আলাপন সাহা, দুবাই: রবিবার ভারতের পাকিস্তান বধের পর দুবাইয়ের একচ্ছত্র অধিপতি কে?
কেন, বিরাট কোহলি!
দুবাইয়ের ‘মল অফ এমিরেটস’-এর কথাই ধরা যাক। দুবাই মল যেমন পৃথিবী বিখ্যাত, তেমন ‘মল অব এমিরেটস’-এরও যথেষ্ট নাম-ডাক রয়েছে। ‘মল’-টার বিশেষ আভিজাত্যও রয়েছে। আকার-আয়তনে বিশাল। প্রায় চারটে সাউথ সিটি মলের সমান। আশেপাশের জায়গা অসম্ভব সুন্দর। বিভিন্ন ধরনের রেস্তঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেরকমই এক রেস্তঁরায় বিরাটের ইনিংস নিয়ে আলোচনা চলছিল সোমবার দুপুরে। বিদেশি এক ভদ্রলোক বসেছিলেন খাবারদাবার নিয়ে। বিরাটের বিশাল ভক্ত। মাঝে অফ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি। কিন্তু ‘মল অফ এমিরেটস’-এর রেস্তঁরায় উপস্থিত তাঁর বিদেশি ভক্তের স্থির বিশ্বাস ছিল, বিরাট ঠিক চেনা ছন্দে ফিরবেন।
একই রকম ভরসা ভারতীয় ড্রেসিংরুমেও ছিল। নেটে বিরাট যেভাবে ব্যাট করেছিলেন, সবাই তাতে ধরেই নিয়েছিলেন যে, টিমের অন্যতম সেরা ব্যাটারের বড় রানে ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা! রবিবার খেলা শেষে সম্মেলনে এসেছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। তিনি বলেন, “আমার এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি বিরাট রানের জন্য স্ট্রাগল করছিল। ওর মধ্যে রানের খিদে সবসময় ছিল। ম্যাচের আগের দিন কোহলি আমাদের এক ঘণ্টা আগে প্র্যাকটিসে চলে গিয়েছিল। নেটে যেরকম ব্যাটিং করছিল, অতুলনীয়। একবারের জন্য কখনও মনে হয়নি ওর কোনও সমস্যা রয়েছে। কিংবা স্ট্রাগল করছে।”
বিরাটকেও তৃপ্ত দেখাচ্ছিল রবিবার সেঞ্চুরির পর। অস্ট্রেলিয়া সফরে অফস্টাম্পের বাইরের বল তাঁকে ক্রমাগত ভুগিয়ে যাচ্ছিল। কভার ড্রাইভ মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন বারবার। বলাবলি শুরু হয়ে গিয়েছিল, যখন একই শটে আউট হচ্ছেন, তখন সেই শট খেলার কী দরকার? বিরাট অবশ্য নিজের গেমপ্ল্যান থেকে এতটুকু সরে আসেননি। নিজের ক্রিকেটীয় অভিধান থেকে কভার ড্রাইভ সরিয়ে দেননি। বরং যে শটে অকাতরে রান করেছেন, প্র্যাকটিসে সেটাকেই আরও ঝালিয়ে নিয়েছেন। আর পাকিস্তান ম্যাচে সেই চেনা কভার ড্রাইভগুলো আবার ফিরে এসেছে। যা নিয়ে বিসিসিআই টিভিতে বিরাট বলেন, “বছরের পর বছর ধরে ড্রাইভ মেরে যেমন রান পেয়েছি, তেমন আউটও হয়েছি। কিন্তু রবিবার নিজের সেরা শটের উপর ভরসা করেছিলাম। প্রথম কয়েকটা বাউন্ডারি মেরেছি কভার ড্রাইভে। ঠিক করেই নিয়েছিলাম, ওই উইকেটে কিছুটা ঝুঁকি নেব আর টিমকে জেতাব। যখন শটগুলো খেলছিলাম, মনে হয়েছিল ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। এই ইনিংস অবশ্যই স্পেশাল। একই সঙ্গে টিম হিসেবেও দুর্দান্ত খেলেছি। দারুণ জয় এটা। যেভাবে ব্যাট করতে চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই ব্যাট করেছি। আরও ভালো লাগছে এরকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারায়।”
শুধু কি বিরাটের ইনিংস? চর্চা চলছে সেঞ্চুরির পরের ‘কিং কোহলি’-র সেলিব্রেশন নিয়েও। রোহিত শর্মা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর লিওনেল মেসির মতো সেলিব্রেশন করতে করতে বিশ্বকাপ ট্রফি নিতে গিয়েছিলেন। বিরাট আবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর অসম্ভব বড় ভক্ত। কে জানে তাই হয়তো পাক-সংহারের সেঞ্চুরির পর উৎসবের জন্য রোনাল্ডোর ‘কালমা’ সেলিব্রেশনকেই বেছে নিয়েছিলেন। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিংও হয়ে গিয়েছে।
ভারতীয় টিম অবশ্য আর উৎসব চাইছে না। দু’দিন আপাতত ক্রিকেটারদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করবে টিম। নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের হারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেল। নিশ্চিত হয়ে গেল পাকিস্তান আর বাংলাদেশের বিদায়ও। পরিস্থিতি যা, তাতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচে টিমে বেশ কয়েকটা বদল করতে পারে ভারত। মহম্মদ শামিকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে। যাতে সেমিফাইনালে আরও তরতাজা হয়ে নামতে পারেন। রোহিত শর্মার আগের দিন হ্যামস্ট্রিংয়ে লেগেছিল। রোহিত নিজে জানিয়েছেন বটে যে অসুবিধে নেই। কিন্তু ভারত ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে না-ও নামাতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.