভাবিক ভাবেই মনে হয়েছিল টেস্ট দলেও নিয়মিতই খেলবেন তিনি। কিন্তু ২০১৭-১৮ মরশুম থেকে দলেই আর জায়গা হয়নি তাঁর। বছর দুয়েক পরে ফিরে এলেও সেই অর্থে টেস্টে যেন কখনওই সেই খেলাটা খেলতে পারলেন না রোহিত। যদিও ৬৭ টেস্টে ১২টি শতরান (গড় ৪০.৫৭)-সহ ৪৩০১ রান- খারাপ কী! তবুও ওয়ানডে বা টি২০-র অলৌকিক সাফল্যের রেশ এখানে নেই।

কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। চল্লিশ গড় নিয়ে খেলা কোনও ব্যাটসম্যানের হাসতে হাসতে একশো টেস্টের বৈতরণি পেরিয়ে যাওয়ার কথা। তার চেয়েও বড় কথা, স্ট্রাইক রেট-সর্বস্বতা ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানকে যে ‘নিষ্ঠুর সংহারকে’র চেহারা দিয়ে সেখানে আশ্চর্য ব্যতিক্রম রোহিত। অথচ আক্রমণে তাঁর মতো আর ক’জন আছেন? টেস্টে তিনি ছক্কা মেরেছেন ৮৮টি! এক বীরেন্দ্র শেহওয়াগ ছাড়া আর কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানের এই কৃতিত্ব নেই। ক্রিকেটের শুদ্ধতম ফর্ম্যাটেও রোহিতের ব্যাট কেমন চলত এই পরিসংখ্যানটুকুই তা বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু চালিয়ে খেলার নামে তথাকথিত অক্রিকেটীয় শট তিনি খেলেননি। মুগ্ধ করেছেন এমসিসির ম্যানুয়ালে থাকা সোজা ব্যাটের সরল ক্রিকেটেই। হ্যাঁ, ক্রস ব্যাটে পুল নিশ্চয়ই মেরেছেন। সেখানেও ঔদ্ধত্যের ঝলকানি নয়, যেন এক আশ্চর্য বাদশাহি মেজাজ।

Rohit is retiring from Tests! Is it a big decision to get hints of being dropped?
ফাইল ছবি

প্রতিটি শটেই বাড়তি সময় পেয়ে যান রোহিত। ফলে বাড়তি এলিগ্যান্স যোগ হয়ে যায়। আসলে স্রেফ ‘সহজ সুরের’ ক্রিকেটারই নন, রোহিত বুঝি এক ক্রিকেট-দার্শনিকও! জীবনকে দেখার সহজ চোখেই ক্রিকেটকে চিনেছেন। মজার হল, সেটা দিব্যি সঞ্চারিত করে দিতে পেরেছেন দর্শকদের মধ্যেও। গ্যালারিতে হোক বা টিভি-মোবাইলের পর্দায়- সব সময়ই মনে হয় চার-ছয় মারা ক্রিকেটের সবচেয়ে সহজতম কাজ। এমন খেলোয়াড়ের অবসরের গান শুনতে কার ভালো লাগে? ওয়ানডে ক্রিকেট আর বছরে ক’টা হয়? আশি-নব্বই মায় নতুন সহস্রাব্দের শুরুর দশকের সেই উন্মাদনা হারিয়ে ফেলেছে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট। কেবল সেখানেই আপাতত লেগে রইল রোহিত-পরশ। অর্থাৎ অবসরের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনুরাগীদের মনে অভিমান রয়ে গেল। এত অল্পে টেস্ট কেরিয়ার শেষ করার কথা ছিল না রোহিতের।

নিন্দুকরা বলবেন, রোহিতের টেস্ট-জারিজুরির পুরোটাই প্রায় দেশের মাটিতে। বারোটি শতরানের দশটিই দেশের মাটিতে। বিদেশে যেখানে গড় মাত্র একত্রিশ, দেশের মাঠে তা পঞ্চাশের উপরে। সত্যি বলতে বিদেশের মাঠে একমাত্র ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২৭ ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেননি রোহিত। কিন্তু সব কিছু কি পরিসংখ্যানে থাকে? ২০১৩ সালে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল রোহিতের। অথচ তার আগেই তো তিনি অন্য ফর্ম্যাটে যথেষ্ট সফল। কেন টেস্টে এত পরে সুযোগ মিলল তবে? আর যখন মিলল তখনও তাঁকে নিয়মিত হতে দেওয়া হল না! শচীন-রাহুল-সৌরভ-লক্ষ্মণ-শেহওয়াগদের পরে কোহলির সঙ্গে যে নামটি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অবধারিত এক স্তম্ভ হয়ে উঠেছিল, তিনি রোহিত। অথচ সেই ক্রিকেটারটিকে টেস্টে দেশের হয়ে নিজেকে পুরোটা নিংড়ে দেওয়ার সুযোগ হল না, অনুরাগীদের এহেন অভিমানকে কিন্তু এড়ানোও যাবে না।

আসলে রোহিত শর্মা মানে সামগ্রিক ভাবেই একটা অসামান্য চরিত্র! দর্শক মাঠে কেবল দলের খেলা দেখতে আসে না। আসে চরিত্রদের দেখতে। ঠিক যেমন বিরাট কোহলি। তিনি শূন্য রানে আউট হলেও ফিল্ডিংয়ের সময় তাঁর দিকেই চোখ চলে যায়। রোহিতও তেমনই। কিছুটা অগোছালো। কিছুটা যেন ভোলাভালা এক মানুষ। কথা বলতে গিয়ে অনেক সময়ই সঠিক নাম মনে আসে না। ধোনির জন্মদিনে কী শুভেচ্ছা জানাবেন এই প্রশ্নে তাই তিনি বলে দিতে পারেন, ”কী আর বলব? হ্যাপি বার্থডে বলব।” বাইশ গজেও এই মনটা নিয়ে খেলে গিয়েছেন রোহিত। সহজতাই তাঁর আসল শক্তি। ব্যাটের ঠিক মাঝখানে লেগে যখন বল ছুটতে থাকে বা উড়তে থাকে, তখন বোঝা যায় এই সহজতার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অনন্ত শক্তির ভাণ্ডার।

অবসরের প্রশ্নে বলে দিয়েছিলেন, দুই সন্তানের পিতা জানে কখন সরে যেতে হবে। শেষপর্যন্ত নিখুঁত ‘টাইমিং’য়ে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা মারার মতো করেই অবসরের সরণিতে হাঁটলেন ‘শর্মাজি কা বেটা’। হয়তো ছেলেবেলার লড়াই তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিল হিসেব করেই চলতে হবে। কিন্তু তার জন্য শক্ত গ্রীবা থাকার প্রয়োজন নেই। বরং সহজ সত্যিকে সহজে বুঝে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। রোহিত শর্মা একজন ক্রিকেটার মাত্র নন। ক্রিকেটধর্মে দীক্ষিত এদেশের মানুষের কাছে তিনি যেন এক দার্শনিকও। যিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, জীবন সহজ। তাকে অযথা জটিল না করাটাই জীবনকে সফল করে তোলার আসল বীজমন্ত্র। তাই সময়মতো সরে গেলেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে। তাঁর অনুরাগীদের আফশোসের সুর কি তাঁর মাথাতেও রয়েছে? হয়তো। হয়তো নয়। রোহিত জানেন, যেটা ছাড়ার তাকে ছেড়েই দিতে হয়। ‘যাক, যা গেছে তা যাক’। ক্রিকেটকে, আসলে জীবনকে যে এভাবেই দেখেন ‘শর্মাজি কা বেটা’।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement