শুভায়ন চক্রবর্তী: নীতীশ কুমার রেড্ডি–ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে নামটা বিশেষ অচেনা লাগার এখন আর কথা নয়। আসন্ন হেভিওয়েট বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির জন্য নির্বাচিত ভারতীয় স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়েছে। ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীরকে সাংবাদিক সম্মেলনে জিজ্ঞাসাও করা হয়েছে যে, শার্দূল ঠাকুরের মতো পরীক্ষিত অলরাউন্ডার থাকা সত্ত্বেও নীতীশ রেড্ডির মতো নতুন মুখকে এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ সিরিজে নিয়ে যাওয়ার অর্থ কী? মুশকিল হল, পারিপার্শ্বিক পৃথিবীর যে যা-ই বলুক, তরুণ ভারতীয় অলরাউন্ডারকে কিন্তু তাঁর লক্ষ্য থেকে এতটুকু সরানো যাচ্ছে না। বরং নীতীশ বলে দিচ্ছেন যে, বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি নামক আসন্ন চ্যালেঞ্জের জন্য তিনি তৈরি।
‘‘একশো নয়, ভারতীয় দলের জন্য একশো দশ শতাংশ দেব আমি। ভারতীয় বোর্ড আমাকে দলে রেখেছে। সেই আস্থার মর্যাদা দিতে হবে আমাকে,’’ সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে বলছিলেন নীতীশ। ‘‘দলের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সবই করব। আমি এমনিতে অলরাউন্ডার। সঙ্গে ভালো ফিল্ডিংও করতে পারি। যে কোনও ভাবে টিমের কাজে আসতে পারলেই হল। প্রথম একাদশে যদি সুযোগ না পাই, তা হলে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে মাঠে জল নিয়ে যেতে তৈরি। ফিল্ডিং করতে বললে সেটার জন্যও তৈরি। আবারও বলছি, দেশের জন্য একশো দশ শতাংশ দিতে তৈরি আমি। আমাদের টিমের কাছে এটা যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ, ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছেও তাই।’’
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ওপেনিং বোলারের পাশাপাশি ওপেনিং ব্যাটারও ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ অলরাউন্ডার। তার পর ধীরে ধীরে মিডল অর্ডারে শিফট করে যান। ‘‘কুড়ি ওভার বোলিং করার পর দশ মিনিটের বিশ্রাম নিয়ে আবার ব্যাটিং ওপেন করার কাজ ম্যানেজ করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে এসেও আমাকে দ্বিতীয় নতুন বল খেলতে হয়, তবে পুরো ব্যাপারটাই সম্পূর্ণ আলাদা। স্কিলগত দিক থেকে আমার কোনও সমস্যা হচ্ছিল না। হচ্ছিল শারীরিক দিক থেকে,’’ বলতে থাকেন একুশ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। ‘‘আমি তো সতেরো বছর বয়সে ভেবেছিলাম, পেস বোলিংটাই ছেড়ে দেব। স্পিন বোলিং করব। কারণ, পেস বোলিং করতে গিয়ে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে পারছিলাম না। রান আসছিল না।’’
ভাগ্যিস সেটা করেননি নীতীশ। ভাগ্যিস পেস বোলিং করা ছেড়ে দেননি। না হলে হার্দিক পাণ্ডিয়ার অন্যতম যোগ্য উত্তরসুরির খোঁজ পাওয়া যেত কি না কে জানে! কথা হয়েছে কখনও হার্দিকের সঙ্গে? উত্তরে নীতীশ বললেন, ‘‘হয়েছে। আইপিএলের সময়। যখন হার্দিকের টিমের বিপক্ষে খেলছিলাম আমি। আমি হার্দিককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, অলরাউন্ডারদের শরীরকে কী ভাবে ম্যানেজ করা উচিত? খাওয়াদাওয়াই বা কী রকম হওয়া উচিত? হার্দিক ভাই আমাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেটা মেনে উপকৃতও হয়েছি। দেখুন, অলরাউন্ডারদের একই সঙ্গে দু’টো কাজ করতে হয়। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংও করতে হয়। আর সেটা করা খুব একটা সহজ নয়।’’
ঘট্না। সহজ নয়। কিন্তু সেই কঠিন কাজ সহজ ভাবে করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গত টি-টোয়েন্টি সিরিজে পারফর্ম করেছেন নীতীশ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে তো ৭৪ রান করার পাশাপাশি দু’টো উইকেটও নেন। এবং ভারতীয় হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের পরামর্শে যে তিনি প্রবল উপকৃত হয়েছেন, সেটাও বলে দিয়েছেন তরুণ অলরাউন্ডার। ‘‘গৌতম স্যর আমাকে সাদরে ড্রেসিংরুমে গ্রহণ করেছিলেন। উনি বাকিদের মতো আমাকেও নিজের খেলা খেলতে বলেছেন। স্বাধীনতা দিয়েছেন। উনি আমাকে বলেছিলেন, তুমি আগ্রাসী ক্রিকেটার। ম্যাচে সেই আগ্রাসনটা দেখাও। যা আমাকে খোলা মনে খেলতে সাহায্য করেছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.