ফাইল ছবি।
আলাপন সাহা, দুবাই: মরুশহরে এখন আর গরম নেই। বরং সন্ধের পর বেশ ঠাণ্ডা পড়ে। মঙ্গলবার যেমন। সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। দুপুরেও পুলওভার কিংবা জ্যাকেট লাগছে। সন্ধের পর শীত ভাব আরও বাড়ছে খানিকটা। বিরাট কোহলির জীবনও এখন ঠিক এমন। দুবাইয়ের আবহাওয়ার মতোই মনোরম।
একটা ম্যাচেই সব পরিস্থিতি বদলে দিয়ে গিয়েছে। পাকিস্তান ম্যাচের আগেও কোহলিকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হচ্ছিল। কিন্তু মহাযুদ্ধে সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানোর পর ফের বিরাট-বন্দনা শুরু হয়ে গিয়েছে। দুবাইয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘কিং কোহলি’। প্রাক্তনরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। কোহলি চেনা ছন্দে ফিরে আসায় টিম আরও বেশি স্বস্তিতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিততে গেলে কোহলির ফর্মে থাকা কতটা জরুরি, সবার জানা। দুবাইয়ের স্টেডিয়ামে বসে প্রিয় ছাত্রের সেঞ্চুরি দেখার পর বেশ খুশি কোচ রাজকুমার শর্মা। কোহলির সেঞ্চুরি পর তাঁর ছাত্রের সমালোচকদেরও জবাব দিয়ে যান রাজকুমার। রীতিমতো আক্রমণাত্মক মেজাজে কথা বলে। বিরাটের কোচের বক্তব্য, “আমি জানি না কারা কী বলে? শুধু সমালোচকদের এটাই বলব, প্লিজ গিয়ে বিরাটের পরিসংখ্যান একবার দেখে নিন। দেখুন, দেশের জন্য ছেলেটা কী করেছে। দেশকে কত ম্যাচ জিতিয়েছে। আর ক’জন প্লেয়ার দেশের জন্য এরকম অবদান রেখেছে? এর বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ সবার চিন্তা-ভাবনা আলাদা। কিন্তু বিরাট সবসময়ই যাবতীয় সমালোচনার জবাব নিজের ব্যাট দিয়ে দিয়েছে। এই ম্যাচেও ঠিক সেটাই করেছে।” মাঝে একটা সময় বেশ খারাপ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি। কিন্তু তাঁর কোচ তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন না। জানতেন এক-আধটা ইনিংস খারাপ যেতেই পারে। রাজকুমার বলছিলেন, “ক্রিকেটে সব ইনিংসে রান আসবে, সেরকম হয় না। একটা-দুটো ইনিংস খারাপ যেতেই পারে। কিন্তু বিরাটের পরিসংখ্যান দেখুন। রান তো ও বছরের পর বছর ধরে করে এসেছে। রান করা ওর কাছে নতুন কিছু নয়।”
রাজকুমার বলছেন। বিশ্ব জুড়েও বিরাট-প্রশংসা চলছে। রিকি পন্টিং। মাইকেল আথারটন। সবার কথাতেই বারবার ঘুরেফিরে বিরাট-বন্দনা। আইসিসি রিভিউতে পন্টিং বলে দিয়েছেন, ওয়ান ডে’তে বিরাটই সেরা। এক সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছেন, “পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে বিরাটের থেকে সেরা ক্রিকেটার আমি অন্তত দেখিনি। ওয়ান ডে’তে রানের দিক থেকে আমাকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। ওর সামনে আর শুধু দু’জন ক্রিকেটার। আমি নিশ্চিত বিরাট যথাসাধ্য চেষ্টা করবে ওয়ানডে ক্রিকেটের রান সংগ্রহকারীর লিস্টে সবার আগে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।” ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক আথারটনের বক্তব্য, “ওয়ানডে’তে রান তাড়া করার ব্যাপারে বিরাটই সেরা। ওর ধারে কাছে কাউকে দেখছি না। ওয়ান ডে’তে একান্নটা সেঞ্চুরি করল। অবিশ্বাস্য রেকর্ড।”
ভারতীয় টিমও এখন সুখের সংসার। দু’দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল। ক্রিকেটাররা যে যার মতো করে সময় কাটালেন। কেউ গেলেন দুবাই মল ঘুরতে। কেউ আবার হোটেলেই দু’দিন পুরোপুরি বিশ্রাম নিলেন। বুধবার থেকে আবার নিউজিল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করবেন রোহিত শর্মারা। সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তবে সেমিফাইনালের আগে রোহিতরা ‘মোমেন্টাম’ নষ্ট করতে চান না। ইংল্যান্ড সিরিজ ধরলে শেষ পাঁচটা ওয়ান ডে’তেই জিতেছে ভারত। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামার আগে আরও বেশি সতর্ক থাকছে দল। আইসিসি ট্রফিতে নিউজিল্যান্ড সবসময় বড় গাঁট ভারতের। যদিও দু’বছর আগে দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল গিয়েছিলেন রোহিতরা। কিন্তু সেটা ছাড়া বাকি স্মৃতি খুব একটা সুখকর নয়। ২০১৯ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। তার আগে দেশের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারতে হয় ভারতকে। নিউজিল্যান্ড টিমটা বেশ ব্যালান্সডও। ভারতের মতো মিচেল স্যান্টনারের টিমও সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। তবু গ্রুপের শেষ ম্যাচেরও ভালোরকম গুরুত্ব রয়েছে। কারণ যে টিম জিতবে, তারাই গ্রুপ শীর্ষে থেকে সেমিতে নামবে। বাংলাদেশকে হারিয়ে মঙ্গলবারই দুবাই পৌঁছে গিয়েছে নিউজিল্যান্ড। উইলিয়ামসনদের দেখেও মনে হবে বেশ রিল্যাক্সড তাঁরা। অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার, উইলিয়ামসন-সহ জনা চারেক ক্রিকেটার বিকেলে দুবাই মলে ঘুরলেন। টুকটাক কিছু শপিংও চলল। কিছুই নয়, বিরাট-যুদ্ধের নিজেদের হালকা রাখতে চাইছেন কেনরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.