Advertisement
Advertisement
KKR

ধোনি-প্রহেলিকার মধ্যে ইডেনে বাঁচার যুদ্ধে কেকেআর, ভেঙ্কটেশকে নিয়ে নাইট সংসারে অসন্তোষ

রাজস্থান রয়‍্যালসের বিরুদ্ধে কুঁচকিতে চোট পাওয়া রিঙ্কু সিং ফিট।

KKR facing CSK in hope to reach IPL playoffs

ফাইল ছবি।

Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:May 7, 2025 3:38 pm
  • Updated:May 7, 2025 3:38 pm  

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ‘স্যর, চেন্নাই এলে ইডেনে ঢুকিয়ে একটু দিতে পারবেন? বলে দিন না, আমি আপনার আত্মীয়!’ গলায় আইপিএল কার্ড দেখলে ক্রিকেট জনতার এ হেন উটকো প্রশ্নপত্তর ওঁত পেতে থাকে বটে। কিন্তু সচরাচর তা আসে টিকিট নিয়ে। ‘আত্মীয়’ বলে ইডেনে গলিয়ে দেওয়ার কিম্ভুতকিমাকার আবদার অ্যাদ্দিনের ক্রিকেট সাংবাদিক জীবনে কখনও শুনিনি। দেখিওনি। ঘাড় ঘুরিয়ে সর্বপ্রথম দেখলাম সে মহাশয়কে। গালে ঈষৎ চাপ দাড়ি। চোখে চশমা। ঝকঝকে, কেতাদুরস্ত চেহারা। দেখলে মনে হয়, আইটি প্রোফেশনাল কিংবা বহুজাতিকে কর্মরত। তা, বাঙালি যুবা মহেন্দ্র সিং ধোনিকে একটু ভালো করে দেখতে চান। মন দিয়ে পুজো করতে চান ক্রিকেট বিগ্রহের।

ক্লাবহাউস গেটের ঝাঁকের শরিক হয়ে এক পলক ধোনি-সাক্ষাতের কোনও তাঁর ইচ্ছে নেই। ‘সম্ভব নয়,’ বলে সরে যাওয়ার সময় খারাপও লাগল একটু। টিকিটের যা অগ্নিমূল্য (ন’শোর পর সোজা আড়াই হাজার), লোকে করবেও বা কী? সাধ থাকলেও বা সবার সাধ্য কোথায়? অগত্যা, সবেধন নীলমণি সিএসকে প্র্যাকটিস সেশন এবং অলৌকিক অবলম্বনে ফাঁক-ফোঁকর গলে ইডেনে গলে যাওয়ার দুঃসাধ্য বাসনা। সন্ধের দিকে ইডেন গেটে পীতাভ চেন্নাই টিম বাস এসে দাঁড়ানোর সময়ও দেখলাম, তীব্র হর্ষধ্বনি তুলে একটা ঝাঁক সে দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান হল। পাগলামির নমুনা দেখে চেন্নাইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া টিম ঝটিতি ‘ভিডিও’ সংগ্রহে মহাব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিন্তু যিনি স্বয়ং এঁদের আরাধ্য, ক্রিকেট-কুলদেবতা, তিনি কোথায়? সর্বাগ্রে যে তাঁকে প্রয়োজন, ইডেনে তাঁর দর্শন প্রয়োজন। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে প্রয়োজন। ইডেনে চেন্নাই-কেকেআর খেলার পূর্বে পরপর দু’টো দিন শেষ কবে সিএসকে ট্রেনিংয়ে ধোনি আসেননি, মনে করতে পারছি না। অন্তত স্মরণকালে তো ঘটেনি।

Advertisement

সাংবাদিক সম্মেলনে চেন্নাই সুপার কিংসের বোলিং কোচ এরিক সিমন্সকে জিজ্ঞাসা করা হল, চলছেটা কী? ধোনি আসছেন না কেন? কোনও চোট-টোট রয়েছে নাকি? মুচকি হেসে সিমন্স উত্তর দিয়ে গেলেন, “ধোনির কতটা প্রস্তুতি দরকার, সেটা ও-ই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবে। তবে এটুকু বলতে পারি, ইউ ক্যান এক্সপেক্ট হিম টু প্লে টুমরো। বুধবার নামছে, ধরে রাখতে পারেন।” অতএব যা বুঝলাম, ইহা মহেন্দ্র সিং ধোনি ও তাহার ভুবনবিখ্যাত প্রহেলিকা। পৃথিবী যা ভাববে, যা ধরে রাখবে, তিনি মহেন্দ্রবাবু সম্পূর্ণ তার বিপরীত পথ ধরে এগোবেন। ভাববেন। দেখা দেবেন, সময় হলে, স্ব-ইচ্ছে অনুসারে। কিন্তু মুশকিল হল, মহেন্দ্র সিং ধোনি দিন শেষে এতই মহাজাগতিক নাম, এতই সর্বগ্রাসী তাঁর প্রভাব যে, স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনির পক্ষেও সে ব্যাপ্তিকে হারানোর সাধ্যি নেই। তিনি সশরীরে না থাকলেও যে তাঁর ছায়া ঠিকই থেকে যায়। আশেপাশে। প্রেক্ষাপটে। তা তিনি চান বা না চান।

কেকেআরও বা বোঝার, মঙ্গলবার বুঝে গেল। কেকেআর বেশ বুঝে গেল, আজ বুধবার কী অশান্ত হরিদ্রাভ-সমুদ্রের মধ্যে তাদের পড়তে হবে। এ দিন ইডেন-সিংহদরজা দিয়ে অজিঙ্ক রাহানেরা প্রবেশ করার সময় পরিষ্কার দেখলাম, একদল ‘সিএসকে… সিএসকে’ ব্রহ্মনাদ সৃষ্টি করে টানা ‘দুয়ো’ দিয়ে গেলেন। এঁরা আর পাঁচটা দিন কেকেআরকেই সমর্থন করেন। কিন্তু বুধবারের মতো ‘সিএসকে অ্যান্ড ওনলি সিএসকে’। কেকেআর কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকেও জিজ্ঞাসা করা হল, আজকের যুদ্ধে ধোনি ও তাঁর আকাশছোঁয়া সমর্থক-সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্ভাব্য মহড়া নিয়ে। ‘পণ্ডিত’-মশাই মুচকি হেসে যা উত্তর দিলেন, তার নির্যাস হল, প্লেয়ারদের কাজ পারিপার্শ্বিকের শব্দবাদ্যি শোনা নয়। মন দিয়ে মাঠে নেমে ক্রিকেট খেলা। অবশ্য দেখতে গেলে, সে উপায়ও বিশেষ নেই কেকেআরের। প্রতিটা খেলার ক্রিকেটায় পূর্বরাগ প্রায় একই হয়ে গিয়েছে। আগামীতে যে ক’টা খেলা আছে, সব ফাইনাল, সমস্ত ফাইনাল। তাই ইডেন গ্যালারি দিন শেষে কার দিকে গেল, কাকে ভালোবাসল, ভেবে কী করবে কেকেআর?

ছুটকো খবরাখবরে আসা যাক। রাজস্থান রয়‍্যালসের বিরুদ্ধে কুঁচকিতে চোট পাওয়া রিঙ্কু সিং ফিট। চন্দ্রকান্তকে রিঙ্কু নিয়ে জিজ্ঞাসা করায়, তিনি আবার রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লেন। যেন রিঙ্কুর রাজস্থান ম্যাচ শেষে কুঁচকিতে চোট পাওয়া, তাঁর খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটা, কোনও এক সমান্তরাল অলীক পৃথিবীতে ঘটেছিল। যাক গে। তবে শুনলাম, রিঙ্কু নিয়ে স্বস্তি থাকলে, ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। রাজস্থানের বিরুদ্ধে খেলার সময় চোট লেগেছিল ভেঙ্কটেশের। তাই বুধবার তিনি নামবেন কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। শুধু তাই নয়, ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষের ক্রিকেটারের ফর্ম নিয়েও নাকি অসন্তুষ্ট নাইট ম্যানেজমেন্ট। আসলে অষ্টাদশ আইপিএলে এক-আধখানা ইনিংস বাদ দিলে কিছুই করতে পারেননি ভেঙ্কটেশ। অন্তত যে আস্থা দেখিয়ে, যে মূল্যে তাঁকে কেনা হয়েছে, তার প্রতিদান দিতে পারেননি। সিএসকে-র বিরুদ্ধে তিনি শেষ পর্যন্ত খেলবেন, নাকি ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মধ্যপ্রদেশ ব্যাটারকে ব্যবহার করা হবে, কিছুই এখনও ঠিক নেই। আনরিখ নখিয়াকে আবার এ দিন দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং-বোলিং করিয়ে রাখা হল। কেকেআর পেসারদের মধ্যে হর্ষিত রানা, নথিয়া, স্পেনসর জনসন এসেছিলেন। আসেননি শুধু বৈভব অরোরা। যিনি রাজস্থানের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে শেষ ওভারে গোটা কুড়ি রান দিয়ে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলেন নাইটদের।

কিন্তু নখিয়াকে খেলাতে গেলে, মইন আলিকেই বসাতে হয়। সিএসকে-র টিমে তিন-তিনজন বাঁ হাতি ব্যাটার রয়েছেন যে। ইডেনের মৃদু ঘূর্ণির পিচে সে সাহস নাইট ম্যানেজমেন্ট দেখাবে কি? জানিনা। জানা নেই। কী করা যাবে, যুক্তি বলে এক, কেকেআর ভাবে আর এক। গুরবাজকে খেলাতে গিয়ে কেন নখিয়াকে বসিয়ে রাখা হয়, তার সদুত্তর একমাত্র কেকেআরই দিতে পারবে। যোগ্য হওয়া সঙ্গেও ভারতীয় কিপার-ব্যাটার লভনীত সিসোদিয়াও কেন দিনের পর দিন বসে থাকেন, তার ব্যাখ্যাও একমাত্র দিতে পারবে তারাই। আসলে কালে-কালে কেকেআর এবং তার দল নির্বাচন যেন কোনও এক মহেন্দ্র সিং ধোনির মতোই হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। চলমান প্রহেলিকা!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement