Advertisement
Advertisement
India vs Pakistan

‘এশিয়ার অ্যাশেজে’র আগে ফুটছে ভারত, দুবাইয়ের গণগণে আঁচে কুঁকড়ে পাকিস্তান

পাক টিমকে যিনি সবচেয়ে বেশি ভরসা দিতে পারতেন, সেই বাবর আজমকে নিয়েও পাক সমর্থকদের মনে নৈরাশ্য কাজ করছে।

Champions Trophy 2025: India cricket team will face Pakistan in High Voltage match

ছবি: বিসিসিআই

Published by: Arpan Das
  • Posted:February 23, 2025 11:57 am
  • Updated:February 23, 2025 12:35 pm  

আলাপন সাহা, দুবাই: ডাউন টাউন জায়গাটা দুবাই শহরের একবারে প্রাণকেন্দ্র। রাত দুটো-তিনটের সময়ও রেস্তরাঁগুলো হাউস ফুল। দোকানপাট বেশিরভাগই খোলা। সামনেই রয়েছে দুবাই মল। তার ঠিক পাশেই পৃথিব‌ীবিখ‌্যাত বুর্জ খলিফা। পার্কিং লটে গাড়ির ভিড়। প্রচুর লোকজন। রাস্তার দু’পাশে বসে আড্ডা চলছে দেদার। পোরশে, বিএমডব্লুগুলো হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। মধ‌্যরাতেও অসম্ভব জীবন্ত লাগবে জায়গাটাকে।

ডাউন টাউন দুবাই থেকে মোটর সিটির দূরত্ব মেরেকেটে উনত্রিশ কিলোমিটার। এখানকার রাস্তাঘাট এতটাই মসৃণ, ওই দূরত্ব পৌঁছতে মিনিট কুড়ির বেশি লাগল না। আর এই মোটর সিটিতেই দুবাই স্টেডিয়াম। যেখানে রবিবারের ভারত-পাকিস্তান মহাযুদ্ধ। একেবারে নতুনভাবে তৈরি হয়েছে মোটর সিটি। পনেরো বছর আগেও ধু-ধু প্রান্তর ছিল। এখন বেশ জাঁকজমক ভরা। চারিদিকে হাই-রাইজ বিল্ডিং মাথা তুলে রয়েছে। মল। ঝাঁ-চকচকে রাস্তা। তবু ডাউন টাউনের সঙ্গে মোটর সিটির একটা বিশেষ পার্থক‌্য রয়েছে। ডাউন টাউন দুবাই যেখানে ভোর পর্যন্ত জাগে, মোটর সিটিতে রাত দশটার পর থেকেই বেশ ফাঁকা। লোকজন তেমন খুঁজে পাওয়া যাবে না। খাবার-দাবারের কয়েকটা দোকান খোলা থাকে ঠিকই, কিন্তু তাতে বিশেষ লোকজন আসেন না। অনেকটা আমাদের সল্টলেকের মতোই।

Advertisement

দুবাইয়ের দুটো জায়গার মধ্যে এতটা বৈপরীত‌্য বোঝানোর কারণ একটাই। কারণ, ভারত-পাক ক্রিকেটীয় মহাযুদ্ধের আগে দুটো টিমের মধ্যে স্টেডিয়ামে জন্য কয়েক পাকিস্তান সমর্থকের দেখা গেলাম। কিন্তু তাঁদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে, সম্পূর্ণ নিষ্ফলা এক ভারত যুদ্ধে যেন নামতে চলেছে পাকিস্তান। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় যেন পূর্বেই হয়ে গিয়েছে, নেহাত খেলতে হবে বলে খেলা। কোথায় সেই চির পরিচিত পাকিস্তানি ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী’ আগ্রাসন? বরং হারের আগেই যেন হেরে বসে আছেন তাঁরা। একজন অম্লান ভাবে বলেও গেলেন যে, রোববার ভারত নিজেরা খারাপ খেলে না হারলে পাকিস্তানের জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই!

খুব দোষ দেওয়াও যায় না। আসলে দুটো টিমের সাম্প্রতিক ফর্মই সমস্ত পার্থক্য করে দিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট সিরিজ হারের পর ভারতীয় দল সেই ধাক্কা সামলে নিয়েছে। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে চুনকাম, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে অনায়াসে জয়। সেখানে পাকিস্তানে নিজেদের ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাদের কিনারায়। ভারতের বিরুদ্ধে হারা মানেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় কার্যত নিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে পাক টিমকে যিনি সবচেয়ে বেশি ভরসা দিতে পারতেন, সেই বাবর আজমকে নিয়েও পাক সমর্থকদের মনে নৈরাশ্য কাজ করছে। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন- আদৌ বাবর রান করতে পারবেন তো?

ভারতীয় টিমে সে সমস্ত সমস্যা নেই। পুরনো রোহিতকে আবার পাওয়া যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কটক-সেঞ্চুরি ভারত অধিনায়ককে যে পরিচিত বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছে, তা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মারমার-কাটকাট ব্যাটিংয়েই প্রমাণিত। শুভমান গিল অসম্ভব ভালো ফর্মে। প্লাস, শ্রেয়স আইয়ার, হার্দিক পাণ্ডিয়ারা রয়েছেন।

দুটো টিমের প্র্যাকটিস সেশনও তো অনেক কিছুর উত্তর দিয়ে গেল। আইসিসি অ্যাকাডেমির মাঠে ভারতীয় দল দুপুরে ট্রেনিং করল। আর দুবাইয়ের স্টেডিয়ামে বিকেলে পাকিস্তান। ভারতীয় ট্রেনিংয়ের আবহ একেবারে ঝরঝরে। কিন্তু পাকিস্তান ট্রেনিং দেখেই বোঝা গেল দলটা কতটা চাপে। অথচ ভাবলে আশ্চর্যই লাগে। অস্ট্রেলিয়া সফরের পর ভারতীয় টিমটা কী ঠিক অবস্থায় ছিল, আর এখন কোথায়। অস্ট্রেলিয়া বিপর্যয়ের পর অধিনায়ক রোহিত বিপর্যস্ত ছিলেন। কোচ গৌতম গম্ভীর বিধ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় ‘প্রেশার কুকার’ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়েছে।

আরও অদ্ভুত, ভারত বনাম পাকিস্তান ক্রিকেটীয় যুদ্ধের গনগনে আঁচটাই দুবাইয়ে এখনও পর্যন্ত টের পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম ম্যাচে স্টেডিয়ামের অর্ধেকের বেশি ফাঁকা ছিল। সংগঠকরা বললেন, রবিবার গ্যালারি ফাঁকা থাকবে না। কিন্তু ‘ফুলহাউস’ হবে কি না, সংশয় আছে। যাক গে। ভারতীয় শিবির থেকে বলেই দেওয়া হল যে, পাকিস্তান ম্যাচ বলে আলাদা কিছুই হচ্ছে না। প্রেস কনফারেন্সে এসে শুভমান গিল বলে গেলেন, “আমরা যেমন প্রত্যেকটা ম্যাচে জেতার জন্য নামি, এটাতেও নামব।”

পাক ছাউনি থেকেও সেভাবে কোনও হুঙ্কার আসছে কোথায়? পাক কোচ আকিব জাভেদ শুধু শাহিনদের আক্রম-ওয়াকার জমানার সঙ্গে তুলনা করে গেলেন। যা শুনলে পাঁচ বছরের শিশুও বলে দেবে, এ সমস্ত ভারত-যুদ্ধের আগে টিমের মনোবল বাড়াতে হয় বলে বলা। আদতে সারবত্তা নেই। শারজা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রিকেট কভার করা এক সাংবাদিক বলছিলেন যে, তাঁর তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের কেরিয়ারে এমন নিভন্ত ভারত-পাক ক্রিকেট আবহ দেখেননি তিনি। এত ঘুমন্ত পাকিস্তান টিমও দেখেননি। ঠিক, একদম ঠিক। ‘এশিয়ার অ্যাসেজ’, ‘মহাযুদ্ধ’, ‘মহারণ’ এ সমস্ত বিশেষণ কিংবা শব্দবন্ধ বাজার গরম করতে হয় বলে লিখতে হচ্ছে। লিখতে হবে। কিন্তু দু’টো টিমের যা ফারাক, যা প্রতিভাগত তফাত, তাতে একটা কথা দুবাইয়ে দাঁড়িয়ে বারবার মনে হবে।

জিপিএস যতই পঁয়তাল্লিশ মিনিটের দূরত্ব দেখাক, শারজা বলে আদতে কিছু নেই। শারজা না থাকলে, চেতন শর্মাকে শেষ বলে ছয় মারা জাভেদ মিয়াদাদও নেই। মিয়াদাদদের ‘রংবাজ’ সবুজ-জার্সি না থাকলে মরুদেশের পাক সমর্থকদের হাড়হিম করা হিংস্র ‘জিয়ে জিয়ে পাকিস্তান’-ও নেই।

পুরোটাই যেন এক অলীক কল্পনা-সমগ্র, রূপকথার পৃথিবীতে যা কোনও একদিন ঘটেছিল!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement