Advertisement
Advertisement
Eden Gardens

ইডেনের সঙ্গে ‘অবিচার’ নিয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, প্লে অফের ম্যাচ আনতে উদ্যোগী সৌরভ

ইডেন ফাইনাল পাচ্ছে না, নিশ্চিত করে বলা যায় না। আবার পাচ্ছেই, বলা যায় না।

IPL 2025: Accumulated anger over 'injustice' with Eden, Sourav takes initiative to bring playoff match

ফাইল ছবি

Published by: Prasenjit Dutta
  • Posted:May 15, 2025 12:39 pm
  • Updated:May 15, 2025 12:39 pm  

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: আইপিএলের বিগত সতেরো বছরের ইতিহাসে কখনও এ জিনিস হয়নি। আইপিএলের পরবর্তী সতেরো বছরেও কখনও হবে কি না, ঘোর সন্দেহ! ইডেন গার্ডেন্সের মতো ভারতবর্ষের এক অভিজাত ক্রিকেট-ভূমিকে টুর্নামেন্ট ফাইনালের মহাকেন্দ্র পূর্বে ঘোষণা করার পরেও যেভাবে তাকে নিয়ে নিরন্তর টানাপোড়েন চলছে, যেভাবে কলকাতার আইপিএল ফাইনাল হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে, তা একইসঙ্গে অভূতপূর্ব এবং অত‌্যন্ত নৈরাশ‌্যজনক!

বিশদ বিবরণে যাওয়ার আগে সহজ কথাটা লিখে ফেলা যাক। আইপিএলের অলিখিত প্রথা হল, টুর্নামেন্ট ফাইনালে যে দু’টো টিম খেলে, পরের বছর সেই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির শহরে টুর্নামেন্টের ‘প্রাইজড’ ম‌্যাচগুলো ভাগাভাগি হয়ে যায়। চ‌্যাম্পিয়ন টিমের শহর পায় পরের বছরের উদ্বোধনী ম‌্যাচ। সঙ্গে একটা কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনাল। আর রানার্স আপ টিমের শহর পায়, আর একটা কোয়ালিফায়ার এবং এলিমিনেটর। কেকেআর গতবারের আইপিএল চ‌্যাম্পিয়ন টিম। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুপাতে, ইডেনের এবার কেকেআরের সাত হোম ম‌্যাচ বাদেও তিনখানা আরও দামী ম‌্যাচ পাওয়ার কথা। উদ্বোধনী ম‌্যাচ। কোয়ালিফায়ার। এবং ফাইনাল। যার প্রথমটা হয়েছে। অষ্টাদশ আইপিএলের উদ্বোধনী ম‌্যাচ দেখেছে কলকাতা। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার পর তীব্র সংশয়ে পড়ে গিয়েছে বাকি দুই প্রাপ‌্য ম‌্যাচ– কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনাল। তা সে যতই পূর্ব সূচি অনুয়ায়ী, আগামী ২৩ ও ২৫ মে যথাক্রমে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনালের দিন ধার্য থাক!

Advertisement

সীমান্ত উত্তাপ প্রশমিত হওয়ার পর যে মিডিয়া রিলিজ দিয়েছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ, তাতে ১৭ মে টুর্নামেন্ট পুনরায় শুরু করার কথা বলা রয়েছে। বলা আছে, আগামী ৩ জুন ফাইনাল হবে। এবং লেখা রয়েছে যে, আইপিএলের বাকি সতেরো ম‌্যাচ হবে ছ’খানা কেন্দ্রে। লখনউ। জয়পুর। মুম্বই। আমেদাবাদ। দিল্লি। বেঙ্গালুরু। উপসংহারে লেখা, প্লে অফ এবং ফাইনালের কেন্দ্র এখনই জানানো হচ্ছে না। পরে তা বলে দেওয়া হবে।

দুইয়ে-দুইয়ে চারের মতো সাধারণ গণিত জানা থাকলে, সামান‌্য হিসেবেই বেরিয়ে আসবে যে সতেরো ম‌্যাচের কথা রিলিজে লেখা, তা আদতে ফাইনাল-টাইনাল সমেত! গ্রুপ পর্বের তেরোখানা খেলা। এবং দুই কোয়ালিফায়ার + এক এলিমিনেটর + ফাইনাল। সব মিলিয়ে, সতেরো! যা প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, হবে ছয় কেন্দ্রে। যার মধ্যে কলকাতার নাম উল্লেখ নেই!

বোর্ডমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্লে অফ এবং ফাইনালের কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত ‘ডিউস’ কিংবা অমীমাংসিত থাকার নেপথ‌্য কারণ দু’টো। এক) দেশজুড়ে এবার বর্ষার এগিয়ে আসার সম্ভাবনা। যাতে নাকি ‘আক্রান্ত’ হতে পারে কলকাতা। সেক্ষেত্রে ইডেনে ৩ জুন খেলা দিলে, ফাইনাল খেলা না-ও সম্ভব হতে পারে। দুই) ব্রডকাস্টারদের ঊর্ধ্বগামী খরচপত্র। ভারত-পাক সংঘর্ষের কারণে এক সপ্তাহ স্থগিত হয়ে গিয়েছিল মাঝে আইপিএল। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব‌্য হল, ইতিমধ্যে টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ার কারণে আর্থিক ভাবে ধাক্কা খেয়েছে ব্রডকাস্টাররা। তাই বাকি টুর্নামেন্টে তারা আর ক্ষতি চায় না। বৃষ্টির কারণে খেলা না হলে খরচ ফের বাড়বে। খরচের ভাবনা থেকেই নাকি তারা চাইছে, ছ’টা কেন্দ্রে বাকি টুর্নামেন্টের পাট চুকিয়ে ফেলতে!

অবশ‌্যই প্লে অফ বা ফাইনাল নিয়ে এ সমস্ত বোর্ডের সরকারি বয়ান নয়। কিন্তু সেটাই প্রকৃত কারণ। বলা হচ্ছে, ফাইনাল নিয়ে যাওয়া হতে পারে আমেদাবাদে। সেখানে জুনের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, তাই। সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন থাকে। ওয়াকিবহাল মহল যা তুলছে।
১) জুন মাসের প্রথমে কলকাতায় সাইক্লোন আসার কোনও খবর নেই। ওয়েদার অ্যাপে দেখাচ্ছে, ৩ জুন শহরে বৃষ্টির সম্ভাবনা চৌত্রিশ শতাংশ। তা হলে কুড়ি দিন আগে কী করে বোর্ড জেনে যাচ্ছে যে, ইডেনে ফাইনাল হলে বৃষ্টি হবেই?

২) বৃষ্টির কারণে যদি খেলার কেন্দ্র ওলটপালট করে দিতে হয়, তা হলে ইংল‌্যান্ডে ক্রিকেট হয় কী করে? বিলেতে বছরে বারো মাসের দশ মাস বৃষ্টি চলে। বৃষ্টির কথা ভাবলে তো ইংল‌্যান্ডে একটা ম‌্যাচও আয়োজন করা যেত না! অথচ এবারও দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল হবে লর্ডসে। বোর্ড বৃষ্টির যুক্তিতে যদি ইডেন থেকে ফাইনাল সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে পারে, তা হলে একই আশঙ্কায় লর্ডস থেকে ডব্লিউটিসি ফাইনাল সরিয়ে নেওয়া জরুরি!

৩) বৃষ্টি-বাদলার সম্ভাবনা থাকলে পুরো মাঠ ঢেকে ফেলার বন্দোবস্ত রয়েছে ইডেনে। যা বিশ্বের খুব বেশি মাঠে নেই। তা ছাড়া মুষলধারায় বৃষ্টি যদি বা হয়ও, বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর খেলা শুরু করলে লাগে খুব বেশি হয়ে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। ইডেনের নিকাশি ব‌্যবস্থা এখন এতটাই ভালো। বিশ্বাস না হলে, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম‌্যাচের কথা মনে করুন। অঝোর বর্ষণের পরেও কিন্তু সে দিন খেলা বন্ধ হয়নি।

অতএব, বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার আর ফাইনাল যদি সত্যি-সত্যি ইডেন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শেষ পর্যন্ত, তা অত‌্যন্ত অবিচার হবে। পূর্বে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের কথা লিখলাম। কিন্তু তার পূর্বাভাসও যে শতভাগ নিখুঁত থাকে, বলি কী করে? উদাহরণ, বছর কয়েক আগে ফণী। ডানা। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে এর প্রত্যেকটার কলকাতায় আছড়ে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়েনি। তা হলে চৌত্রিশ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনায় আইপিএল ফাইনাল সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা হয় কোন যুক্তিতে?

সিএবি’র একাংশ থেকে বুধবার আরও কয়েকটা তথ‌্য-প্রমাণাদি পেশ করা হল। বলা হল, গত তিন বছরে ১৫ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত যে ক’টা খেলা হয়েছে বাংলায়, তার মাত্র পাঁচটা বৃষ্টির কারণে রিপ্লে হয়েছে, ব‌্যস। গত বছর বেঙ্গল টি-টোয়েন্টি লিগ ভরা জুন মাসে সতেরো-আঠারো দিন চলেছে। খেলা হয়নি স্রেফ দু’দিন। ফাইনাল অবশ‌্য একটা ইনিংসের পর আর করা যায়নি বৃষ্টিতে। কেউ কেউ বলছেন, কলকাতা যদি পাকিস্তান সীমান্তবর্তী হত, তা হলেও একটা ব‌্যাপার ছিল। কিন্তু তা তো নয়। তা হলে কলকাতায় শিডিউলড ফাইনাল কী করে সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে?

আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সদস‌্য তথা প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়ার উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে সিএবি। কারও কারও মতে, তিনি বাংলার ক্রিকেট প্রশাসক ছিলেন। তা হলে ফাইনাল সরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখে তিনি কেন সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন না?

অভিষেককে ফোনে পাওয়া গেল না। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ পালটা বললেন যে, অভিষেক যে সক্রিয় ভূমিকা নেননি, সিএবি জানতে পারছে কী করে? তিনি নতুন আইপিএল সূচি বেরনোর দিনই বোর্ড কর্তাদের প্রশ্ন করেছিলেন, কেন আইপিএল ফাইনালের কেন্দ্রের জায়গা ফাঁকা রাখা? কেন সেখানে ইডেনের নাম নেই? এটাও বলা হল, এখনও পরিস্থিতি পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। ইডেন ফাইনাল পাচ্ছে না, নিশ্চিত করে বলা যায় না। আবার পাচ্ছেই, বলা যায় না।

তবে আইপিএল ফাইনাল নিয়ে হাল ক্রমশ ছাড়ছে সিএবি। শোনা গেল, প্রাক্তন বোর্ড তথা সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ‌্যায় নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। ফাইনাল হলে ফাইনাল। না হলে নিদেনপক্ষে একটা কোয়ালিফায়ার আর এলিমনেটর নিয়ে আসার। কিন্তু তাতেও একাধিক দাবিদার। হায়দরাবাদ (যাদের পূর্ব সূচি অনুযায়ী যা প্রাপ‌্য ছিল)। মুম্বই। তাই শেষ পর্যন্ত কী হবে, কিছুই বলা যায় না। কিন্তু এটা অবশ‌্যই লেখা যায়, যদি ইডেনে শেষে ফাইনাল বা কোয়ালিফায়ার কিছুই না পায়, তা হলে অন্তিম লগ্নে অষ্টাদশ আইপিএলের গায়ে একটা শব্দ বসে যাবে।
অবিচার!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement