ফাইল ছবি।
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: দিনকয়েক পূর্বে রোহিত গুরুনাথ শর্মা। দিনকয়েক পর বিরাট কোহলি। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে রীতিমতো জোড়া ইন্দ্রপতন ঘটে গিয়েছে ভারতীয় টেস্ট আকাশে। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি চলাকালীন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ধরলে, মহারথী পতনের সংখ্যা আবার দুই নয়, তিন! ভাবলে এখনও অবিশ্বাস্য লাগছে যে, আগামী মাসে ভারত পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড যাবে। যে সিরিজকে ক্রিকেট পৃথিবীর কঠিনতম ধরা হয়। কিন্তু এঁরা কেউ সেই টিমের সঙ্গে খেলতে যাবেন না! রোহিত, বিরাট, অশ্বিন- কেউ না!
রোহিতেরটা তবু আন্দাজ করা যায়। নিঃসন্দেহে যে ভাবে পূর্বতন ভারত অধিনায়কের ‘অপসারণ’ ঘটেছে টেস্ট টিম থেকে, তা কখনওই কাম্য নয়। কিন্তু তার পরেও লাল বলের ক্রিকেটে রোহিতের ফর্ম দুঃসহ যাচ্ছিল। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে পাঁচ ইনিংসে মুম্বইকর রান করেছেন মাত্র ৩১। তবে লিখতেই হবে, দেশকে, দেশের ক্রিকেটকে কম দেননি মুম্বইকর। অধিনায়ক হিসাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়েছেন। ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। ক্রিকেটমহলের মনে হচ্ছে, সেই রোহিত শর্মার টেস্ট থেকে মহাপ্রস্থানের পথ সম্মানজনক হওয়া উচিত ছিল। ঠিক যেমন হওয়া উচিত ছিল বিরাটের ক্ষেত্রে। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার কোহলি। দেশকে একা হাতে অসংখ্য ম্যাচ জিতিয়েছেন। অধিনায়ক হিসাবে দেশকে সর্বোচ্চ ম্যাচ জিতিয়েছেন। তাঁরই নেতৃত্বে ভারত প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জিতেছে। সেই দুর্ধর্ষ অধিনায়ক, সেই তুখড় ব্যাটার কি না, একটা রাজকীয় বিদায়ী স্যালুট পর্যন্ত পেলেন না!
বিরাট-রোহিত-অশ্বিন, এই ত্রয়ী যা সেবা করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের, অবিস্মরণীয়। আসলে দেখতে গেলে, রোহিতের তুলনায় কোহলির টেস্ট অবসর আরও বেশি আকস্মিক। অধিক আলোড়ন সৃষ্টিকারী। কারণ, আগামী জুনে রোহিতের বিলেত যাত্রা তবু কিছুটা সংশয় পরিবৃত ছিল। তাঁর টেস্ট ফর্মের কারণে। কিন্তু কোহলি নিয়ে বিন্দুমাত্র আশঙ্কার মেঘও দেখতে পাওয়া যায়নি। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে রান তিনিও পাননি। তবু তাঁর ইংল্যান্ড যাওয়া কখনওই প্রশ্নবোধক চিহ্নের মুখে পড়েনি। মাঝে তো দিল্লির হয়ে রনজিও খেললেন কোহলি। অর্থাৎ, মধ্যবর্তী সময়েই যা ঘটার ঘটেছে, যা এ মুহূর্তের সব চেয়ে বড় ‘মিসিং লিংক’। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ভারতীয় কোচ গৌতম গম্ভীরের কঠোর সমস্ত নীতিই তিন মহাতারকা ক্রিকেটারের টেস্ট ছাড়ার নেপথ্যে। ভারতীয় সিস্টেমে তথাকথিত তারকা-পুজো বন্ধ করে যিনি ‘ইয়ং ব্লাড’ আমদানি করতে চান। যার পর জ্বলন্ত একটা প্রশ্ন ধেয়ে আসছে, বিরাট-রোহিতের সামনে এর পর কী পড়ে থাকছে? গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পরই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। এবার টেস্ট থেকেও সরে গেলেন। সবেধন নীলমণি হিসাবে স্রেফ পড়ে থাকল ওয়ান ডে ক্রিকেট। যার চাঁদমারি স্রেফ এক-২০২৭ ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। প্রশ্ন হল, দক্ষিণ আফ্রিকায় দু’বছর পর কি ওয়ান ডে বিশ্বকাপ খেলতে কি যাবেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘রো-কো’?
আজ থেকে দু’বছর পর বিরাটের বয়স হবে আটত্রিশ। রোহিত শর্মার বয়স হবে চল্লিশ। ফিটনেস-শর্তকে যদি বাদও রাখা যায়, গম্ভীর যে ভাবে তারুণ্য নীতির দিকে ঝুঁকছেন, তার পর দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে তিনি আর বিরাট-রোহিতকে চাইবেন তো? সন্দেহ আছে, ঘোর সন্দেহ আছে। বিরাট-রোহিতের টেস্ট অবসর প্রমাণ করে দিয়ে গিয়েছে যে, এ মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটের অলিখিত ‘বস’ একজনই। তিনি, কোচ গৌতম গম্ভীর! ইংল্যান্ড কিংবা তার পরবর্তী সমস্ত টেস্ট সিরিজে তরুণ ভারত ভালো করলে, কোচের মতামত আরও অনেক বেশি অগ্রাধিকার পাবে বলে ক্রিকেটমহলের ধারণা। সুনীল মনোহর গাভাসকর যেমন এ দিন বলেই দিয়েছেন যে, তিনি অন্তত বিরাট-রোহিতকে আগামী ওয়ান ডে বিশ্বকাপের টিমে দেখছেন না। “পরিষ্কার বলছি, আমি ওদের দু’জনকে আগামী বিশ্বকাপে খেলতে দেখছি না। কিন্তু কী জানেন, কাল কী হবে, কেউ বলতে পারে না। বিরাট-রোহিত যদি অবিশ্বাস্য ফর্ম দেখাতে পারে, যদি সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করতে থাকে, তা হলে ঈশ্বরের পক্ষেও সম্ভব হবে না ওদের বাদ দেওয়া,” বলে দিয়েছেন গাভাসকর।
সব ঠিক আছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচকরা যদি ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ‘স্কিম অফ থিংস’-এ বিরাট-রোহিতকে না রাখেন, তা হলে আগামী ওয়ান ডে সিরিজগুলোতেও তাঁদের দেখা যাবে তো? তখন বলা হবে না তো যে, তোমরা ওয়ান ডে বিশ্বকাপের চিন্তা-ভাবনায় নেই আমাদের। তাই কী করবে দেখে নাও! উত্তর নেই, স্পষ্ট উত্তর নেই। দেখাই তো যাচ্ছে, মহাতারকা ক্রিকেটারদের ইচ্ছে-অনিচ্ছের দামই আর থাকছে না। বিরাট অনুষ্কাকে গিয়ে বৃন্দাবনে প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণজি মহারাজের আশ্রমে চলে গেলেন। টেস্ট অবসরের পরের দিন। মন দিয়ে শুনলেন, ঈশ্বরের নাম করলে কী ভাবে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁর ভক্তকুলের মন যে বড়ই অশান্ত। বিরাট-রোহিতরা যদি বিশ্বকাপ খেলেন, তবু টিমটিমে হলেও একটা আগ্রহ বেঁচেবর্তে থাকবে ক্রিকেট জনতার। কিন্তু টেস্টের মতো যদি অকস্মাৎ কিছু আগামীতে আসে ভারতবর্ষ আর বাঁচবে কী করে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.