রনজিতে ব্যর্থ বাংলা দল। ফাইল চিত্র
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্বল কেরলের (Kerala) কাছে ১০৯ রানে কুৎসিত হার। ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘ভীষ্ম’ পর্যায়ে চলে যাওয়া জলজ সাক্সেনার স্পিন বোলিংয়ের (যিনি দু’ইনিংস মিলিয়ে তেরো উইকেট নিলেন) কাছে ন্যক্কারজনক আত্মসমর্পণ। গ্রুপের এক ম্যাচ বাকি থাকতে রনজি ট্রফিতে (Ranji Trophy) নকআউট যাত্রার স্বপ্ন ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া। যার পর ভয়ংকর সমস্ত অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে বঙ্গ ক্রিকেটকে ঘিরে।
ওয়াকিবহাল মহলের অভিযোগ, পরিষ্কার ‘পাইয়ে দেওয়ার’ রাজনীতি চলছে বাংলা (Bengal Cricket) ক্রিকেটে! উঠছে সিএবি-রই এক শীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধে!
ঠিক কী ঘটেছে?
কেরলের বিরুদ্ধে রনজি ট্রফির জীবন-মৃত্যুর ম্যাচে রণজ্যোৎ সিং খাইরাকে খেলায় বাংলা। অভিমন্যু ঈশ্বরণের সঙ্গে তিনি ওপেন করেন ম্যাচে। এবং দু’ইনিংসে যিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ বললেও কিছু বলা হয় না। জীবনের প্রথম রনজি ট্রফি ম্যাচে নেমে রণজ্যোৎ প্রথম ইনিংসে করেছেন ৬। দ্বিতীয় ইনিংসে ২। দোষটা রণজিতের নয়। জীবনের প্রথম রনজি ম্যাচে সবার পক্ষে শোরগোল ফেলে দেওয়া সম্ভব হয় না। দোষ সেই সিএবি শীর্ষকর্তার, যিনি ‘ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি’-র লোভে টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিয়ে রণজ্যোতকে ঢুকিয়েছেন। কারণ, রণজ্যোৎ তাঁর ক্লাবের ক্রিকেটার!
শোনা গেল, সিএবি-র এই শীর্ষকর্তা প্রায়ই দল নির্বাচনী বৈঠকে চলে যান। গিয়ে বসে থাকেন। অথচ নির্বাচনী বৈঠকের আহ্বায়ক আদতে সচিব। নির্বাচনী বৈঠকে উপস্থিত থাকা সচিবের অধিকারভুক্ত। তাঁর অধঃস্তন কর্তাদের নয়। অথচ সংশ্লিষ্ট এই কর্তা (যিনি নানাবিধ ক্রিকেটীয় ‘ছল-চাতুরি’-কে হাতিয়ার করে কম বাজেটে ক্লাব টিম করিয়ে নেন) দিব্য ঢুকে পড়েছেন নির্বাচনে বৈঠকে। অভিযোগ, চাপ দিয়ে নিজের ক্লাব প্লেয়ারকে বাংলা স্কোয়াডে ঢুকিয়েছেন। যা নিয়ে সম্প্রতি দলের এক সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর খটাখটিও লেগে যায়। সেই ক্রিকেটার সংশ্লিষ্ট সিএবি শীর্ষকর্তাকে সরাসরি প্রশ্নও করেন যে, কোন অধিকারে তিনি বৈঠকে?
দাঁড়ান, এখানেই শেষ নয়। ওয়াকিবহাল মহল ভ্রূ কুঁচকোচ্ছে আরও একটা বিষয় নিয়ে। বলাবলি চলছে, ইডেনে ঘরের মাঠে আঠারো জনের স্কোয়াড নিয়ে নেমেছিল বাংলা। যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। সন্দিহান ভাবে বলা হচ্ছে, ‘বেনোজল’ আমদানি করতে স্কোয়াড অহেতুক টেনে বাড়ানো হয়নি তো? ‘পাইয়ে দেওয়া’ কেউ ছিল না তো?
এটা ঘটনা যে, গোটা রনজি মরশুম ধরে প্রধান ক্রিকেটারদের অভাব ভুগিয়েছে বাংলাকে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ, শাহবাজ আহমেদ, আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার–কাউকে পুরো সময়ের জন্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মুকেশ-আকাশকে যে আর পাওয়া যাবে না সে ভাবে, জানত বাংলা। তা হলে তাঁদের ব্যাকআপ পেসার তৈরি করা হয়নি কেন আগেভাগে? অশোক দিন্দা ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পর তো বাংলার দু’বার রনজি ফাইনালে যেতে সমস্যা হয়নি। আকাশ-মুকেশরা তো দিন্দার শূন্যতা ভরাট করে দিয়েছিলেন। তা হলে?
কেউ কেউ বলছেন, এর নেপথ্যে বাংলার ধসে পড়া সাপ্লাই লাইন। অনূর্ধ্ব ২৩, অনূর্ধ্ব ১৯–সর্বত্র শনির দশা চলছে বাংলার। এ দিন মুম্বইয়ের কাছে ১৭৫ রানে হেরেছে বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ দল। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলা অলআউট হয়ে গিয়েছে মাত্র ৪৬ রানে! অভিযোগ, অনূর্ধ্ব তেইশে নাকি প্র্যাকটিস হয় চল্লিশ মিনিট আর টিম মিটিং চলে আড়াই ঘণ্টা! বলা হচ্ছে, কোনও ক্রিকেটার উঠে আসছে না অনূর্ধ্ব পর্যায় থেকে যাঁদের সিনিয়র টিমে ভাবা যেতে পারে।
সিনিয়র টিমে সমস্যা যদিও একমাত্র এটা নয়। এগারো জন পাতে দেওয়ার মতো ক্রিকেটার নেই। অথচ পঁয়তাল্লিশ জনকে নিয়ে সেখানে প্রাথমিক শিবির বসে। কোন ভস্মে ঘি ঢালতে, ঈশ্বর জানেন। কিন্তু রনজির আগে দু’দিনের বেশি আবার শিবির করা যায় না। ন’জন সাপোর্ট স্টাফ ঘোরেন টিমের সঙ্গে। শেষে এত ঢক্কানিনাদ করে যাঁর ব্যাটে কতিপয় ম্যাচ জেতা যায়, তাঁর বয়স মাত্র উনচল্লিশ! ভালো ব্যাটার যদি না-ই থাকে হাতে, তা হলে কেন বাংলা ছেড়ে চলে যেতে দেওয়া হল সুদীপ চট্টোপাধ্যায়দের? তাই দেখতে গেলে, যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। বাংলার যা প্রাপ্য, বাংলা তাই পাচ্ছে।
লবডঙ্কা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.