গৌতম ভট্টাচার্য: ভারতীয় ক্রিকেটের একটা ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সময়ে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বছর সাতেক আগের কথা। এখন নিজেকে ক্রিকেটের মূল স্রোত থেকে একেবারে সরিয়ে নিয়েছেন। মুম্বই থেকে বাসস্থান পরিবর্তন করে চলে গিয়েছেন পুণের কাছে শৈলশহর লাভাসাতে। পঁয়ষট্টি ছুঁইছুঁই বয়েসে ক্রিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।কিন্তু বিরাট কোহলির (Virat Kohli) অধিনায়কত্ব থেকে অপসারণের খবরে বাকি ক্রিকেটভারতের মতো তিনি সন্দীপ পাটিলও আলোড়িত। তবে বিস্মিত নন।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বৃহস্পতিবার সকালে লাভাসার বাড়ি থেকে সন্দীপ ফোনে বললেন,”আমি নির্বাচকদের সিদ্ধান্তে এতটুকু আশ্চর্য হচ্ছি না।বিরাট যখন থেকে বলেছে আমি টি-টোয়েন্টিতে আর ক্যাপ্টেন্সি করতে চাইছি না, তখন থেকেই ও নির্বাচকদের ইজারা দিয়ে দিয়েছে ওর সম্পর্কে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তুমি বিশাল সুপারস্টার হতে পারো কিন্তু তুমি কী করে ঠিক করতে পারো এটা করবে? এটা করবে না।তুমি তো নিজের একক টিমে খেলছ না। গোটা দেশের বাকি দশজনের সঙ্গে খেলছো।”
নিজের নির্বাচক কমিটিতে থাকাকালীন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সন্দীপ বলেন,” সুপারস্টারদের নিয়ে এইসব সমস্যা খুব কমন। আমার সময়ে আমায় বাদ দিতে হয়েছে যুবরাজ আর শেহওয়াগকে। এতো বড় বড় প্লেয়ার।কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদের বিসিসিআই (BCCI) দায়িত্বে রেখেছিলো একটা পূর্ণাঙ্গ টিম তৈরির জন্য। কোনও বিশেষ কারও ভালোমন্দ দেখার জন্য নয়।” এরপর অবাক করে দিয়েই তিনি জানান, শচীন তেণ্ডুলকরকে বাদ দেওয়া ছিল তাঁর নির্বাচকপ্রধান হিসেবে নেওয়া সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত। সন্দীপ বলছিলেন, “ওয়ানডে টিমে ওকে এরপর রাখা যাবে না এই কথাটা কমিটির তরফে ওকে জানায় আমার সহকর্মী নির্বাচক সঞ্জয় জাগদালে। শচীন (Sachin Tendulkar) তখন তড়িঘড়ি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করে। এরপর আমাদের যখন মনে হলো টেস্ট ক্রিকেট টিমেও ওকে রাখা যাবে না, আমি নিজেই ওর সঙ্গে কথা বলি। ডেটটা এখনও আমার মনে আছে ১২ ডিসেম্বর ২০১২ নাগপুরে। কিন্তু ও আমার প্রস্তাব মেনে নেয়নি। বলেছিল আরও খেলে যেতে চায়। বাধ্য হয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের শেষ টেস্ট দিল্লিতে আমরা ওকে বাদ দিই। কপাল ভালো ওর। টেস্টের দিন সকালে গম্ভীরের জ্বর হয়।তাই পূজারাকে দিয়ে ওপেন করিয়ে শচীনকে শেষ মুহূর্তে টিমে ফেরানো হয়।”
সন্দীপ (Sandeep Patil) দাবি করলেন দিল্লি টেস্টে শচীনকে বাদ দেওয়ার নির্বাচকীয় সিদ্ধান্ত বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছিল। বোর্ড সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্ট, ক্যাপ্টেন ধোনি এবং কোচ ডানকান ফ্লেচারকে জানানো ছিল। ফ্লেচারকে বলা ছিল যে তিনি শচীনকে জানাবেন তোমায় এগারোতে রাখা গেলো না। আমরা অজিঙ্কে রাহানেকে দেখে নিতে চাই। কিন্তু শেষমুহূর্তে গম্ভীরের জ্বর আসায় শচীন রক্ষা পান। দিল্লির টেস্ট ছিল ২০১৩-র মার্চ মাসে।সিরিজের শেষ টেস্ট। নির্বাচকপ্রধানের সঙ্গে শচীনের কথোপকথনের তিন মাস বাদে। শচীন খুব কুঁকড়ে থাকা ব্যাটিংয়ে করেছিলেন ৩২ ও ৫ বলে ১। তারপর দীর্ঘদিন ঘরোয়া সিরিজ ছিল না। একই বছরের নভেম্বরে শচীন অবসর নিয়ে নেন। কে জানতো মহাতারকার অবসরের পেছনে এমন নির্বাচকদের গুঁতো খাওয়ার কাহিনী ছিল?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.