স্টাফ রিপোর্টার: চেয়ারের লোভে এ কী করলেন সিএবি (CAB) কর্তারা! দিল্লিকে সন্তুষ্ট করতে ভুলে গেলেন হেনস্তা হওয়া কুস্তিগিরদের বিপন্ন মুখগুলি? ক্রীড়া সংগঠনের কর্তা হয়েও দেশের মুখ উজ্জ্বল করা ক্রীড়াবিদদের পাশে থাকার সময় পেলেন না তাঁরা? ময়দানের গোষ্ঠ পালের মূর্তি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে সিএবি। বৃহস্পতিবার সেখানে যখন কুস্তিগিরদের সমর্থনে প্রতিবাদ চলছে, সিএবির কর্তারা তখন কোথায়? আর ক্রিকেট কর্তাদের এই অদ্ভুত আচরণে বাংলার ক্রীড়ামহলে ততক্ষণে ছি, ছি, পড়ে গিয়েছে।
দিল্লির বুকে যেভাবে দেশের সোনাজয়ী কুস্তিগিরদের হেনস্তা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে বাংলা। দেশকে গর্বিত করা কুস্তিগিরদের সমর্থনে পর পর দু’দিন শহরের বুকে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। যেখানে বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারেও এই প্রতিবাদ মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও ছিলেন বহু ক্রীড়াবিদ। আইএফএ, বিওএ, রাজ্য হকি সংস্থা, সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন সহ উপস্থিত ছিলেন বাংলার সব ক্রীড়া সংগঠনের কর্তারা। ছিলেন বাংলার তিন প্রধান মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-মহামেডানের কর্তারাও। কিন্তু কোথাও দেখা মেলেনি বঙ্গ ক্রিকেট কর্তাদের! যা দেখে হতবাক বললে ভুল হবে, ধিক্কার জানাচ্ছেন সবাই। ক্রীড়াবিদদের হেনস্তার প্রতিবাদে শহরের পথে নেমেছেন ক্রীড়াক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত থাকা সবাই। আর সেই প্রতিবাদকেই এত সুন্দর করে ড্রিবল করে গেলেন সিএবি কর্তারা? ক্রিকেট কর্তাদের এহেন আচরণে ধিক্কার উঠেছে ক্রীড়ামহল থেকে স্থানীয় মানুষের মধ্যেও।
পদক জয়ী কুস্তিগিরদের হেনস্তাতে গর্জে উঠেছে সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ এসেছে বেশ কিছু ক্রীড়াবিদের থেকেও। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস যেভাবে বিভিন্ন খেলাধুলোর এক ঝাঁক ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়াসংগঠনকে নিয়ে শহরের রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখে এই প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে হাজরা মোড় থেকে রবীন্দ্র সদন। বৃহস্পতিবার গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে থেকে মোমবাতি হাতে মিছিল হয়েছে ময়দানেরই গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার বিকেলে গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া সংগঠকরা যখন জমায়েত হতে শুরু করেন, সেই সময় সিএবিতে ছিলেন ক্রিকেট কর্তারা। কিন্তু ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা প্রতিবাদ সভায় আসার সময় পেলেন না!
অথচ, বুধবারই প্রতিবাদ মিছিলের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন কুস্তিগিরদের হেনস্তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মোমবাতি মিছিল হবে। অথচ কোনও ক্রিকেট কর্তার উপস্থিতি অথবা প্রতিবাদের সমর্থনে কোনও বিবৃতি না দেখে অবাক হয়েছে বাংলার ক্রীড়ামহল থেকে সাধারণ মানুষ! এঁরা সত্যিই কোনও ক্রীড়া সংস্থার কর্তা তো? আর তখনই সবাই বুঝে যান দিল্লিকে খুশি করে ক্রিকেট কর্তাদের এই চেয়ার বাঁচানোর পরিকল্পনাটা। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস নিজে ফোন করেছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে। শোনা যাচ্ছে, সিএবি প্রেসিডেন্ট জানিয়ে ছিলেন, প্রতিবাদ সভায় আসবেন। তারপরেও একজন প্রতিনিধিও এলেন না! অবশ্য সিএবি কর্তাদের ক্রীড়াবিদদের সমর্থনে প্রতিবাদে না আসার কারণটাও সবাই ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন। চেয়ার সামলানোর জন্য দিল্লিকে সন্তুষ্ট করতেই যে বাংলার ক্রিকেট কর্তারা সযত্নে এদিনের প্রতিবাদ সভায় বাংলার অন্য ক্রীড়া সংগঠনগুলির পাশে দাঁডালেন না, তা সকলেরই বোধগম্য হয়েছে। আর তাতেই উঠেছে প্রশ্ন, ক্রীড়াবিদদের পাশে থাকার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল চেয়ারের লোভ? আর তাতেই ছি, ছি, পড়ে গিয়েছে সিএবি কর্তাদের প্রতি। খেলাধুলো পরে। আগে সন্তুষ্ট করতে হবে দিল্লিকে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.