আলাপন সাহা, দুবাই: বিরাট কোহলি গ্যালারির দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়ে দিচ্ছেন। সাইন্ড সিস্টেমে গন বাজছে অনবরত। অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে নির্ভার দেখাচ্ছে। গ্যালারি জুড়ে শুধু তেরঙ্গা উড়ছে। ভারতীয় সমর্থকরা টানা ভাষাহীন চিৎকার করে যাচ্ছেন। ম্যাচ শেষের এক ঘণ্টা পরও মেন গেটের সামনে বেশ ভিড়। ভারতীয় টিম বাস ঘিরে স্লোগান চলছে। উৎসব চলছে। কে বলবে এটা দুবাই। মনে হবে রোহিতরা ভারতের কোনও শহরে খেলছেন। দু’বছর আগের বিশ্বকাপের ফাইনাল (২০২৩) হারের বদলার কাজটা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। টিম চলে গিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। চারিদিকে সুখের আবহ। কে জানত, এরকম সুখের পরিবেশে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে যাবেন গৌতম গম্ভীর।
সেমিফাইনাল জয়ী টিমের কোচকে এমন আগুনে মেজাজে প্রেস কনফারেন্স করতে কে কবে দেখছেন? টিম ফাইনালে উঠলে দস্তুর হল, কোচ বা অধিনায়ক যে-ই আসুন, হেসে হেসে উত্তর দেবেন। ফরফুরে থাকবেন। কিন্তু তিনি, সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করলেন মঙ্গলবার গভীর রাতের সাড়ে তেরো মিনিটের প্রেস কনফারেন্সে।
প্রশ্ন প্রশ্নের মতো আসছে। ভারতীয় কোচ কোনওটায় সপাটে ‘পুল’ মারছেন। কোনওটা আবার ‘স্টেপ আউট’ করে সোজা গ্যালারিতে। আসলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে কুৎসিত হারের পর যেরকম সমালেচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছিল, তারই হয়তো জবাব দিয়ে গেলেন গম্ভীর। বিরাট কোহলির লেগ স্পিনে আউট হওয়ার প্রসঙ্গ থেকে অক্ষর প্যাটেলকে পাঁচ নম্বরে পাঠানোর কারণ জানতে চাওয়া-সবকিছুতেই ফ্রন্টফুটে খেলে গেলেন ভারতীয় কোচ।
গম্ভীরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অক্ষরকে কেন পাঁচ নম্বরে পাঠানো হচ্ছে? ভারতীয় কোচ বলেন, “বাইরে থেকে লোকে কী বলছে, সেটা নিয়ে আমরা ভাবিই না। সত্যি বলতে কী, আমাদের কিছুই যায় আসে না। অক্ষর কোয়ালিটি ক্রিকেটার। দলের কী প্রয়োজন সেটাই আসল। অক্ষরকে পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করতে পাঠানোর পর টিমের জন্য অবদান রেখেছে। তাই ওকে পাঁচ নম্বরে পাঠানো নিয়ে বাইরের কে কী বলল, সেটা নিয়ে এতটুকু ভাবছি না।” কেউ কেউ আবার ঋষভ পন্থের না খেলা নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়েছিলেন। গম্ভীর বুঝতে পারছিলেন কী জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। ভারতীয় কোচ ব্যাখাতেই গেলেন না। শুধু বললেন, “ওয়ানডে ক্রিকেটে কে এলের গড় ৫০।” সাড়ে তেরো মিনিটের প্রেস কনফারেন্সটা চলল এভাবেই। এক মুহূর্তের জন্য হাসেননি ভারতীয় কোচ। বরং একটার পর একটা প্রশ্নে আগুনে মেজাজে উত্তর দিয়ে গেলেন।
বিরাটের বারবার লেগস্পিনারের বিরুদ্ধে আউট হওয়া নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। গম্ভীর বলেন, “একজন ক্রিকেটার তিনশো ওয়ানডে খেলেছে। ব্যাটার তো আউট হবেই। সেটা লেগস্পিনে আউট হচ্ছে নাকি অন্য কোনওভাবে তাতে কী যায় আসে। এই টুর্নামেন্টে একটা সেঞ্চুরি করেছে বিরাট। আজকে নব্বইয়ের কাছাকাছি রান করল। তাহলে?” রোহিতের ফর্ম নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল গম্ভীরকে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, আর কতদিন ভারত অধিনায়ককে টিমে দেখতে পাচ্ছেন তিনি? গম্ভীরের জবাব, “রোহিতের কথা বলছেন? সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল রয়েছে। তার আগে কী উত্তর দেব। তবু আপনাকে বলে রাখি, আপনাদের টিমের অধিনায়ক যদি এরকম মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করত, ড্রেসিংরুমের কাছে একটা ভালো বার্তা পৌঁছত। তফাত কী বলুন তো? আপনার পরিসংখ্যান দেখে বিচার করেন। আমরা ইমপ্যাক্ট দেখি। আপনারা সাংবাদিক-বিশেষজ্ঞরা ক্রিকেটারের গড় দেখেন। আমারা কোচ হিসেবে, টিমে হিসেবে সেটা করি না। যে মডেলের ক্রিকেট খেলতে চাইছি, সেখানে যদি অধিনায়ক সবার আগে এসে বলে সে একই মডেলের ক্রিকেট খেলতে তৈরি, সেটা টিমের জন্য কতটা ভালো আশা করি বুঝতে পারছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.