কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৭৯/৬ (রাহানে ৪৮, রাসেল ৩৮, নুর আহমেদ ৩১/৪)
চেন্নাই সুপার কিংস: ১৮৩/৮ (ব্রেভিস ৫২, শিবম ৪৫, উর্বিল প্যাটেল ৩১, বরুণ ১৮/২)
চেন্নাই ২ উইকেটে জয়ী।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুখোমুখি দুই হেভিওয়েট। সিএসকে ও কেকেআর। লিগ টেবিল যাই বলুক, আইপিএলের চিরকালীন লড়াইয়ে এই দুই দলের সংঘাত সব সময়ই বাড়তি আকর্ষণের। বুধবাসরীয় বিকেল-সন্ধ্যার ক্রিকেট যেন সেটাই নতুন করে প্রমাণ করে দিল। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে এক পক্ষের জয় হল ঠিকই। কিন্তু জিততে পারত যে কোনও দলই।তবু শেষ ওভারে ধোনির সুবিশাল ছক্কায় জিতে গেল সিএসকে। সেই পুরনো চিত্রনাট্যই যেন বুধবারের জন্যও লিখে রেখেছিলেন ক্রিকেট দেবতা।
এদিন টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় নাইটরা। পাওয়ারপ্লেতে রান ভালোই উঠেছিল। ৬ ওভারে রহমানুল্লা গুরবাজের (১১) উইকেট খুইয়ে ৬৭। সৌজন্যে সুনীল নারায়ণ (২৬) ও অধিনায়ক রাহানের (৪৮) ঝোড়ো ব্যাটিং। কিন্তু শেষপর্যন্ত মন্থর পিচে স্পিনারদের খেলতেই সমস্যায় পড়তে হল। একমাত্র রাহানেই খেললেন বুক চিতিয়ে। কিন্তু কেন যে আচমকাই রিভার্স সুইপ করতে গেলেন তিনি? খেলার যা পরিস্থিতি ছিল শিট অ্যাঙ্করের ভূমিকাতেই তাঁকে দরকার ছিল। তিনি আউট হওয়ার সময় কেকেআর ১০৩ রানে ৪ উইকেট। যদিও রাসেল খেলা ঘোরাতে পারতেন। তিনি এদিনও ছিলেন পুরোদস্তুর মেজাজেই। কিন্তু ২১ বলে ৩৮ করে নুর আহমেদকে উইকেট দিলেন তিনি। আফগান স্পিনার এদিন সবশুদ্ধ ঝুলিতে পুরলেন চারটি উইকেট। মণীশ পাণ্ডে (অপরাজিত ৩৬) চেষ্টা করলেও কেকেআরের পক্ষে দুশো পেরনো সম্ভব ছিল না। ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান তুলল কলকাতা। বোঝাই যাচ্ছিল ম্যাচে ফিরতে হলে দরকার দুরন্ত বোলিং।
আজকের আইপিএলে ১৮০ রান তাড়া করা কি খুব কঠিন? স্লো উইকেটেও ন্যূনতম ‘ক্যালকুলেটেড’ রিস্ক নিয়েও বাজিমাত করা যায়। কিন্তু চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার শূন্য রানে আউট হয়ে দলের সামনে লক্ষ্যটাকে বোধহয় ২২০ করে দিলেন। কিন্তু অভিষেকে নিজেকে প্রমাণ করলেন উর্বিল প্যাটেল। তিনিই আস্কিং রেটকে বাড়তে দেননি। ১১ বলে ৩১। চারটে ছয়, একটা চার। গুজরাটের হয়ে রনজিতে অভিষেক ঘটার প্রায় বছর দেড়েক পরে আইপিএলে নামার সুযোগ পেলেন। এবং শুরুতেই নিজেকে প্রমাণ করে গেলেন। তবে ৩৭ রানের মাথায় তিনি আউট হওয়ার পরও সিএসকে-কে এলোমেলোই দেখাচ্ছিল। পাওয়ার প্লে চলতে চলতেই চলে গেল পাঁচ উইকেট। ১০ ওভারে রান উঠল ৯৩।
ক্রিকেট, বিশেষত টি২০ ক্রিকেটে খেলার মোড় ঘোরাতে এক ওভারই যথেষ্ট। সেকথা মনে করালেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। বৈভবের এক ওভারে নিলেন ৩০! তাঁর অর্ধশতরান চেন্নাইকে ম্যাচে ফেরায়। কিন্তু বরুণ চক্রবর্তীর বলে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে রিঙ্কুকে ক্যাচ দিলেন তিনি। খেলা ফের পেন্ডুলামের মতো দুলতে দুলতে কেকেআরের দিকে চলে গেল।
সতেরোতম ওভারে হর্ষিত রানাকে সোজা ব্যাটে গ্যালারিতে ফেলেন শিবম দুবে। সেই সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচটা চেন্নাই পকেটেই পুরে ফেলেছে। কিন্তু আঠেরো নম্বর ওভারে রাসেল মাত্র চার রান দিলেন। শেষ দুই ওভারে বাকি ছিল ১৮। স্লো উইকেটে রানটা তোলা সহজ হবে না বোঝাই যাচ্ছিল।
তবু উনিশতম ওভারের তিন নম্বর বলে শুভম দুবে যখন পেল্লাই ছক্কা মারলেন মনে হচ্ছিল খেলা শেষ। কিন্তু পরের বলেই কিনা তিনি আউট (৪৫)! দুই বল পরে নুর আহমেদও (২) ফিরলেন। শেষ ওভারে বাকি ছিল ৮ রান।ধোনির শটটা রকেটের মতো বলটাকে ছিটকে দিল মিড উইকেটে। এরপর আর খেলার বিশেষ কিছু ছিল না। রুদ্ধশ্বাস লড়াই দুই উইকেটে জিতে নিল সিএসকে।
তবে এদিনের সেরা মুহূর্ত কিন্তু বাইশ গজে নয়, লেখা হল গ্যালারিতে। সিএসকে-কেকেআর ভাগ ভুলে সব দর্শক যখন একসঙ্গে ‘বন্দেমাতরম’ গাইছিলেন।শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল এমন মহামিলনের সুর গাইতে পারে বলেই খেলার মাঠ হয়ে ওঠে আশ্চর্য পবিত্রতার। এখানেই জয় ক্রিকেটের। এখানেই জয় ক্রীড়াদুনিয়ার। ‘অপারেশন সিঁদুরে’র অব্যবহিত পরের ক্রিকেট লড়াইয়ের সময়ের এই দেশাত্মবোধ রয়ে গেল আইপিএলের ‘হল অফ ফেম’-এ। ধোনির এদিনের ছক্কার সঙ্গে মিলেমিশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.