আলাপন সাহা: টেস্টে আটশো উইকেটের মালিক। ক্রিকেটবিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পিনার। অফস্পিনের জাদুকর। কিন্তু এ সব ক্রিকেটীয় বিশেষণ বাদ দিলেও মুথাইয়া মুরলীধরনের (Muttiah Muralitharan) সম্পূর্ণ আলাদা একটা পরিচয় আছে। তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগজয়ী। ভয়াল সুনামিতে ছারখার নিজ দেশের পোড়া রূপ যিনি দেখেছেন।লড়েছেন। লড়ে জিতেছেন।
কিন্তু সেই মুথাইয়া মুরলীধরনও কোথাও যেন বর্তমান বিশ্বের হাল দেখে ভেতরে ভেতরে নড়ে গিয়েছেন। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করায় ফোনে অস্ফুটে বলে দেন, “ভাল নেই, ভাল নেই। এই পরিস্থিতিতে আর কতটা ভাল থাকা যায়?” অথচ তাঁর দেশ শ্রীলঙ্কায় করোনা ভয়াবহতা তুলনায় অনেক কম। নিজেও নেমে পড়েছেন লড়তে। পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কা সরকারকে। কিন্তু তার পরেও কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না মুরলী। ক্রিকেট নিয়ে খোঁচাখুঁচি করলে ভাল রকম খিটখিট শুরু হয়ে যাচ্ছে।
“কীসের ক্রিকেট? যত দিন না করোনার প্রতিষেধক বেরোচ্ছে ক্রিকেট শুরু করার কোনও দরকার নেই। ভ্যাকসিন ছাড়া ক্রিকেটাররা খেলতে নেমে পড়লে ওরাও মন দিয়ে খেলতে পারবে কি? ভেতরে তো একটা ভয় কাজ করবে। তা ছাড়া ক্রিকেট এমন একটা খেলা যা দেখতে প্রচুর লোক আসে। সেখানে কী করে হবে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং,” ফোনে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ সাক্ষাৎকার চলতে চলতে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মুরলী। “মাঠে কেউ একজন আক্রান্ত হলে সবার মধ্যে সেটা ছড়িয়ে যাবে। পরিষ্কার বলছি, মানুষের জীবন আগে। আগে ওষুধ বেরোক। প্রতিষেধক বেরোক। তার পর ক্রিকেট, সিনেমা বাকি কিছু।”
কিন্তু এই যে জোরালো একটা প্রস্তাব চারপাশ থেকে উঠে আসছে যে, দর্শকশূন্য মাঠে খেলা করাও। তাতে সংক্রমণের ভয় থাকবে না। আবার খেলাটাও জীবনে ফিরবে। শোনামাত্র প্রস্তাব নাকচ করে দেন মুরলী। “ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা হলে সেটা ভিডিও গেমের মতো দাঁড়াবে। লোক নেই, জন নেই, নিজের মতো আপনি খেলে চলেছেন। অত্যন্ত বোরিং হবে জিনিসটা। আর একটা ম্যাচ মানে কিন্তু শুধুমাত্র ক্রিকেটাররা গিয়ে মাঠে খেলতে নেমে পড়ল, তা কিন্তু নয়। একটা ম্যাচের সঙ্গে ক্রিকেটাররা ছাড়াও অনেক লোকজন জড়িয়ে থাকে। ম্যাচের আগে প্র্যাকটিস থাকে। হোটেলে রাখতে হয় ক্রিকেটারদের। উন্মাদনার প্রসঙ্গ বাদই দিলাম। মাঠ ফাঁকা করে খেলালেও সেক্ষেত্রে ক্রিকেটাররা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে কি?”
করোনা প্রভাবে ভবিষ্যতে বলে লালা কিংবা ঘাম লাগানো বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তা নিয়েও তীব্র চর্চা চলছে। মুরলী পরিষ্কার বলছেন, এই ভাবনাটাও একেবারে যুক্তিগ্রাহ্য নয়। “এটা কখনও সম্ভব? ক্রিকেটের আচার আপনি পালটে ফেলতে পারেন? ইটস আ হ্যাবিট অব ক্রিকেট। বলছি তো, আগে প্রতিষেধক বেরোক। তার পর ক্রিকেট দেখা যাবে।”শোনা গেল, শ্রীলঙ্কায় পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু আদতে কার্ফু জারি করে দেওয়া হয়েছে। “পোশাকি ভাবেই শুধু লকডাউন অ্যানাউন্স হয়নি। কিন্তু আদতে লকডাউনই চলছে। কেউ কোথাও বেরোতে পারছে না। লরি আসছে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। কিনতে হলে আপনাকে সেখান থেকে কিনতে হবে। বেরাতে আপনি পারবেন না,” বলছিলেন মুরলী। অফস্পিন জাদুকর বললেন যে, লকডাউনের অবসরে সিনেমা দেখছেন। পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। এবং মাঝেসাঝে মাথা গরমও হচ্ছে!
উদাহরণ? যেমন অনিশ্চয়তার গর্ভে চলে যাওয়া আইপিএল (IPL) শ্রীলঙ্কায় করতে লঙ্কা বোর্ডের আগ্রহ। “এটা কোনও বাস্তবসম্মত কথা হল? সরকার তা হলে কারফিউ করছে কীসের জন্য? ঝুঁকিটা কেউ বুঝছে না?” ঝাঁঝিয়ে ওঠেন মুরলী। আসলে মুথাইয়া মুরলীধরন সর্বাগ্রে করোনা-নাশ ছাড়া কিছু বুঝছেনই না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.