দুদলের দুই অধিনায়ক। পাঞ্জাবের ক্যাপ্টেন অমরজিৎ ও ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক আদিল অমল।
দুলাল দে: বাংলার ক্লাবের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামনে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এক বঙ্গসন্তান। শঙ্করলাল চক্রবর্তী। তাঁর দলের রেকর্ডটাও একবার দেখুন। উত্তরাঞ্চল পর্বে খেলার সময় টানা ১০টা ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৯টা ম্যাচ। ড্র মাত্র একটা। এখানেই শেষ নয়। টানা ১৪টা ম্যাচ অপরাজিত পাঞ্জাব। এহেন দলের বিরুদ্ধে শিরোপা দখলের লড়াইয়ে নামার আগে ইস্টবেঙ্গল কোচ বিনো জর্জের কপালে যে সামান্য হলেও চিন্তার রেখা বাড়বে বলাই বাহুল্য। ইস্টবেঙ্গল কোচের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ার আরও একটা কারণ, পাঞ্চাব এফসির সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের নাম।
অনূর্ধ-১৭ জাতীয় দলের অধিনায়ক অমরজিৎ সিং কিয়াম পাঞ্জাব এফসির মিডফিল্ডে এতটা জায়গা জুড়ে খেলছেন যে, মিডল থার্ডের নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছে না প্রতিপক্ষ। স্বাভাবিক কারণেই এদিন কার্লস কুয়াদ্রাতের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কোচ বিনো জর্জের সঙ্গে আলোচনা হয়, সেখানে বেশি শব্দ খরচ হয়েছে পাঞ্জাবের অমরজিৎ সিংকে নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই ফাইনালের আগে এদিন ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছিলেন, ”প্রতি ম্যাচের পরই কুয়াদ্রাতকে যেরকম রিপোর্ট পাঠানোর সেরকম পাঠিয়ে দিয়েছি। ফাইনালের আগেও পুরো পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, ফাইনালে কোনও সমস্যা হবে না।”
ফাইনালের আগে বিনো জর্জের এই আত্মবিশ্বাসের কারণ, শুরু থেকে এত সমস্যা নিয়ে এগোতে হয়েছে যে এখন আর কোনও সমস্যাকেই সমস্যা মনে করছেন না বিনো। সেমিফাইনালে টাইব্রেকার আটকে যে গোলকিপার ইস্টবেঙ্গলকে ফাইনালে ওঠার পথ তৈরি করে দেন, সেই গোলকিপার রণিত সরকারের মোহনবাগান মোহনবাগান ম্যাচটা ভাবুন। পাঁচ গোল খাওয়ার পর যেখানে ভেঙে পড়ার কথা, সেখানে বিনো, কুয়াদ্রাতরা যেভাবে মানসিক জোর বাড়িয়ে পাশে না দাঁড়ালে কী হত কে জানে। রণিত যে ফাইনালেও ইস্টবেঙ্গল দলের জন্য বিশাল ভরসা এই তথ্য না দিলেও চলে।
রিলায়েন্স কর্পোরেট পার্কের ভিতরেই পরপর তিনটে মাঠ। একটা ক্রিকেট। দুটো ফুটবলের। যার মধ্যে একটি কৃত্রিম ঘাসের। এই কম্পাউন্ডের ভিতরেই ক্রিকেট মাঠে মাঝে মধ্যে প্র্যাকটিস করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। মাঠের একপাশে ‘জিও’র প্রধান অফিস। কর্পোরেট পার্কের এক পাশে থাকে মুকেশ আম্বানীর হেলি কপ্টার। অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়ি যাতায়াতের জন্য যেটা ব্যবহার করেন তিনি।
রিলায়েন্সের এই কর্পোরেট পার্কে প্রবেশের আগে হাজার কড়াকড়ি। বাইরের লোকের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তবে সংগঠকদের কাছে খবর এসেছে, কলকাতা থেকে বেশি কিছু ইস্টবেঙ্গল ফ্যানস আসছেন ফাইনালে নিজেদের জুনিয়র ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে। তাই ফাইনালের দিন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরদের জন্যই কর্পোরেট পার্কের প্রবেশে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। অমরজিৎ থাকার জন্য পাঞ্জাব যেরকম শক্তিশালী।
ইস্টবেঙ্গলের এই জুনিয়র ডেভলপমেন্ট দলেও রয়েছে এমন তিনজন ফুটবলার, যাঁরা এই মরশুমে ইতিমধ্যেই কুয়াদ্রাতের কোচিংয়ে আইএসএল খেলে ফেলেছেন। সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, পিভি বিষ্ণু এবং আমন সিংকে ইকিমধ্যেই আইএসএলে সুযোগ দিয়েছেন কুয়াদ্রাত। ফলে লাল-হলুদ ব্রিগেডও সমান শক্তিশালী। ফাইনালের আগে কোচ বিনু জর্জ বলছিলেন, ”আমরা ভালভাবে পাঞ্জাবের খেলা দেখেছি। ওরা কী ট্যাকটিক্সে খেলা সেটা আমাদের কাছে পরিস্কার। কিন্তু বিশ্বাস করুন, পাঞ্জাবের খেলার ছকের থেকেও আমরা নিজেদের খেলার ট্যাকটিক্স নিয়ে বেশি ভাবছি। আমাদর দর্শন হল, প্রতিটা ম্যাচে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। আর আগের ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই ধারা ধরে রাখলে এই দলের ফুটবলাররা একদিন সিনিয়র দলের জার্সি পরার সুযোগ পাবে। এমনকী ভারতীয় দলের জার্সিও পরতে পারবে। ফুটবলারদের সামনে আমরা সব সময় এই লক্ষ্যই তুলে ধরি।”
উল্টোদিকে গতবারের চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে পাঞ্জাব। কিন্তু কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী চিন্তায় রয়েছেন দলের গোলমিস নিয়ে। বিশেষ করে সেমিফাইনালে যে ভাবে গোল মিস হয়েছে। বলছিলেন, ‘’ফুটবলারদের পই পই করে বলেছি, ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল মিস করলে হবে না। ট্রফিটা পাঞ্জাবে নিয়ে ফিরতেই হবে।’’
এদিকে, এদিন তৃতীয় স্থানাধিকারী ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি এবং মুথুট এফসির মধ্যে খেলা নির্দিষ্ট সময়ে ২-২ গোলে অমীমাংসিতভাবে শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে দেয় মুথুট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.