ফাইল ছবি
অর্পণ দাস: কত কি করার ছিল যে, কত কি পারিনি হতে! ‘২৬৯ সাইনিং অফ’ লেখার সময় বিরাট কোহলির মনে কি একবারও খেদ জন্মেছে? জানা নেই। কিন্তু দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে নিশ্চয়ই আছে। এখনও তো সাদা জার্সিতে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল বিরাট। চেজমাস্টারের তো টেস্টে এখনও অনেক কিছু ধাওয়া করা বাকি ছিল। সেসব তো ‘গাধা’ স্কোরবোর্ড বলবে। কোহলি বরাবরই চেয়েছেন নিজের কাছে সৎ থাকতে। টেস্ট থেকে অবসরের সময় সেটা ফের প্রমাণ করে দিলেন।
দিন কয়েক আগেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন রোহিত শর্মা। সেই ধাক্কা এখনও সামলানোর শক্তি ক্রিকেটভক্তরা জোগাড় করে উঠতে পারেনি। তার মধ্যেই হঠাৎ করে শোনা গেল, লাল বলের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন কোহলিও। আচমকাই বজ্রপাত! শোনা গেল, বোর্ড থেকে অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে কোহলিকে নিরস্ত করতে। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। অবশেষে এদিন সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে ‘সাইনিং অফ’ জানালেন বিরাট।
আর কোহলি যদি কোনও কিছু ঠিক করে বসে, তাহলে থামাবে কে? বিশ্বের তাবড় তাবড় বোলাররা সেটা ক্রিকেট মাঠে বারবার টের পেয়েছেন। যে দুর্দম আবেগকে সঙ্গে নিয়ে ১৪ বছর টেস্ট ক্রিকেটকে শাসন করেছেন, বিদায়কালে সেটাই যেন একমাত্র সত্যি হয়ে দেখা দিল। নেপথ্যের অঙ্ক কী আছে কেউ জানে না। কিন্তু শোনা গেল, অজি সফরেই কোহলি সতীর্থদের বলছিলেন, ‘আমি শেষ’। ওই সিরিজে পারথ টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছিলেন। তারপর অবশ্য সেভাবে আর রান আসেনি। সমালোচনা হয়েছে। কাঁটাছেড়া হয়েছে। নেটিজেনদের এক মহল ক্রমাগত দাবি করে এসেছে, বিরাট হাটাও। নিশ্চয়ই তারা আজ খুশি!
আজ তারা খুশি হলে বলতে হয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোহলিকে দেখে তাদের চোখ জ্বলেছে। ভুলে গেলে চলবে না, সেই টুর্নামেন্টে ২১৮ রান করেছিলেন কোহলি। রেওয়াজ মেনেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি ছিল। তারপর আইপিএল। বিজ্ঞাপন সংস্থা তো কার্যত বিভাজন করে দিয়েছে, জেন গোল্ড বনাম জেন বোল্ড। তা আইপিএলে জেন বোল্ডের ৩৬ বছর বয়সি জনৈক বিরাট কোহলির রান ৫০৫। অরেঞ্জ টুপির দৌড়ে চতুর্থ স্থানে। বারবার ফিরে আসে সেই চেনা মন্ত্রটা, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট।’ একটা-দুটো সিরিজে ব্যর্থ হলেই ছুড়ে ফেলে দাও, এই ট্রেন্ডে গা ভাসানো সহজ। বাস্তবের শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকদিন বিরাট কোহলি হয়ে ওঠা একমাত্র একজনেরই কাজ।
মনে করতে পারে, প্রায় ২০ বছর আগের একটা ঘটনার কথা। বাবার মৃত্যুর পরও এক ১৮ বছরের তরুণ রনজি ট্রফিতে মাঠে নেমে ৯০ রান করেছিলেন। আঠারো বছর বয়স কি দু:সহ… সেই তরুণ ভারতের হয়ে মাঠে নামেন আঠারো নম্বর জার্সি পরেই। টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই সরে গিয়েছেন। এবার বিদায় জানালেন টেস্টকে। হয়তো অনেক কিছু এখনও দেওয়ার ছিল। শচীনের মতো টেস্টে পঞ্চাশটা সেঞ্চুরি হত না। টেস্টে পনেরো হাজার রানও হত না। এমনকী দশ হাজার রানই করতে পারলেন না কোহলি। থেমে গেলেন প্রায় আটশো রান আগে। শচীন নিজে বলেছিলেন, তাঁর রেকর্ড ভাঙতে পারেন কোহলি। সেটা হল না।
ওই যে, বলেছিলেন ‘আমি শেষ’। ভিতর থেকে ডাক এসেছিল। বুঝতে পেরেছিলেন জোর করে আর টানা যাবে না। আমজনতা হয়তো রেকর্ড মনে রাখবে। কিন্তু প্রতিরাতে এই বলে শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন, নিজের কাছে সৎ ছিলাম। বহুদিন আগেও একটি সাক্ষাৎকারে কোহলি বলেছিলেন, যেদিন যতদিন মন চাইবে, ঠিক ততদিনই খেলবেন। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য সেই দিনটা চলেই এল। অনেক অপূর্ণতা নিয়ে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন কোহলি। কিন্তু জিতিয়ে দিয়ে গেলেন ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.