ছবি: অমিত মৌলিক।
আলাপন সাহা: কেকেআর (KKR) ম্যাচের চবিবশ ঘণ্টা আগে ইডেন চত্বর যেরকম থাকে, রবিবারের বিকেল সেরকম ছিল না। স্টেডিয়ামে টিম ঢোকার সময় যে চিৎকার হয়, সেটা নেই। সুনীল নারিনদের প্র্যাকটিস দেখার লোক নেই। ক্লাবহাউসের আপার আর লোয়ার টিয়ারে কিছু লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ঠিকই, সেটা মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেকও হবে না। সিএবি কর্তারাও বুঝতে পারছেন না সোমবার ইডেন আদৌ ফুলহাউস হবে কি না!
একে তো সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। তার উপর কেকেআরের পারফরম্যান্সের গ্রাফ যেরকম নিম্নমুখী, সমর্থকরাও হয়তো আর আস্থা রাখতে পারছেন না। নাইট শিবিরের পরিস্থিতিও অনেকটা সেরকম। পাঞ্জাবের কাছে কুৎসিত হারের পর টিমের অন্দরমহলে আবহ বেশ গুমোট। প্র্যাকটিসে হাসি-খুশি পরিবেশ একেবারে উধাও। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। অধিনায়ক রাহানের উপরও চাপ বাড়ছে। রাহানে নিজেও খুব ভালো করে জানেন, ঘরের মাঠে গুজরাট টাইটান্সকে (GT) হারাতে না পারলে, চাপের মাত্রা অনেক বেড়ে যাবে। এরকম একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ব্যাটিং-আতঙ্ক থাকছে। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ১১২ রান তাড়া করতে পারেনি টিম। কেউ কেউ বলাবলি করছিলেন, পাঞ্জাবের থেকে গুজরাটের বোলিং অ্যাটাক অনেক ভালো। ইডেনে কেকেআর ব্যাটিংকে ভালোরকম চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হতে পারে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ (১৪) এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন। মহম্মদ সিরাজের এগারো উইকেট হয়ে গিয়েছে। খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য ভারতীয় টিম থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু আইপিএলে (IPL 2025) একদম চেনা ছন্দে সিরাজ। যা নিয়ে গুজরাটের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট বিক্রম সোলাঙ্কি বলে গেলেন, ”আশিস নেহরার কথা বলতে হবে। সিরাজের এরকম বোলিংয়ের পিছনে নেহরার অবদান রয়েছে। একইসঙ্গে সিরাজ যেরকম পরিশ্রম করেছে, সেটাও ভুললে চলবে না। নেটে প্রচুর খেটেছে। ওর পরিশ্রমকে সম্মান জানাতে হবে।”
এবার একটু ইডেন পিচে আসা যাক। প্রথম ম্যাচ থেকেই পিচ নিয়ে প্রচুর চর্চা চলছে। আশ্চর্যজনকভাবে গুজরাট ম্যাচের আগে কেকেআর শিবির থেকে নতুন করে আর পিচ নিয়ে কোনও অনুরোধ যায়নি। উইকেট যা, তাতে হালকা টার্ন পাবেন স্পিনাররা। পিচ একটু স্লো হবে। তবে পুরোপুরি টার্নার হচ্ছে না। আসলে কেকেআরও খুব ভালো করেই জানে, বেশি টার্নার করতে গেলে, বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই ব্যাটাররা ফর্মে নেই, তার উপর বিপক্ষ টিমে রশিদ খানের মতো একজন রয়েছেন। যদিও এই আইপিএলে রশিদ ছন্দে নেই। প্রচুর রান দিচ্ছেন। উইকেটও আসছে না। তবু সেই ক্রিকেটারের নাম রশিদ খান। কেকেআর তাই সামান্য ঝুঁকিও নিতে চাইছে না।
শনিবার ম্যাচ খেলে এদিন শহরে এসেছে গুজরাট। সন্ধের দিকে ট্রেনিং সেশন রাখা হয়েছিল। তবে বিশেষ কেউ আসেননি। রশিদ এলেন। তারপর নেটে প্রায় মিনিট চল্লিশ সময় ধরে একা বোলিং করে গেলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, ফর্মে ফিরতে ঠিক কতটা মরিয়া আফগান এই তারকা স্পিনার। এখানে বলে রাখা ভালো, ইডেনে রশিদ কিন্তু বেশ কয়েকবার ভুগিয়েছেন কেকেআরকে। এতক্ষণ বলা হয়নি একজনের কথা। গুজরাট অধিনায়ক শুভমান গিল। একটা সময় আইপিএলে ইডেনে ‘ঘর-বাড়ি’ ছিল শুভমানের। কেকেআর আর তাঁকে রাখেনি। কে জানে, শ্রেয়স আইয়ারের মতো শুভমানও এই ম্যাচ নিয়ে বাড়তি তেতে রয়েছেন কি না।
আর নাইট শিবির প্রবল দোটানায়। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে প্রথম একাদশে বেশ কিছু অদল-বদল হতে পারে। তবে সে’সব কী হবে কেকেআর এখনও পর্যন্ত ঠিক করে উঠতে পারছে না। এর সঙ্গে আবার জুড়েছে ব্যাট-বিড়ম্বনা। আইপিএলে এখন প্রতি ম্যাচেই ব্যাট পরীক্ষা হচ্ছে। আন্দ্রে রাসেলের বেশ কয়েকটা ব্যাটের ঘনত্ব বেশি। তাই তড়িঘড়ি করে ব্যাটারের ‘ডাক্তারের’ ডাক পড়ল। বলা হল, ব্যাটের ঘনত্ব কমাতে। রিঙ্কু সিং আবার রোহিত শর্মার থেকে একটা ব্যাট নিয়ে এসেছেন। সোমবার সেটা নিয়ে নামতে পারেন। সে’সব ঠিক আছে। রিঙ্কুরা কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝে গিয়েছেন, গুজরাট ম্যাচ তাঁদের কাছে অনেকটা জীবন-মৃত্যুর হতে চলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.