ছবি: প্রতীকী
দীপক পাত্র: একদিকে অভাবের তাড়না। অন্যদিকে কোভিড-১৯ থেকে বড় শিক্ষা পাওয়া। তাই নতুন জগৎতে দেখার সুযোগ পেয়ে গেলেন প্রশান্ত ঘোষ।
সিএবি-তে নম্বর ওয়ান গ্রেডের আম্পায়ার দু’বছর আগেও তিনি সিএবি লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলিয়েছেন। আউটডোরের সঙ্গে ইন্ডোর ক্রিকেটেও তাঁর ডাক পড়ত সকলের আগে। অথচ আজ অভাবে সংসারে তাঁকে নেমে পড়তে হয়েছে বাজারে। কখনও বিক্রি করছেন সবজি, কখনও বা ফল। আম্পায়ার প্রশান্ত ঘোষের এটাই আপাতত দিনান্তের ঠিকানা। সিএবি ১৫ হাজার টাকা প্রত্যেক আম্পায়ারকে দিয়েছে। নিয়ম হল, মরশুম শেষে আম্পায়ারদের খেলানোর হিসাব কষে অর্থ মিটিয়ে দেওয়া। এবার যেহেতু মরশুম মাঝপথে ভেস্তে গিয়েছে তাই হিসাবও হয়নি। তাই বলে চারটে পেট থেমে থাকবে কেন? স্ত্রী ও দুই সন্তানের বাবা প্রশান্ত তাই নেমে পড়েছেন বাজারে।
বারুইপুরের অদূরে শিখরবালি গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্তবাবু বলছিলেন, “প্রথমদিকে একটু কষ্ট হচ্ছিল। গ্রাম থেকে কাঁচা আনাচ সংগ্রহ করে বারুইপুরের কাছারি বাজারে বিক্রি করতাম। এখন লিচু উঠেছে। তাই নিয়ে বসে পড়ছি। আরে বাবা সংসার চালাতে হবে তো। কী আর করা যাবে।”
বাংলার ক্রিকেট সংস্থা ঘরোয়া লিগ খেলালে ম্যাচপিছু দেয় ১৬৫০ টাকা। আগে সারা মরশুমে ১২০ থেকে ১২৫ দিন সাদা পোশাক পরার সুযোগ পেতেন। প্রতি বছর এখন পরীক্ষা দিয়ে প্যানেলে নতুন সব আম্পায়ার চলে আসছেন। ফলে খেলানোর সংখ্যা কমছে প্রতিষ্ঠিত আম্পায়ারদের।
“গত দু-তিন বছর ৭০ থেকে ৭৫ টা ম্যাচ খেলানোর সুযোগ পাই। এমনিতেই রোজগারের অর্থ কম ছিল। কিন্তু টিকেছিলাম ইন্ডোর ক্রিকেটের জন্য। ই-মল, বৈশাখী মল, স্প্রিংক্লাব-সহ এই শহরে প্রচুর জায়গায় ইন্ডোর ক্রিকেট হয়। এখানে ভাল আয় হত। এবার তাও বন্ধ। সবকিছু যেন সামনে থেকে হারিয়ে যেতে লাগল।” বলছিলেন প্রশান্তবাবু।
নিজস্ব লিচু বা পেয়ারা বাগান থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বড় শিক্ষা পেয়েছেন প্রশান্ত। কী! “আমরা দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকের দল। তাই এই পরিস্থিতি একটা শিক্ষা দিয়ে গেল। কোনও একটা রোজগারের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। বিকল্প ব্যবস্থা রাখা দরকার। মাঠ কোনওদিন ছাড়তে পারব না। তাই ঠিক করেছি বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে আনাজ ব্যবসায় মন দেব। তাতে আর যাই হোক না খেয়ে মরতে হবে না।” অকপট প্রশান্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.