সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: রবিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ক্রিকেটের মেগা ম্যাচ, ক্রিকেটের স্বপ্নের ম্যাচ ভারত বনাম পাকিস্তান। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, ক্রিকেটের এত বড় যুদ্ধ সব ছেড়েছুড়ে ম্যাঞ্চেস্টারে কেন? আসলে গোটা বিলেতের মধ্যে এশীয়রা সবচেয়ে বেশি থাকেন ম্যাঞ্চেস্টারে। আর তাই ম্যাচটা ঘিরে যা উত্তেজনা ছড়াবে, মাঠে লোক যা আসবে, যেভাবে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে ম্যাচটার উপর, কল্পনাও করতে পারছেন না! বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে এশীয়রা ইংল্যান্ডে ক্রিকেট মাঠের গ্যালারি ভরিয়েছেন। তাই ওভালে গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়াকে যখন খেলছিল ভারত, গ্যালারিতে নীল সমুদ্র দেখে আশ্চর্য হইনি। কিন্তু রবিবাসরীয় ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে একতরফা নীল সমুদ্র থাকবে না। নীল যত আসবে, সবুজও তত আসবে।
আসলে ভারত বনাম পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ চিরকালই মারাত্মক উত্তেজনার ম্যাচ হিসেবে ইতিহাসে থেকে গিয়েছে। আর এবারও তা পালটাচ্ছে না। এই ম্যাচে মুশকিলটা হয় অন্য জায়গায়। অনেক সময় দেখা যায়, ম্যাচ ঘিরে যত প্রত্যাশা সেই উচ্চতায় খেলাটা পৌঁছতে পারছে না। কিন্তু এবার দু’টো টিমের যা ফর্ম, যা ওরা খেলছে, তাতে রবিবার দুর্ধর্ষ একটা ম্যাচ দেখার আশা রাখছি। বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দারুণ রেকর্ড ভারতের। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এসব ম্যাচে অতীত রেকর্ড-টেকর্ড কোনও প্রভাব বিস্তার করে না। বরং বলব দু’বছর আগে ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে হারিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। আর আমার মতে, ভারতীয় টিমের মাথায় সেটা থাকবে।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড উইকেটের জন্য ম্যাচটা আরও জমবে। এখানকার পিচ সব সময়ই ফাস্ট বোলার এবং ব্যাটসম্যান- দু’জনের জন্যই সুযোগ-সুবিধা সবসময় রাখে। সমর্থকরা চান, এই ম্যাচটায় এসে ভাল ক্রিকেট দেখতে। যার মঞ্চ কিন্তু পুরো তৈরি। আমার একমাত্র চিন্তা- মুষলধারে বৃষ্টি। গত এক সপ্তাহ ধরে ইংল্যান্ড জুড়ে যা চলছে। সেটা হলে পিচে স্যাঁতস্যাঁতে একটা ভাব থাকবে আর ফাস্ট বোলারদের তড়িঘড়ি ডাক পড়বে। ভারত এবং পাকিস্তান, দু’টো টিমের কাছেই ভাল সব ফাস্ট বোলার আছে। জশপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ আমির- প্রত্যেকে দুর্ধর্ষ ফর্মে। যারা রবিবাসরীয় যুদ্ধে প্রবল প্রভাব ফেলবে বলেই আমার বিশ্বাস।
ভারতের দুর্ভাগ্য হল, শিখর ধাওয়ানকে না পাওয়া। ওকে মিস করবে ভারত। চলতি বিশ্বকাপে ও ফর্মে ছিল। তাই ধাওয়ানের ছিটকে যাওয়াটা একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করবে যা ভরাট করতে হবে টিমকে। কিন্তু তার পরেও বলছি, কেএল রাহুলের কাছে আজ একটা বড় সুযোগ। রাহুল দারুণ ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে বড় কথা, রাহুল ভালবাসে ওপেন করতে। আশা করব সুযোগের চূড়ান্ত ফায়দা তুলবে। কিন্তু ওপেনিং নয়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, মিডল অর্ডারে কে আসবে? রাহুল যে জায়গায় ব্যাট করেছে দু’টো ম্যাচে, সেই চার নম্বরে এবার কে? একটা হাওয়া শুনছি যে, বিজয় শংকর নয়। ভারত বরং দীনেশ কার্তিকের অভিজ্ঞতার উপর আজ ভরসা রাখতে পারে। ওকে খেলাতে পারে। সেটা হলে দেখতে চাই, কোন পজিশনে ব্যাট করতে আসে কার্তিক।
পাকিস্তানে ঢুকি। পাকিস্তানকে যদি ম্যাচটা জিততে হয়, নিজেদের সেরা খেলাটা বার করে আনতে হবে। কারণ এই ভারতীয় টিমটা প্রচণ্ড শক্তিশালী। পাক ব্যাটিংকে কিছু স্পেশ্যাল পারফরম্যান্স বার করে আনতে হবে। বিশেষ করে ওদের টপ অর্ডারকে। একমাত্র সেটা হলেই ভারতের উপর চাপ তৈরি করা সম্ভব। দু’বছর আগে ফখর জামান ঠিক যে কাজটা করেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে। পাকিস্তানের আজও ফখরের মতো কাউকে চাই যে দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ পাকিস্তান যদি বড় রান না করতে পারে, ভারতীয় ব্যাটিংকে থামিয়ে ম্যাচ জেতা কঠিন নয়, অসম্ভব কঠিন হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.