দুলাল দে, দোহা: রাত পোহালেই বেদুইনের দেশে শুরু ফুটবলের মহাযজ্ঞ। কিন্তু ইতিমধ্যেই নানা বিতর্কে জর্জরিত কাতার। তবে বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রীতিমতো বোমা ফাটালেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ানি ইনফান্টিনো (Gianni Infantino)। কাতারের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমী দেশগুলির বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন তিনি। ইউরোপের দেশগুলিকে ‘মেকি’, ‘ভণ্ড’ বলেও ভর্ৎসনা করতে ছাড়েননি তিনি।
বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) আয়োজক দেশ হিসেবে বারবারই বিতর্কের মুখে পড়ছে কাতার। পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা থেকে পোশাকে নিয়ন্ত্রণ বিধি-সহ নানা সমালোচনায় জর্জরিত কাতার। সে দেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলি। আগুনে ঘৃতাহুতি হয় যখন বিয়ার বিক্রির উপর জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। ফিফার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শেপ ব্লাটারও কাতারে বিশ্বকাপ হওয়া নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন। তবে সমস্ত বিতর্ক সত্ত্বেও আয়োজকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন ইনফান্টিনো। কাতারের সমালোচনা করার জন্য ইউরোপ এবং পশ্চিমী দেশগুলিকেই কাঠগড়ায় তুলে দিলেন তিনি।
ফিফা প্রেসিডেন্টের কথায়, “গোটা বিশ্বে ইউরোপীয়রা গত তিন হাজার বছর ধরে যা করে এসেছে, তার জন্য আমাদের আগামী তিন হাজার বছর ক্ষমা চাইতে হবে। তারপরই নৈতিকতার জ্ঞান দেওয়া সম্ভব।” এরপরই প্রশ্ন তোলেন, যে সব দেশ কাতার বিশ্বকাপ থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ উপার্জন করবে, তারা এখানকার পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকারের জন্য কী করেছে? কিছুই করেনি। কিন্তু ফিফা করেছে। অথচ সেই দেশগুলিই সমালোচনা করে চলেছে। টাকা নিয়ে সমর্থক আনছে কাতার। এহেন অভিযোগ নিয়ে ফিফা প্রেসিডেন্টের দাবি, “আমরা বিশ্বকাপ আয়োজন করছি, বিশ্বযুদ্ধ নয়। এই শহর খুব সুন্দর। সবাই ভালবেসেই খেলা দেখতে আসছে।”
বিয়ার বিক্রি বন্ধ হওয়া নিয়ে ইনফান্টিনোর পালটা দাবি, “স্টেডিয়ামে বিয়ার বিক্রি করা যাবে কি না, তা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করেছি। তবে এটুকুই বলতে চাই, ৩ ঘণ্টা বিয়ার না খেলেও বেঁচে থাকবেন। এই কারণেই হয়তো ফ্রান্স, স্পেন, স্কটল্যান্ডে স্টেডিয়ামে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। হয়তো ওরা আমাদের থেকে বেশি বুদ্ধিমান।”
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ইনফান্টিনো আরও বলেন, “আজ নিজেকে কাতারি মনে হচ্ছে। আরবের মনে হচ্ছে। আফ্রিকান মনে হচ্ছে। সমকামী মনে হচ্ছে। অক্ষম মনে হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিক মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি কাতারি নই, আরবেরও নই। আফ্রিকান কিংবা সমকামীও নই। অক্ষম বা পরিযায়ী শ্রমিকও নই। আসলে বিদেশিদের চোখে বৈষম্য দেখতে কেমন লাগে আমি বুঝি। কারণ লাল চুলের জন্য আমাকেও ছোটবেলায় স্কুলে ঠাট্টা করা হত।” অর্থাৎ হাজার সমালোচনা সত্ত্বেও কাতারের জয়জয়কারই ইনফান্টিনোর মুখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.