রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ইডেনে বর্তমানে পুরোদস্তুর আইপিএল-পক্ষ চলছে। কেকেআর খেলছে। বাকি টিমের মহড়া নিচ্ছে। কখনও জিতছে। কখনও হারছে। আজ থেকে তো আবার কেকেআরের মহাগুরুত্বপূর্ণ আইপিএল পর্ব শুরু হয়ে যাবে। শুভমান গিলদের বিরুদ্ধে, গুজরাট টাইটান্স ম্যাচ দিয়ে। কিন্তু সমান্তরালভাবে যে, আরও একটা যুদ্ধ নীরবে চলেছে, কে জানত!
যুদ্ধের নাম? দুই আইপিএল ভাষ্যকার বনাম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল, ওরফে সিএবি! দুই আইপিএল ভাষ্যকারের নাম সর্বাগ্রে লিখে ফেলা যাক। এঁরা হর্ষ ভোগলে এবং সাইমন ডুল। ইডেনে আরসিবি’র বিরুদ্ধে কেকেআরের হারের পর, কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানের ঘূর্ণির আবেদন এবং তা ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের প্রত্যাখ্যানের যাঁরা দু’জন রীতিমতো ফেটে পড়েছিলেন কিউরেটরের উপর! আসলে রাহানের ঘূর্ণির দাবি শুনে ইডেন কিউরেটর সুজন আরসিবি ম্যাচের পর বলে দিয়েছিলেন যে, ইডেন পিচ পুরোদস্তুর ঘূর্ণি করে দেওয়া সম্ভব নয়। অন্তত যত দিন তিনি দায়িত্ব আছেন, করা সম্ভব হবে না। যে মন্তব্য ভালো ভাবে নেননি হর্ষ-সাইমনরা।
এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটে সাইমন বলে দেন, ‘‘স্টেডিয়াম ফিজ না দেওয়ার পরেও যদি হোম গ্রাউন্ডের কিউরেটর ফ্র্যাঞ্চাইজির পছন্দ মতো পিচ না দিতে চান, তা হলে ঘরের মাঠ পালটে ফেলুক সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি! আর কিউরেটের কাজ খেলা নিয়ে মতামত দেওয়া নয়। তার জন্য তিনি টাকা পান না!’’ হর্ষও তখন একই সুরে বলেন, ‘‘যখন একটা টিম হোম গ্রাউন্ডে খেলছে, তখন ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ-সুবিধে তাদের পাওয়া উচিত। ওরা বোলারদের জন্য পিচ চাইছে, সেটা ওদের পাওয়া উচিত। ইডেন কিউরেটর কী বলেছেন, দেখেছি আমি। আমি কেকেআর শিবিরে থাকলে, ওঁর মন্তব্য শুনে অত্যন্ত হতাশ হতাম। আমি তো একশো কুড়ি রানের সারফেস চাইছি না। আমি এমন পিচ চাইছি, যেখানে বোলাররা ম্যাচ জেতাতে পারে। কিন্তু উনি যে বলেছেন, সরি আমার পক্ষে অমন পিচ তৈরি করা সম্ভব নয়, এটা মানা যায় না।’’
নিঃসন্দেহে দুই ধারাভাষ্যকারের মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি সিএবি। শোনা গেল, হর্ষদের মন্তব্যের পরপরই সিএবি’র তরফ থেকে ভারতীয় বোর্ডের কাছে একখানা চিঠি যায়। সেখানে নাকি লেখা হয় যে, হর্ষরা ইডেন কিউরেটর নিয়ে বলে আদতে ক্রিকেট সংস্থাকেই অপমান করেছেন। অতএব, তাঁদের যেন চলতি আইপিএলে ইডেনের কোনও ম্যাচ না দেওয়া হয়! অর্থাৎ, বাকি ধারাভাষ্যকাররা ইডেনে স্বাগত। তাঁরা আসুন। কমেন্ট্রি করুন। কিন্তু এঁরা দু’জন নয়।
পালটা পদক্ষেপ হিসেবে যা অত্যন্ত জোরালো। এটা ঘটনা যে, হর্ষ-সাইমন যা বলেছেন, পিচ নিয়ে বোর্ড নির্দেশিকা সম্পর্কে অবগত না হয়ে বলেছেন। আইপিএলের আগে পিচ নিয়ে যে নির্দেশিকা দেশের কিউরেটরদের কাছে গিয়েছিল, তাতে কোথাও লেখা ছিল না যে পিচে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। কোথাও লেখা ছিল না, পিচে টার্ন থাকতে হবে। বরং পিচে যাতে বেশি টার্ন না থাকে, তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ দিনও ইডেনে এক প্রভাবশালী সিএবি কর্তা রাগারাগি করতে-করতে বললেন, হর্ষরা যা করেছেন, তার কোনও প্রয়োজন ছিল না। ইডেন কিউরেটরকে নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁদের বলার অধিকার কে দিয়েছে? তাঁরা দু’জন কেউ কেকেআরের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। তা হলে?
যা শোনা গেল, বোর্ডের তরফ থেকে এখনও সিএবি’র চিঠির প্রত্যুত্তর আসেনি। কিন্তু হর্ষ বা সাইমন – দু’জনের একজনও আসেননি এখনও পর্যন্ত ইডেনে ধারাভাষ্য দিতে! খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সোমবারের গুজরাত টাইটান্স বনাম কেকেআর ম্যাচেও তাঁরা নাকি আসছেন না। অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত হর্ষ-সাইমন বনাম সিএবি-র স্কোরলাইন ১-১। বাকিটা দেখা যাক। আগামী মে মাসেই এ ‘ডুয়েলের’ রেজাল্ট পরিষ্কার হয়ে যাবে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.